somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তরালের মুখ--১

২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসের জানালা দিয়ে আশপাশের দৃশ্য দেখছিল সাহেদ।এই এলাকাটি একেবারে অপরিচিত তার
কাছে।তাই বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।যখন শুনল খালাসী ছেলেটা ডাকছে,এই-যে
ভাই নেমে এসো,তোমার ক্যানেল মোড় এসে গেছে।
বিরক্ত তবু হন্তদন্ত হয়ে বাস থেকে নামল সাহেদ।

বাস থেকে নেমে বুকভরা একটা বাতাস চারপাশে খেলা করছে টের পেল সাহেদ।ভাবল,বাসের
খালাসীটার উপর অহেতুক রাগ করেছে সে।ওরা হয়তো প্রথম পরিচয়ে সকলকে তুমি করে বলে।
কিম্বা এমনও হতে পারে সাহেদের চেহারা দেখে একেবারে ছেলেমানুষ ভেবেছে।তা-তে অবশ্য ভুল
নেই কোন।যে লোক যেখানে যাবে তার ঠিকানা বলতে পারে না,সে নিশ্চয় ছেলেমানুষ।

কনডাকটর যখন তার কাছে ভাড়া চেয়েছিল তখন সে বলেছিল --রুপপুর পঞ্চায়েত।
--রুপপুর পঞ্চায়েত,ওখানে তো আমাদের বাস যায় না,আপনি বরং ক্যানেল পাড়ে নামবেন।
--ক্যানেল পাড় ?
--হ্যঁ ,ক্যানেল পাড়,এই বুধু ভাইকে ক্যানেল পাড়ে নামিয়ে দিস।

এই সেই ক্যানেল পাড় ,বুকে মোড়ামের চাদর জড়িয়ে গড়িয়ে গেছে অনেকদূর।সেই মোড়াম
রাস্তা ধরে হাঁটছে সাহেদ।আশেপাশে ফাঁকা মাঠ।কার্তিকের হিমেল হওয়ায় দুলছে ধানজমির
ভরন্ত শরীর।ক্যানেলে শীর্ণ জলধারা।সেখানে তে-চোখো মাছের কিলিবিলি।

হাঁটতে-হাঁটতে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল সাহেদের।মা বলেছেন যেখানেই যাবি বাপ,
সাবধানে থাকিস।তোর জন্যে আমার বড় ভয় হয়-রে,তুই আমার একমাত্র সম্বল।
বলতে-বলতে মায়ের চোখে পানি চলে এসেছিল।সাহেদেরও।তাই সে কিছু বলেনি।বলতে
পারেনি।তখন মায়ের হাত ধরেছিল শিরিন।বলেছিল--কী-যে বলেন আপনি তার ঠিক নাই,
ছেলে চাকরী করতে যাচ্ছে,কোথায় জান ভরে দোয়া করবেন,তা নয়----।
শিরিনও কথা শেষ করতে পারেনি ।ওড়নায় মুখ ঢেকে চলে গেছিল পাশের ঘরে।মা নিজের
চোখ মুছতে-মুছতে চলে গেলেন তাকে সান্তনা দিতে।

হতভম্ব সাহেদ স্যুটকেস হাতে তুলে বলেছিল--মা এলাম গো,শিরিন আসি।

এখন সাহেদ বুঝতে পারছে,কেন ঘরের ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসেনি।অশ্রুর ভারে
ওদের দুজনের বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিল।

মা না হয় কাঁদবে।কিন্তু শিরিন কেন কাঁদে?শিরিন তার কে?

শিরিন তার কে,এই কথাটি অনেকক্ষণ বিড়বিড় করল সাহেদ।তারপর নিজেকে শুনিয়েই বলল--
জানি না,আজ অব্দি বুঝতে পারিনি ওই বিজলী-চোখো মেয়েটিকে।

ভাবতে-ভাবতেই সাহেদ দেখতে পেল গাছপালার আড়ালে থাকা হলুদ রংয়ের বাড়িটিকে।
বুঝল ওটাই সেই পঞ্চায়েত-ভবন।দ্রুত হাঁটলো সেদিকে।

ঘড়ি দেখে নিজেই লজ্জিত সাহেদ।বারোটা দশ।জীবনের প্রথম চাকরীর প্রথমদিন,তাও কিনা
লেট!




