somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেট আ লাইফ

২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূয্য ডুবতে এখনো বেশ বাকি। আমার সামনে তুরাগ নদি, শুয়ে বহুদূরে মিশে গেছে। দখিনা বাতাস এখনো এক আধটু আছে, সেও চলছে বয়ে সীমাহীন রহ্স্য বুকে নিয়ে। মৃতপ্রায় এই নদীতে ঢেউ তেমন একটা নেই। যতটুকু আছে ততটুকু ভবিষ্যতে থাকবেনা হয়তো। নদীর কোল ঘেষে বেঙের ছাতার মতোন গড়ে উঠছে তামান্নার মতো ডেট সেন্টারগুলো! আমার বাম দিকে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। সামনে বহদূরের লোকালয়ের ঝাপসা আবছায়া। ডানে মাঝ নদিতে গুটিকয়েক নোকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেমে আছে। নোকাগুলোর এক পাশ কালোকাপড় এবং অন্য পাশ ছাতা দিয়ে ঢাকা। মাঝখানে কি হয় সে ঈশ্বর জানেন। ঈশ্বরের দারুন সুবিধে। ইচ্ছে করলেই তিনি সব দেখতে পান! গুচ্ছ নোকার পাশে দূরে ষ্টীমার এগিয়ে যাচ্ছে, তারপর, আরো ডানে আশুলিয়া রোড। আশুলিয়া নাম শুনলে চোখে ভয়ানক এবরো খেবড়ো পথের দৃশ্য ভেসে ওঠে। এ পথ দিয়ে কি করে যান চলাচল করে সে এক বিস্ময়।

যাক, আমার পাশে কাঁধে হাত রেখে বসে আছে জলকনা। জলকনা...। এক সুরভী সময়ের নাম। কলকাতার মেয়েরা কেমন হয়? এরা বাঙালী মেয়েদের মতো খাটো না। মোটাও না। প্রায় সব কলকাতান মেয়েদের শরীরের গড়ন একই রকম। সাদাসিদে আর পরিপাটির সমন্বয়। পোষাকে থাকে রুচির ছাপ। সমস্ত শরীর জুড়ে অদ্ভুত শুভ্র নিস্তবদ্ধতা, যেন শিউলি ফুলে বিন্দু শিশির। চোখ তার পাখির মতোন। জীবনানন্দের বনলতা সেনের মতো ওর চুল। তবে, কোমর বরাবর বড় না। ওর চুল পিঠ বরাবর এসে শেষ হয়েছে।

আমরা বসে আছি ডিঙি নোকায়। ছোটখাটো বয়সী নোকা। এর আছে মাঝ বরাবর ছাউনি। যাত্রীকে যতটা না রোদ/ বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর জন্য এ ব্যবস্থা তার চেয়ে বড় কারন মাঝির ব্যবসাকে জমজমাট করা। মধ্য বয়সী মাঝি। গায়ের রং তামাটে। শুকনো চেহারা। পরনে লুঙ্গি, গায়ে শার্ট, কোমরে লাল-সবুজ গামছা বাধা। মাঝির আলসে বৈঠার তালে নোকা চলছে, গন্তব্যহীন। গন্তব্যের কথা তাকে বলতে হয়না। এইখানে, এই তুরাগে গন্তব্য বলে কিছু নেই। সবকিছু এখানে গন্তব্যহীন।

আমি মানুষটা কেমন তা আমি নিজেও জানিনা। তবে মনে হয়না খুব একটা সুবিধের। আমার পাশে জলজ্যান্ত একজন মানুষ নিজের সবটুকু ভালোলাগা উজাড় করে দূর ভবিষ্যতের কথা ভাবছে হয়তো। অথচ, আমি এর এক বিন্দুও ভাবতে পারিনা। আমার এসব ভাব আসেনা। কেন আসেনা সে জানিনা। আমি ওর কথা শুনতে পছন্দ করি, ওর স্পর্শ নিতে কিংবা আমাদের দুজোড়া ঠোঁট যখন একাকার হয়ে ভালোবাসার অস্তিত্ব রোপন করতে ব্যস্ত থাকে, ঠিক তখনো আমি ভেবে পাইনা আমার সাথে ওর সম্পর্কটা আসলে কিসের? আমি ওকে সব বলতে পারি কিন্তু নিজের চরম অসময় মুহূর্তে ওকে আমি চাইতে পারিনা। বলতে পারিনা- ভালো নেই।

তার সাথে আমার ঝগড়াঝাটি তেমন একটা না হলেও মান অভিমান হারহামেশাই হয়। কিন্তু ওর রাগ সবচেয়ে কমজোরি। এটা ওর দুর্বল দিক। ও র্দীঘ মেয়াদী রাগ দেখাতে জানেনা। কিন্তু যখন ঝগড়া হয় তখন আমাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামাতে ওর এক মিনিটও সময় লাগেনা। আমি স্তম্ভিত হই, আমি অবাক বিস্ময়ে নতুন আমিকে দেখি আর লজ্জিত আমি নতমুখে বাক হারাই।

-- মামা আরো দূরে গেলে ফিরতে সন্ধ্যা হইয়া যাইবানে, তহন পুলিশকে টাকা দেওন পরবো।
-- ফিরে চলেন। আমি মাথা না ঘুরিয়ে উত্তর দেই।
-- আপনে বললে আরো যাইতে পারি, তয় পুলিশের টাকাটা আপনারে দিতে অইবানে।
-- না, আর যাবার দরকার নাই। ফিরতি পথ ধরেন।

মিষ্টি একটা বিকেল। পেছনে কুসুম রঙের সূয্য। আমাদের চারপাশ ঘিরে অজস্র জলরাশি। চলছে..., চলছে সময় অসময় বুকে নিয়ে। গন্তব্যহীন। ঠিক আমার মতোন। নোকার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি। বুড়ো নোকা ফিরে চলে পুরনো দিনে। জলকনা, তার ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় আমার কপাল, চোখ, মুখে শিহরন জাগিয়ে লজ্জায় মুখ সরায়। আমি উঠে বসি। গভীর আবেশে তাকে নিজের কাছে টেনে আনি। ওর চুলের গন্ধে মাতাল আমার বিবেক ঠিকানা হারায়, সহজেই। গভীর ঠোঁটের খাঁজে অনভ্যস্ত আমরা বন্য আবেশে অমৃত খুঁজি...। সময় কখনো কখনো থমকে দাঁড়ায়। তারপর, আমার অসামাজিক হাত তার কৈশোর পেরোনো বুকে উঠে আসে নির্বাক বিস্ময় সাথে নিয়ে।

অসামাজিক আমরা। অনেকটা গত বছরের হলদে পাতার মতোন। একদিন, নির্বাক বিস্ময়ের অপেক্ষায় না থেকে ঠিকানা হারাবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:২৯
১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×