somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রদর্শন, চাঁদনী রাত, রম্য অথবা একটা আবেগী গল্প লেখার অপচেষ্টা কিংবা কিছু আগডুম বাগডুম অথবা নেফ্রোদিতি – পর্ব ২

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রথম পর্বের পর)

পরদিন ৩০ তারিখ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এইদিনই সেন্টমারটিন্স এর উদ্দেশ্যে যাত্রার কথা থাকলেও একটা কারণে সকলেই মানসিকভাবে কিঞ্চিত বিধ্বস্ত ছিল। সুতরাং সিদ্ধান্ত হইল সিটিতেই হালকা ঘোরাফেরা করা হইবে। কানাইয়ের বাড়ির খুব কাছেই বৌদ্ধ কেয়াং । ওইখানেই প্রথমে যাইবার সিদ্ধান্ত হইল। জায়গাটা বেশ সুন্দর। ওইখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করিয়া সকলে রওয়ানা দিল হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, মাঝখানে ভাড়া করা অটো নষ্ট হইয়া গেল। সকলে নামিয়া পড়িল নির্জন সমদ্র সৈকতে। আশেপাশে কাউকেই চোখে পড়ে না; হিমছড়ি প্রায় আরও ২ কিলোমিটার দূরে। জায়গাটায় বেশ কিছু বালির বাধ আছে। সাগরের পানিতে পা ভিজাইয়া সকলে হাটিয়া চলিল হিমছড়ির দিকে। ক্যাবলার ভাষ্যমতে উহা নাকি তার জীবনের “সবচেয়ে এপিক অসাধারণ একই সাথে বেশ কিছু মানবিক আবেগের মিশেলের কিছু মুহূর্ত।“ সমুদ্রকে এইরকম নির্জনতায় পাইয়া উহার মনে নাকি বেশ কতগুলি রোমান্টিক কবিতা এবং একখানা গদ্য নাজিল হইয়া গিয়াছে। সময় পাইলে উহা প্রকাশ করিবে কথা দিলেও ক্যাবলার এইসব কাজে মেলা আলস্য, সুতরাং সে কতটুকু কথা রাখিবে সেই বিষয়ে দলের সকলেরই বিশেষ সন্দেহ আছে। হিমছড়িতে একখানা পাহাড় আছে; ওইটাকে একটু ঘষিয়া মাজিয়া টুরিস্ট স্পট বানানো হইয়াছে। সকলেই বড়ই খাইতে খাইতে টিকেট কাটিয়া ভিতরে ঢুকিয়া গেল। পাহাড়ের উপর উঠিয়া চোখে পড়ল এক ব্যাক্তি বাইনোকুলার লইয়া বসিয়া রহিয়াছে। উক্ত ব্যাক্তির সাথে দুলুদা এবং গোবরার কথোপকথনঃ
দুলুদাঃ বাইনোকুলারের রেট কি?
ব্যাক্তিঃ একবার চাইরপাশ ঘুরাইয়া দেখামু, ২০ টাকা।
দুলুদাঃ একবার ঘুরাইয়া দেখাইলেই ২০ টাকা?
ব্যাক্তিঃ এক রেইট, কম নাই; সবাই দেখতাসে দেখেন না?
গোবরাঃ এই বাইনোকুলারের দাম কত?
ব্যাক্তিঃ ২৬ হাজার টাকা।
গোবরা (দুলুদাকে)ঃ একবার ঘুরাইয়া দেখাইলে ২০ টেকা এইটা নিয়া মাইন্ড কইরেন না; ২৬ হাজার টেকার বাইনকুলার যে ফ্রিতে দেখতে দিসে এইটাতে খুশি থাকেন।“


হিমছড়ি হইতে এইবার কক্সবাজার ফেরা। সিদ্ধান্ত হইল সিটিরই কোন একখানা রেস্টুরেন্টে খাইয়া সিটি দর্শনের সময় বৃদ্ধি করা হইবে। চেহারা সুরত ভাল দেখিয়া একখানা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করিল সকলে। ওয়েটারের সাথে কথা যা বলার দুলুদা বলিল। সেই কথাবার্তা এইরুপঃ
দুলুদাঃ কি কি আছে?
ওয়েটারঃ ভাত, তেলাপিয়া, মুরগি বড়, মুরগি ছোট, গরু, ডাল, সবজি...
দুলুদাঃ মুরগি কত?
ওয়েটারঃ ছোটটা ৪০, বড়টা ১০০।
দুলুদাঃ সবাইরে মুরগি ছোটটা দেও আর ডাইল নিয়া আস।

