somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তি পর্ব-১ (কৈশোরে লেখা মঞ্চনাটিকা)....

২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে নবম শ্রেণী মানে বোধহয় বিশেষ কিছু_ স্কুলের সার্বিক নিয়ন্ত্রণটাই থাকে তাদের হাতে। তো, তখন নবম শ্রেণীতে সবেমাত্র উঠেছি, এমন সময় আমাদের কয়েকবন্ধুর খেয়াল হল সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপনের, সেই উপলক্ষে দেয়ালিকা প্রকাশিত হবে, সাংস্কৃতিক-সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা হবে এবং শেষদিনে হবে ১৫-২০মিনিটের মঞ্চ নাটিকা।। যেহেতু আমরা কেউই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত নই, তাই বিখ্যাত নাটকগুলোর নাট্যরূপ দেয়া এবং সেই অনুযায়ী অভিনয় করা আমাদের কল্পনাতীত কল্পনা ছিল।। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি-ই লিখব আমাদের সামর্থ্য-সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী।। তখন ছিল মার্চ মাসের ১মসপ্তাহ, আর ২সপ্তাহ পরেই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে এস এসসি উপলক্ষে, এমন একটা সময়।হাতে সময় ছিল খুবই স্বল্প, অন্যদিকে বাসায় বসেও লেখার ঝামেলা। আম্মুকে লুকিয়ে কবিতা লিখলেও নাটক লেখা তো একটু বেশি সময়ের ব্যাপার।। তাই, পুরো নাটকটি লিখেছিলাম এক বন্ধুর বাসার ছাদে বসে চা খেতে খেতে। তবে, দুঃখের বিষয় হল এত লুকোচুরি করে লেখা নাটকটির বেশ কয়েকটি রিহার্সেল দিলেও শেষপর্যন্ত মঞ্চায়ন সম্ভবপর হয়নি আমাদের তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের ঔদার্যে; আমাদের সাধারণ জ্ঞান-বিতর্ক আর দেয়ালিকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তাই আমার লেখা প্রথম মঞ্চনাটিকাটিই একটি পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়েছিল।।। কাব্যের ঘোড়ারোগ লিখতে গিয়ে এই নাটিকাটিও ডায়েরীতে খুজে পেলাম।

চরিত্র পরিচিতি
কাশিনাথ রায় : জমিদার
নগেন্দ্র কুমর : মন্ত্রী
সুখেন দত্ত : সেনাপতি
নিজাম : বিপ্লবী নেতা
অতিরক্ত: পুলিশ, গুপ্তচর, খানসামা, নায়েব, অন্যান্য।
দৃশ্য-১
( জমিদার তার খাসদরবারে বসে আছেন, সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সভাসদবর্গ, দরবারের কার্যক্রম শুরু হবার অপেক্ষায়)
মন্ত্রী: জাহাপনা, আমাদের নিয়োজিত গুপ্তচর দরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইছে।
জমিদার: ভিতরে আসতে বলুন
(গুপতচর দরবারে প্রবেশ করবে এবং নবাবকে কুর্নিশ করবে)
গুপ্তচর: জাহাপনার জয় হোক।
জমিদার: কী খবর নিয়ে এসেছো গুপ্চর?সব ভালতো?
গুপ্চর: (আতঙ্কিত)না হুজুর, খুবই খারাপ সংবাদ বয়ে এনেছি।প্রজা বিদ্রোহের সমস্ত আয়োজন সম্পণ্ন প্রায়, এমনকি অনেকেই আর খাজনা দিতে রাজি নয়। ওরা আপনার জমিদারিত্ব মানেনা। একটা কিছু ব্যবস্থা নিন হুজুর,আমি তো ভযেই মরে যাচ্ছি!
sb]জমিদার: খামোশ বেয়াদব! আমার রাজ্যে বিদ্রোহ? সবকয়টা বিপ্লবীকে আমি দেখে নেবো।।
(কিছুক্ষণ ভেবে) তুমি এখন আসতে পার। তুমি তোমার কাজ করে যাও, আর প্রত্যেকটা ঘটনা আমাকে জানাতে থাক।
(সেদিনের মত দরবার মুলতবি করা হল)

