(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার ১৪ তম পর্ব পরিবেশিত হল।)
-‘ তা বটে কখন যে কার রস বের হয়ে যায় আর কার রস জড়ো হয় বোঝা মুশকিল! যা দিনকাল পড়েছে।’ ওর কথার জবাব দিয়ে বাজারের যেয়ে ঢুকি।
বাজারে ঢুকে চাচার মাথা নাকি একদম তেতে ওঠে। দুদিনে চালের দাম মণ প্রতি চল্লিশ টাকা বেড়েছে। এ ভাবে বন্যার পানির মতো চালের দাম বাড়তে থাকলে শেষে আবার সেই তিন বেলা শুকনো রুটি খাওয়ার দিন ফিরে আসবে। চাচা এমন মন্তব্য করে তার কথা শেষ করেন।
-‘রুটি খেতে ভাল লাগে না। তবে জোর করে আম্মু খাওয়ায়ে দিলে আর না করতে পারি না। কিন্তু জানেন চাচা আপা -মেজ আপা বলেন কি রুটি খাওয়ার বদলে বরং না খেয়ে থাকা অনেক ভাল।’ ঝিনু চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে অবিকল আব্বুর ঢংয়ে বলে।
ঝিনু আংগুর চাচির সাথে রান্নাঘরে ঢোকে। বাজার নামানোর কাজে হাত লাগায়।
- ‘তোর আম্মু থাকলে মহা অবাক হয়ে যেতেন তাই না?’
-‘জি।’ ঝিনু স্বীকার করে।
-‘আম্মুর সাথে কাজ করতে ইচ্ছে হয় না?’
-‘না।’
-‘তাহলে আমার সাথে যে হাত লাগাচ্ছিস?’
-‘বারে তুমি তো ইচ্ছে মত খেলতে দিচ্ছ। বারবার বলছ না। সাবধান। তেলের বোতল যেনা না ভাংগে। নুন টা আস্তে নামাও। তোমার সাথে কাজ করছি না খেলছি।’
-‘আচ্ছা কাজকে খেলা মনে করলে আর করতে অসুবিধা নেই। যতো গোলমাল বাঁধে ওই কাজকে কাজ মনে করলে, তাইনা?’
ঝিনু জবাব না নিয়ে মাথা নাড়ে।
-‘আচ্ছা চাচি তুমি কি শাদ্দাতের গল্পটা জান?’
-‘কেনরে সোনা?’
-‘ভাইমনি ওই গল্পটা শোনাবে বলেছিলো। এখন সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। একেবারে পচা ‘করুক্কামারী!’ ভাইমনি সকালে বেড়াতে নিয়ে যান না গল্প বলবেন কখন? সারাদিন মুখ এমন প্যাঁচা বানিয়ে রাখেন যে কাছেও যায় না। গল্প শোনাবে আর কখন?’
-‘ও এই কথা। তাহলে শোন...’ চাচির মুখের কথা শেষ হয় না। ভাইয়ার আর্ত চিৎকার শোনা যায়।
-‘ও চাচি জলদি আসেন।’
খেলতে যেয়ে শান্তু কোথা থেকে যেন একটা ভাংগা কাচের টুকরো কুড়িয়ে নিয়েছে। আর তা দিয়ে নিজের হাতে দিয়েছে একটা টান। বেশ ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। শান্তুকে নিয়ে চাচা ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। সাথে গেলেন ভাইয়া। মুখ কালো করে চাচি বসে রইলেন। সব মিলিয়ে বাসায় ফিরতে খানিকটা রাত হয়ে গেলো। ঘরে ফিরে আব্বুর কড়া ধমক গিলতে হলো।
-‘দিনকাল ভাল নয়। এ ভাবে খবর না দিয়ে কেউ দেরি করে?’
ভাইয়ার মুখে সব কথা শুনে তবেই আব্বু শান্ত হলেন।