somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জুনায়েদ জামশেদ : পপস্টার থেকে দ্বীনের প্রচারক

২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জামশেদের পুত্র জুনায়েদ লাহোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্রাজুয়েশন করার পর শখের বশেই রাহেল হায়াত ও শাহজাদ হাসানের সাথে ১৯৮৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্থানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশাত্মবোধক গান ‘দিল দিল পাকিস্থান’ গাওয়ার মাধ্যমে দেশের প্রথম পপ ব্যান্ড ভাইটাল সাইন প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রথম হিট এ্যালবাম ‘দিল দিল পাকিস্থান’ আকাশচুম্বী খ্যাতি এনে দেয়। এই গানটিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাকে একজন শৌখিন সংগীতসেবী থেকে পেশাদার শিল্পীতে পরিণত করে। বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে জুনায়েদ একজন পেশাদার প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন, সংগীতকে কেবলমাত্র শখের বশেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই প্রাথমিক সফলতার কারনে রাহেল ও সাজ্জাদ তাকে বুঝিয়ে রাজি করান। অনেকগুলো জনপ্রিয় ও হিট এ্যালবাম বের করার পর ১৯৯৫ সালে যখন ব্যান্ড ভেঙে যায় তখন জুনায়েদ জামশেদ তার একক ক্যারিয়ার শুরু করেন। এতেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, পাকিস্থানে প্রথম পপষ্টার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পাকিস্থান সেনাবাহিনী তাদের সংগীত ‘কসম উস ওয়াক্ত কি’, পাকিস্থান বিমানবাহিনীর সংগীত ‘পালাটনা ঝাপাটনা’ -তে শিল্পী হিসেবে তাকেই বাছাই করে। যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, একের পর এক হিট এ্যালবাম বেরুচ্ছে, তখন হঠাৎ করেই সঙ্গীত ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দেন। ২০০২ সালে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি যখন ঘোষনা করলেন যে তিনি গানবাজনা ছেড়ে দিবেন তখন সংগীতাঙ্গনে যেন ঝড় উঠলো। তার অসখ্য ভক্ত তাদের প্রিয়তম শিল্পীকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়লো। ২০০৩ সালের ১৪ আগষ্ট তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীতজগতকে বিদায় জানান। যে জায়গায় ‘দিল দিল পাকিস্থান’-গাওয়ার মাধ্যমে শিল্পীজীবন শুরু করেছিলেন ঠিক একই জায়গায় একই গানের মাধ্যমে সংগীত জীবনে পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এই মেধাবী শিল্পী তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে খ্যাতি ও ভবিষ্যতের পরিবর্তে ঈমানকে বেছে নিলেন। এই নাটকীয় পরিবর্তনের পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহনে তার কোন আফসোস নেই। তিনি বলেন আমার পুর্বের জীবনযাপন কোন দৃষ্টিভঙ্গি এখন আর অবশিষ্ট নেই । আমার নতুন জীবন খুব সরল, পবিত্র এবং সুন্দর। আমি অনুভব করি আপনি আপনার জীবনে আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরীকার উপর আমল করেন তাহলে দুনিয়াতেই আপনার জীবন জান্নাতে পরিণত হবে। তার এই পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন-১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আমার এক বন্ধুর সাথে তাবলীগ জামাতে তিন দিন সময় লাগাই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় ঘটনা। এরপর আমি উপলব্ধি করি যে, সারাজীবন আমি একটা বিরাট ভুলের মধ্যে কাটাচ্ছি এবং আমাকে অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। নাচ-গান ছাড়াও জীবনের বড় কোন উদ্দেশ্য আছে। একদিকে একের পর তার এক হিট এ্যালবাম বের হচ্ছে আর অপরদিকে তিনি আত্মার শান্তির খোঁজে মসজিদের মেঝেতে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গীত যার পেশা, সঙ্গীত যার নেশা, রক্তের কণায় কণায় যার সঙ্গীত তার জন্য সঙ্গীত ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। তিনি সেই দিনকে স্মরন করে বলেন আমি খুব বিষন্ন ছিলাম কারন সংগীত ছিল আমার রক্তকনিকায়, আমার চামড়ার নিচে, যাতে আমি ছিলাম অভ্যস্থ। কিন্তু আমি শুধু আল্লাহকে খুশী করতে চেয়েছি। আমি সেই ব্যক্তি হতে চাইনি যাকে আল্লাহর কিতাবে খারাপ বলা হয়েছে। আমি বর্তমানে পপস্টারের চেয়ে একজন দ্বীনের দাঈ হিসেবেই জীবন কাটাতে অনুপ্রানিত হয়েছি। আমি ১৬ বছর যাবৎ টাকা, খ্যাতি ও প্রচারণার পিছনে ছুটেছি। আমার এখন আর প্রচারনার প্রতি কোন আকর্ষন নেই। মানুষ চায়না আমি আল্লাহর হুকুম মেনে চলি। জুনায়েদ জামদেশেদের এই পরিবর্তন তার অসংখ্য ফ্যানকে আহত করেছে। তারা ধারনা করেছে যে, জুনায়েদ জামশেদ পাগল হয়ে গেছে। জামশেদ খুশি যে, তার পরিবার তাকে সহায়তা করেছে। তার স্ত্রী সহজেই এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে। যে দিল দিল পাকিস্থান, এইতেবার, উস রাহ পার, দিল কি বাত এর মত হিট এ্যালবামের শিল্পী তিনিই আজ গেয়ে চলছেন বদরুদ্দোজা শামসুদ্দোহা, মেহবুবে ইয়াজদান, জালওয়ায়ে জানান এর মত উচ্চাঙ্গের নাশীদ-ইসলামী সংগীত। তার মধুর কন্ঠে গাওয়া ‘এ্যায় আল্লাহ তুহি আতা তো যুদো ছাখা’ সত্যিই চমৎকার। মুফতী তাকি উসমানী সাহেব (দামাত বারকাতাহুম) এর লেখা ‘এলাহি তেরি চৌকাঠ পার ভিখারী বানকে আয়াহু’ এবং ‘মুঝে যিন্দেগী মে ইয়া রব সারে বন্দেগী আতা কর’ জুনায়েদের কণ্ঠে শুনলে হৃদয়ের গভীর থেকেই এ দুআ আসে “আল্লাহ যেন তার মত আমাদেরও তার দুয়ারের ভিখারী হিসেবে কবুল করেন, আমাদের জিন্দেগীকে তাঁর বন্দেগীতে ভরে দেন”।

তার গাওয়া ইসলামী সংগীতগুলো এ সাইটে পাওয়া যাবে জুনায়েদ জামশেদ

সম্প্রতি জুনায়েদ জামশেদ বাংলাদেশে এসেছিলেন, সে সম্পর্কে জানতে ভাই ইঊসুফ সুলতান-এর পোষ্ট পড়ুন Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:১২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×