দৃশ্য-২
(জমিদার তার খাসকক্ষে বসে আছেন। খাসচাকর মদ পরিবেশনে ব্যস্ত)
খাসচাকর : হুজুর, আপনার এই যে আপনার অমৃত।
জমিদার: (ব্যাকুল)কই দাও দাও, আহ! কতক্ষণ ধরে তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে গেছে।
(দ্বাররক্ষীর প্রবেশ। জমিদারকে কুর্নিশ করবে)
দ্বাররক্ষী: জাহাপনার জয় হোক। আমাদের গোমস্তা সাহেব এসেছেন, আপনার দর্শনপ্রার্থী।
জমিদার: (বিরক্ত) আসার আর সময় পায়না এরা? যাও আসতে বল।
(গোমস্তা কক্ষে প্রবেশ করে জমিদারকে কুর্নিশ করার সঙ্গে সঙ্গেই চমিদার যেন তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল)
জমিদার: কি ব্যাপর গোমস্তা, কাজ কর্ম কিছু কর? প্রজারা খাজনা দিতে অস্বীকার করার সাহস পায় কিভাবে?
গোমস্তা: জাহাপনা, আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি তো। কিন্তু এই প্রজাগুলো সব হারামির বাচ্চা। সময়মত খাজনা তো দিবেইনা, বরং চাইলে আরও উছিলা দেখাবে!
জমিদার: (হুঙ্কার দিয়ে) কতল কর-গ্রেফতার কর এইসব নচ্ছার প্রজাদের। এক্ষুণি যাও।
গোমস্তা: (মুচকি হেসে) তা আর বলতে! আমি অপরাধী ২জনকে গ্রেফতার করেই নিয়ে এসেছি জাহাপনা। রক্ষীরা বাইরে ওদের নিয়ে অপেক্ষা করছে।
জমিদার: বেশ বেশ। আজ সারারাত ওদের কারাবন্দী করে রাখো। কাল দরবারে ওদের বিচার হবে।
এখন যাও বিশ্রাম নাও। এই খানসামা, আমার সুধা দাও।
( গোমস্তা ক্রুঢ় হাসি দিয়ে চলে গেল)

দৃশ্য-৩
(প্রজারা মাঠে সমবেত হয়েছে, সবাই বসে আছে বিদ্রোহী নেতা নিজামের কথা শোনার জন্য, নিজাম চারদিক চেয়ে কথা বলার জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনাটিই দেখছে জমিদারের গুপ্তচর)

নিজাম: সমবেত প্রজা ভাইয়েরা , আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি। অত্যাচারী জমিদার আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।আমাদের প্রজা ভাইয়েরা বিনা কারণেই নির্যাতিত হচ্ছে, অনেকেই অন্য এলাকায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে । এটাকে বেচ থাকা বলেনা।
প্রজা১: কিন্তু এ ছাড়া আমরা কী-ই বা করতে পারি! আমাদের প্রতিপক্ষ জমিদার স্বয়ং। তার সঙ্গে আমাদের মত সহায় সম্বলহীন প্রজা কিভাবে পারবে?আমি তো বলব, আমাদের ভাগ্যকেই মেনে নেয়া উচিৎ।
নিজাম: তবুও আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।সেজন্যই শয়তানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
"কিন্তু এই পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমরা পারব কিভাবে?"-অন্য এক প্রজা বলল।
নিজাম: আমরা আমাদের সর্বত্মক প্রচেষ্টা চালাবো।মহান আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন।তাই জয় আমাদেরই হবে। সেজন্যই আমাদের সংঘবদ্ধ হতে হবে< আর বিচ্ছিন্নতা নয়।

(উপস্থিত প্রজারা তুমুলভাবে আলোড়িত হল যেন, ওদিকে জমিদারের গুপ্তচর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত জমিদার কুঠির দিকে রওয়ানা দিল)
( চলবে)













৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×