খাবার আসিল। প্রত্যেকের জন্য ভাত এবং বাটিতে দুইখানা করিয়া মুরগির মাংস যার একটা পিউর হাড্ডি। কি যেন মনে হওয়ায় ক্যাবলা জিজ্ঞেস করল, “এই মুরগির দাম ৪০ টাকা?” ওয়েটার সম্মতি জানাইয়া প্রস্থান করিল। পাশের টেবিলের জনৈক ব্যাক্তির ১০০ টাকার পিস দেখিয়া সকলে খুশি হইয়া গেল। উহাদের দুই পিসের সাথে পাশের টেবিলের পিসের তেমন পার্থক্য নাই; শুধু উহাতে পুরোটাই মাংস এই যা। যুবকগন খুশি মনে হোটেলের যার পর নাই প্রশংসা করিতে করিতে খাওয়া শেষ করিল। বিল দেওয়ার সময় বোঝা গেল, যুবকগনের কপাল পুরোই ফাটা; উহারা কিছু একটা করিবে আর মারা খাইবে না উহা “কাভি নেহি।“ মাংসের বিল ধরা হইল ৮০ টাকা করিয়া। অনুসন্ধানে জানা গেল “প্রতি পিস” ছিল ৪০; যেহেতু এক বাটিতে ২ পিস করিয়া ছিল এবং কেউ কিছু বলে নাই সুতরাং বিল ৮০ টাকা করিয়া। নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করিতে করিতে সকলে রাস্তায় নামিয়া পড়িল।


এরপর শুরু হইল যুবকগনের এপিক ঘোরাঘুরি। অতি আবেগি ক্যাবলার ভাষায়, “বাইরে থেকে যারা আসে তারা খালি পানিই দেখে; পুরা সিটির সৌন্দর্য তাদের কাছে অজানা থেকে যায়। আজকে যা যা দেখলাম বহু দিন মনে থাকবে। সব কিছু মিলিয়ে সমুদ্রকে বাদ দিয়েও নগরীটা সুন্দর, খুরুশকুল ব্রিজ সুন্দর, বাকখালি নদি অপরুপা। জেলা স্কুল, হাই স্কুল, দুলুদার প্রাইমারি স্কুল – কানাই আর দুলুদার সাথে সাথে বাকি সবাইকে নস্টালজিক করে তোলে। তারাবনিয়ার ছড়া কিংবা পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে শিশু কিশোর সেকশনে গিয়ে ছোট ছোট চেয়ারে বসে কমিক্স পড়া, কিংবা শহরে যেখানেই যাই কানাই এর পরিচিতির সুবাদে অনেক লোকের সাথে গল্প কিংবা কুশল বিনিময় – সবই স্মৃতিতে থাকবে। সন্ধায় নুরুর দোকানে বিখ্যাত বুট মুড়ি খাওয়া, যেটা দুলুদার ভাষায় “দিন দিন মান কমে যাচ্ছে” কিংবা কস্তুরিঘাট অথবা নৌকায় নুনেরছড়া – পুরোটাই একটা কল্পকথার গাঁথুনি।“


পরের দিন ৩১ তারিখ। পরিকল্পনা সেন্টমারটিন্স। কিন্তু দেশ ব্যাপী হরতাল। টুরিস্ট স্পট – হরতালে কিছু হওয়ার কথা না চিন্তা করিয়া সকলেই ভোর পৌনে ৬ টায় গৃহ ত্যাগ করিল। ক্যাবলা ব্যাতিত বাকি সকলের যেটা কিনা ঘুম শুরুর সিগ্নালিং টাইম। এই সময়ে সকল কে ঘুম থেকে উঠাইতে ক্যাবলা এবং কানাইয়ের পরিবারের কি ধকল গিয়াছে উহা বর্ণনা করিলে শোকের কারবালা হইয়া যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা থাকায় উহা আপাতত বাদ রহিল। রাস্তায় নামিয়া গাড়ির অপ্রতুলতা দেখিয়া সকলেই বিপুল রকম সন্দিহান হইয়া পড়িল। তার পরেও কোনরকমে উচ্চ মূল্যে একখানা অটো জোগাড় করিয়া দুলুদা, ক্যাবলা, প্যাড়া আর গোবরা রওনা দিল টার্মিনালের উদ্দেশ্যে। মেলা দিন পর বাড়ি আসিয়াছে বলিয়া এবং সেন্টমারটিন্স দেখিতে দেখিতে উহার হাতের তালুতে ম্যাপ চলিয়া আসায় যাত্রা হইতে শেষ মুহুর্তে নিজেকে সরাইয়া নিল কানাই। প্রথমে টার্মিনাল এবং পরে লিঙ্ক রোড গিয়া যুবকগন জানিতে পারিল ওইদিন সকালে কোন বাস টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে নাই। লিঙ্ক রোড গিয়া একখানা জলন্ত মিনিট্রাকও পরিদর্শন করিয়া আসিল সকলে।




সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×