somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাঙা আয়না অথবা আয়না ভাঙার গল্প

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাঙা আয়না অথবা আয়না ভাঙার গল্প

"দেখা হয় তবু, এমনই কপাল!
মনের আড়াল যায় না।
দু'জনার মাঝে কাচের দেয়াল-
ব্যবধান এক আয়না"


বেশ ছোট্টটি থাকতে, মনের চোখ-কান ঠিকমতো ফুটে ওঠার আগেই এই গীতিকাব্যের দেখা পেয়েছিল রাজন, একটা টিভি নাটকে। মানে না বুঝলেও, মনে থেকে গিয়েছিল সেই শব্দ-দৃশ্য আর সময়ের ঘ্রাণ, এক বিরল গভীর ভালোলাগার আবেশসমেত। তবে, এই দেখাটা যে কেন হ'তেই হয়- রাজন তা জানে না! জানেনি আজ পর্যন্ত, তিরিশ বছরের বুড়ো ধূসর চোখে যেদিন যখন হয়েই সারলো নিজের সেই দেখা। যেদিকে আর একটিবারও ঘাড় ঘুরানোর চেয়ে বরং ঘাড় ভেঙে বিকলাঙ্গ হওয়া কিংবা ম'রে যাওয়া ভালো ছিল, সেদিকেও তাকাতে হয় হঠাৎ কোনো বাঁকে। তাকিয়ে ফেলতে হয়। তাকিয়ে ফেলে পরে বুঝতে হয়, যে তাকানো হয়ে গ্যালো। দেখা হ'লো, দেখা হয়েই গ্যালো!

দৃশ্যের কাছে যেতে হয় না এই দেখার জন্য। দৃশ্য বস্তু কিংবা বিষয়টিই এরকম ক্ষেত্রে উপযাচকের নির্মম উৎসাহ নিয়ে একেবারে সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘাড় ধ'রে বলে- "অ্যাই ব্যাটা, এই যে নে, দ্যাখ্ আমাকে, দ্যাখ্, তাকা!" এমন একটা হঠাৎ আয়না এক জীবনের কয়টা মোড়ে মোড়ে নিজে থেকে সামনে এসে দাঁড়ায় উচক্কা এই দায়িত্ব নিয়ে! কয়বার এসে এসে নির্লজ্জের আস্ফালনে হাঁকে, হাঁকবে- "তাকা"!

আয়োজন ক'রে তাকাতেও হয় না, ঠিক যেমন চোখের পলকটি পড়তে না পড়তেই মনে একটা হার্ডব্রেক ক'ষে মুখসমেত ঘাড়টাকে একটু ঘুরিয়ে নিতেও আর কোনো ইশারাই বা একটু সময়ও লাগে না। এই ঊন-এক মুহূর্ত সময়ের মধ্যেই অ্যাতো কিছু কেন চোখে পড়ে! পৃথিবীতে অ্যাতো মানুষ, অ্যাতো দেখার বস্তু থাকতে কেন চোখের সামনে আবার চোরা চাউনি নিয়ে আসবে সেই চোখজোড়া, যা একদিন আচমকা ফিরে গিয়েছিল বহুদিনের আকুল গহন চেনাজানার চোখে মিথ্যের একটা আচানক মুখোশ পরিয়ে দিয়ে! বোকা বোবা লজ্জা গ্লানির এই ফ্ল্যাশব্যাক কোন্ মগড়া মরদ চেয়েছে তার নিজ জীবনে কখনও! এইসব নিস্ফল হাতড়াহাতড়ি প্রশ্নের উত্তর জানা-না-জানা এমনকি থাকা-না-থাকা নির্বিশেষে অথচ রাজনের দেখা হয়, দেখে ফ্যালা হয়, দেখে ফেলতে হয় নাহিনকে।

সময়ও এমন সময় পলক পড়ারও অপেক্ষাটি না ক'রে, পোড়খাওয়া ঘোড়ার মতো ছুট দেয় পিছনে, আলোর চেয়েও আরো যেন বাড়তি গতিতে! তাই ফেলে আসা হারিয়ে ফেলা অতীত সত্যগুলোর সাথে সাথে মধ্যে মধ্যে নিজেকেও দেখা যায় দেখতে হয় ওইখানগুলোয়, ওইক্ষণগুলোয়- বর্তমানের চেয়েও নিদারুণ মূর্তিমান!

দুই বছরের প্রেমটা যখন উবে গিয়েছিল দুই মিনিটের ধূলোধোঁয়ার সঙ্গে, তার পরেও চ'লে গ্যাছে নিদেন আরো চারটি বছর। না ব'লে চ'লে চ'লে যাওয়া এক একটি বছর মাস আর দিনের বাঁকে কতোকিছু খ'সে পড়লো মন-মগজের দেয়াল থেকে! কতো রূপের নতুন খোলস মুখে উঠলো চুপে চুপে! কতো শত ফেনিল ধারায় দুঃখ-সুখের ভানভনিতার সাগর বইলো মুখ-মুখোশের সি-স'র নিচে!

পায়ের নিচের পৃথিবীসুদ্ধ দু'জোড়া চোখ চমকে দেয়া কাঁপিয়ে তোলা এই না-হ'লেই-ভালো-ছিল দেখাটা যখন সামনে এসে প'ড়েই গ্যালো, সাক্ষাতের সেই পলকেই অনিচ্ছুক ওই সময়ভ্রমণ সেরে এসে ফিরতে ফিরতে, আরোপিত এক ফুট দূরত্ব মাঝে রেখে ছোঁয়া এড়িয়ে বাতাস বাঁচিয়ে পরষ্পরকে কাটিয়ে যখন রাজন-নাহিন উল্টো দু'টো ভিন্ন দিকে হাঁটতেই থাকে আবার, ছাড়িয়েই যেতে থাকে চার বছর পর আরো একবার, তখন আবার বর্তমানের এই এক মিনিট আগের চেয়েই মুহূর্মুহূ আরো বেশি মিথ্যে হ'তে থাকে ক্ষান্ত অতীতের ওই গোটা মন্তাজ। সত্য হয়ে হয়তো বা বাকি জীবনটাতেই ছাপ মেরে থাকবে মনে এই বিষম দেখার ছবিটিই।

সত্য থাকে নাহিনের সুদূর মুখ, পরশরীর, সেই শরীরে সংসার আর জন্মনিয়ন্ত্রণের সূক্ষ্ম ভার। সত্য থাকে তার জীবনগতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে পাশে হাঁটতে থাকা অন্য একটি সহবাসী স্থূল শরীর। আর কোনো ছবি যেন ছিল না কোথাও, কোনো কস্মিনেই!

[কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানবেন নুশেরা'পু। লেখা হয়ে ওঠার পিছনে আপনার জ্বালানিটাই (ইন্ধন অর্থেই :D) বড় কারণ।]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×