হলুদরঙা দোতলা বাড়ি।চারদিকে পাঁচিল-ঘেরা।সামনে লোহার গেট।আধখোলা অবস্থায়।
নিচের বারান্দায় গ্রীল।সেখানে তালা ঝুলছে।তারমানে বারোটা বেজে গেছে,এখনও অফিস
খোলেনি?নাকি খোলা ছিল এতক্ষণ,অন্য স্টাফরা টিফিনে গেছে।কিম্বা এমনও-তো হতে
পারে,জুম্মার নামাজ পড়তে গেছে সবাই।

চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সাহেদ।কী করবে ভেবে পাচ্ছে না সে।ঠিক তখনই সে শুনল
মানুষের কন্ঠস্বর।খুশিতে ভরে উঠলো তার মন।একমাস রোজার শেষে ঈদের চাঁদ দেখলে যেমন
খুশি হয়,এ-যেন ঠিক তেমন-ই খুশি।

সাহেদ শুনল দোতলায় কোন একজন কাশছে।যে-ই হোক সে একজন মানুষ।গ্রহান্তরের মত
মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা এই পঞ্চায়েত-ভবনে এখন মানুষের উপস্থিতি যেন চাঁদে মানুষ থাকার
মতই বিষয় একটি।সাহেদের মনে হলো তেমনই।

সাহেদ আরো আশ্চর্য হলো,যখন সে দেখল,দোতলায় ওঠার সিঁড়িটি একেবার কোণে,নারকেল
গাছের আড়ালে।

হাতে চাঁদ পাওয়া যাকে বলে তাই হলো সাহেদের।তাড়াতাড়ি সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলো সে।
পাক দেওয়া সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়।একপাশে পড়ে আছে একটা তালা-মারা ঘর।তার লম্বা
বারান্দা চলে গেছে সামনে।
বারান্দার শেষে রাস্তাটা দু-ভাগ হয়েছে।ডানদিকের থেকে ভেসে আসা গন্ধ বুঝিয়ে দিচ্ছে ওদিকে
বাতরুম।তাই বামদিকের বারান্দা দিয়ে এগিয়ে গেল সামনে।সেখানেই সে দেখল লোকটাকে।

মাঝবয়সী লোকটা প্যান্টের বেল্ট খুলছে আর লাগাচ্ছে।সম্ভবত পেটের মেদ কতটা বাড়ছে
তাই পরখ করছে।সাহেদ তাকে বলল--আচ্ছা,আর-আই অফিসের লোকজন কোথায় গেছে।
---তা-তো আমি বলতে পারব না,ওরা যে কখন যায়,কখন আসে ,কেউ জানে না,কি বলো
হলধর?
হলধর নামের লোকটি এতক্ষণ বিড়ি টানছিল আর ধোঁয়া ছেড়ে কাশছিল।সে মাথা নেড়ে বলল--
ওদের খবর আমরা জানি না।

উদ্বিগ্ন সাহেদ বলল--তাহলে ওদের খোঁজ কোথায় পাব বলুন,মানে ওদের ফোন নম্বর যদি থাকে?
--ওদের ফোন-টোন বাপু আমি জানি না,আমরা ওদেরকে দেড়শো টাকায় ঘর ভাড়া দিয়েছি,তাই
তো দুবছর ধরে দেয় না।বলতে-বলতে পাশের ঘরে ঢুকে পড়ল প্যান্টের বেল্ট লাগানো লোকটি।

হতাশ সাহেদ দেখল,বিড়ি টানা লোকটি ঢুলতে শুরু করেছে।বুঝল এদের দ্বারা কোন কাজ
হবে না,যা করার তা নিজেই করতে হবে।
(পরের কথা জানতে পড়ুন---আগামী পোস্ট--অন্তরালের মুখ--২)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×