বিশ্বনবীর আর্বিভাবের ১৪শত বছর অতিবাহিত হলেও আজ অবধি তার প্রতীক্ষায় রয়েছে আহলে কিতাবরা । সহস্র সহস্রাব্দব্যাপী পরিবর্তন ও ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ঘূর্ণাবর্তে পড়ে সত্য উপলব্ধির এবং অনুধাবনের সব সূত্র তারা হারিয়ে ফেলেছে । কিন্তু আজ যুগের দাবি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে । প্রত্যাশিত অবতার সর্বশেষ নবী ও তার দ্বীনকে বোঝানোর জন্য আহলে কিতাবদের গ্রন্হসমূহের চাপা-পড়া সূত্র সমূহ উদঘাটন করা জরুরী হয়ে পড়েছে ।
আল-কুরআনে দেখা যায়, শুধু আহলে কিতাবদেরকেই নয় মুসলমানদেরকেও বার বার পূর্ববর্তী কিতাবগুলির উপর ঈমান আনতে হুকুম দেওয়া হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে--
"বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং সেই কিতাবের উপর যা আমাদের নিকটে নাযিল হয়েছে । আর নাযিল হয়েছে ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুব নবীগনের উপর এবং তদীয় বংশধরদের প্রতি। আর সেই সকল কিতাবের উপরও ঈমান এনেছি যা মূসা এবং ঈসা এর নাযিল হয়েছিল এবং ঐসব কিতাবের উপর ও ঈমান এনেছি যা অন্যান্য নবীগনের উপর তাদের রব এর কাছ থেকে নাযিল হয়েছিলো । আমরা কোন পার্থক্য করিনা তাদের কারও মধ্যে । আমরা তার (আল্লাহর) কাছে আত্নসর্মপনকারী ।" (সূরা - বাকারা ১৩৬) ।
হিন্দু ধর্মীয় মতবাদ আজ পৃথিবীতে এমন এক মতবাদ হিসেবে প্রচলিত আছে, যার মূল শিক্ষা যে কি তা অজানার অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে । এ মতবাদের মূল শিক্ষা বা অঙ্গ শিক্ষা থেকে কিছুই সুষ্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়না । কেউ জানেনা , এ ধর্ম মতের শুরু কখন হয়েছে এবং কে ছিলেন তার পরিচালক ? বর্তমানে আমাদের নিকট হিন্দু ধর্মীয় মতবাদের যেসব সাহিত্য রয়েছে, গভীর অধ্যয়নকালে সেগুলির মধ্যে এমন কোন সুবিন্যস্ত সামন্জস্য খুজে পাইনা যাকে আমরা হিন্দুইজম নামে আখ্যা দিতে পারি ।
প্রচলিত হিন্দু ধর্মের মধ্যে ভিন্নতা ও পরিবর্তনশীল ধর্মীয় প্রবণতার দিকে তাকিয়ে ডাঃ রাধাকৃষ্ঞ এ ধর্মের মেজাজ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, " এ ধর্মের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বা সংমিশ্রণ প্রবণতা এত বেশী যে, এ ধর্ম জীবন-যাপন করার জন্য সমন্বিত কোন বাস্তব ব্যবস্হা দেয়না । এ ধর্ম শুধু আভিজাত্যের দম্ভভরা এক ইজারাদারী মনোভাব সৃষ্টি করে এবং সবাইকে তার পদানত করার চেষ্টা করে ।"
প্রত্যেক নবীর দ্বীন ছিল ইসলাম কিন্তু শরীয়ত বা আইন কানুন ছিল ভিন্ন । দ্বীন হচ্ছে বুনিয়াদী সকল বিশ্বাসের সমষ্টি আর শরীয়ত হলো দুনিয়ার জীবনে দ্বীনের আমল করার নিয়ম । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দ্বীনের চেতনা লুপ্তপ্রায় যুগে অর্থাৎ মক্কী জিন্দেগীর প্রাথমিক অবস্হায় মক্কার মুশরিকদেরকে এই কথা বলে দাওয়াত দানের সূচনা করেছিলেন--
" আমি তোমদের নিকট কোন নতুন দ্বীন নিয়ে আসিনি, বরং ইবরাহীম (আঃ) এর সেই আসল দ্বীন তোমাদের সামনে পেশ করছি, যার অনুসারী হওয়ার দাবী তোমরা করে থাক ।'
আহলে কিতাবদের নিকট দ্বীন ইসলামই পৌছেছিল কিন্তু পরবর্তীতে তারা কিতাবকে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বদলে ফেলেছিলো । এ কথা টি অন্যভাবে বলতে গিয়ে মহাগ্রন্হ আল-কুরআন বলছে-
"সকল মানুষ একই জাতিসত্তার অন্তভুক্ত ছিল । অতঃপর আল্লাহ তা'আলা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে । আর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন । বস্তুত কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেত করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারষ্পরিক জেদবশত তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিলো ! অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হিদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে যে ব্যাপারে তারা সতভেদে লিপ্ত হয়েছিলো । আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ বাৎলে দেন" (সূরা-বাকারা : ২১৩)
চলবে...........
তথ্য সূত্র---জগদগুরু মুহাম্মদ (সাঃ) , শায়খুল উবুদিয়া ইমাম সাইয়েদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুহু আল-হোসাইনী । রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স ।
---মারেফূল কুরআন ।