somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাস)

২৪ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার ১৫ তম পর্ব পরিবেশিত হল।)

(১৫ তম পর্ব)



বিছানা যেন ধু ধু মরভুমি। আনন্দের সবুজ খেলায় ফিরে যাবার রাস্তা হারিয়ে ঝিনু এখানে এসেছে । এখন শুধু হামাগুড়ি হাবুডুবু আর অস্বস্তি। চোখ মুখ বদ্ধ করে শুয়ে শুয়ে ঘুমের পৃথিবী ঘুরে এস। অথচ সেখানেও ভয়ের স্বপ্ন বাসা বেধেছে। তার চেয়ে মনে মনে সেই হল্লোড় দিনগুাের আজব মজার গল্পগুলো আউড়ে যাওয়া তাই ভাল । আব্বু যাওয়া তাই ভাল আব্বু সবসময় গম্ভীর গম্ভীর হয়ে থাকলে কি হবে এমনসব বোমা ফাটানো হাসির গল্প করেন যে হাসতে হাসতে পেটের চামড়া কুঁচকে উঠে। চোখে পানি এসে যায় তবুও কি হাসি আর থামে। আম্মুর দাদা সাহেবকে নিয়ে আব্বুর গল্পগুলো কি নেহাত গল্প না সত্যি ঝিনু ভেবেই পায় না। আম্মুর দাদা সাহেবের এক কাজের ছেলে ছিল। তার নাম ছিলো নপা। ওকে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছেন একবার। এবং ধরলেন ইয়াবড় এক বোয়াল কাছ। ]
-‘ইয়া বড় বুঝলাম কিন্তু কতবড় বোয়াল।’ ঝিনু এ প্রশ্ন করতেই আব্বু বলেন,
- ‘আরে বাপু বাকীটুকু শোনই না তাহলে নিজেই বুঝবে। তা যাক সেই মাছ আটকে রেখে ভাবলেন উনি ভাবলেন একটু তামাকু খাওয়া যাক। অমনি হাঁক ছাড়লেন এই নপা নপারে । আরে নপার যে কোন পাত্তাই নেই। গেল কোথায় বদমাশটা । না ওইত মিন মিন করে নপার আওয়াজ আসছে। জি হুজুর এইত আমি। আওয়াজ আসে কোথা থেকে। কোথায় সে বদমাস ? হুজুর আমি বোয়াল মাছের পেটে। মাছের পেটে নপা গেল কি করে? হ্যাঁ পানির কাছে নপা যেই না গিয়েছে আর অমনি তাকে আটকে রাখা বোয়াল মাছ তাকে গিলছে। তারপর আম্মুর দাদা করলেন কি গ্রামের লোকদের ডেকে জড়ো করলেন। তারা সব দাও-বটি- কুড়াল নিয়ে এসে জড়ো হলো। মাছের পেট কেটে তবেই না নপাকে বের করল। আরেকবার আম্মুর দাদা হাট থেকে খাটি দুধ কিনে আনলেন। বাড়ি ফিরে তিনি বিবিকে বললেন একটু দুধের সর ধরত। সেকি পুরুষ্ট সর। মেহমানদের পাতে দিলেন তারা টেনে ছিঁড়তে পারলেন না। অন্দরে পাঠিয়ে দিলেন। বিবি বাচ্চারাও ছিঁড়তে পারল না। চাকর বাকরদের দিলেন তারা কি ছাই ছিড়তে পারে। শেষে রেগে-মেগে দুধের সে সব কে বারান্দায় ছুড়ে ফেলা হল। দুটো কুকুর হুমড়ি খেয়ে পড়ে টেনে টুনে ছিড়তে না পেরে হয়রান হয়ে ফিরে গেল। পরে কুড়াল দিয়ে সে সর কেটে কেটে কুকুর বিড়ালকে খেতে দেয়া হলো। এই হল আম্মুর দাদার গালগপ্প। আসলে ঝিনুর আম্মুর দাদা সাহেব মস্ত পন্ডিত ছিলেন। লোকদেরকে খুশি রাখার জ্ন্যে নাকি এমন ধারা গল্প বানিয়ে বলতেন। ভাইমনি একথাটা বলেছেন। কিন্ত কিন্তু লোকের মুখে মুখে ছড়াতে ছড়াতে এখন দাড়িয়ে গেছে উনিই এসব কানড-কারখানা সত্যি সত্যিই করছেন। আববরু গম্ভীর চেহারার ভেতর এমন অনেক ছাদ কাটানো হাসির গল্প জমে আছে। কিন্তু এখন আর তা বেরোবে না। কারণ আঙ্গুর চাচী বলেছেন দেশের অবস্থা খারাপ হলে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ হলে কেউ কি আর গল্প বলতে পারে। আজকের দিনটাও গত কয়েকদিনের মতো জং ধরা।

ঝিনুরা আজ ভোরে যখন নাস্তা করছে সে সময় মীর্জা চাচা এসে হাজির হন। হায় চাচাকে চেনাই যায় না। ফেসে যাওয়া বেলুনের মত চুপসে ঝুলে পড়ছে যেনো। বিড় বিড় করে কথা বলছেন। সবচেয়ে অবাককরা ব্যাপার হল যে পানের সেই বিশার ডিব্বাটা নেই। তিনি আর মিনিটে মিনিটে পান খাচ্ছেন না। ঝিনু আজ স্কুলে যায় নি। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করছে না বলার পর আম্মু আর ওকে কিছু বলেন নি। বরং মনে হল ও স্কুলে যেতে না চাওয়ায় আম্মু খুশিই হয়েছেন। তেপান্তরের মস্ত মাঠের মতো ছড়িয়ে থাকা সময় যেন আর ফুরায় না। কোনও এক অদেখা ডাইনির মায়ায় মাঠ শুধু বেড়েই চলে। আপা, মেজ আপা, ভাইয়া, ভাইমনি আব্বু কেউ নেই। বাসা খালি। ছমছমে। রান্না ঘরে আম্মু কাজ করছে। তার টুংটাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঝিনুর মনে হচ্ছে সে যেন পংখিরাজের ক্লান্ত হয়ে যাওয়া পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ঘরের কোনায় মাকড়শা জাল বুনছে। ও দৃশ্য দেখে ওর কান্না পেল। তাড়াতাড়ি পুতুলের বাক্স টেনে নিয়ে ও নাড়াচাড়া করতে বসে। কতদিন পুতুল নিয়ে বসে না। নয় মাস তো হবেই। তারপর হিসেব করে দেখে মাত্তর তিন দিন। তিন দিনকে নয় মাস ভাবছে। ঝিনুর মনে হলো ও অংকে শুন্য পাবে। না পতুল খেলা আর ভাল লাগেন। একসময় সবকিছু দুরে ঠেলে দিয়ে ও উঠে পড়ে। ঝিনু রুকার বাসার দিকে রওনা হয়ে যায়।(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×