somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কৈশোরে কাব্যের ঘোড়ারোগ পর্ব-৫

২০ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। যে কয়দিন হলে আছি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্লগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কি হতে পারে আমার মত 'পঞ্জম প্রজাতির গর্দভ ব্লগারের কাছে। অতএব জয় বাবা ব্লগনাথ!
গতকাল ব্লগার ফারিহান মাহমুদের একটি পোষ্ট পড়ে কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ছড়া-গল্প লিখি ক্লাস থ্রি থেকে, তবে তা একেবারে বিপদজনক চরম আকার ধারণ করে নাইন-টেনে পড়ার সময়, এবং সেটা এতটাই যে টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত গণিত+উচ্চতরগণিতে লেটারমার্ক পাই তো না-ই বরং নম্বরগুলো ছিল সেইরকম: ৫৪ এবং ৪৭!
আপাতত কোন কাজ যেহেতু নেই, তাই আমার পুরনো ডায়েরী ঘেটে সেই সময়কার লেখা শিশুতোষ কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সামান্য শখ হয়েছে। এই শখের সৌজন্যে হলেও এতদিনপর সেই পুরনো ডায়েরীটা নতুন করে খুললাম। এখানকার বেশিরভাগ কবিতাই ক্লাস সেভেন-ক্লাস টেন এর মধ্যবর্তী সমযকালে লেখা।।।। আরও আগের লেখাগুলো এই মুহূর্তে হলে নেই। ছুটিতে বাসায় গেলে খুজতে হবে।
শ্রদ্ধেয় যতিন সরকারের একটি বইয়ে পড়েছিলাম " ম্যালেরিয়া এবং কাব্যরোগ বাঙালি জীবনে অনিবার্য। ম্যালেরিয়া হতে যদিওবা রেহাই পাওয়া যায়, কাব্যরোগ থেকে নিষ্কৃতির আশা দুরস্থান!"- আপনাদের দোয়ায় ম্যালেরিয়া তো শৈশবে হয়েছেই, কাব্যরোগটাও এমন বাড়াবাড়ি রকম হয়েছিল যে সেটা ঘোড়ারোগে রূপ নিয়েছিল। সেই ঘোড়ারোগের দৃণ্টান্তগুলো ব্লগে প্রকাশ করতে চাইছি। এবং সম্পূর্ণ ধারাবাহিকটি উৎসর্গ করছি শ্রদ্ধেয় ব্লগার ফারিহান মাহমুদকে

১৭. একটি বইয়ের আত্মকাহিনী
বহুকালের বিবর্তনের ধারায়
পড়ে আছি আমি এক ধুলি-ধূসরিত বই
আমায় কে জন্ম দিল তা আমার জানা নেই
আমি এক বই, এটাই সবচেয়ে কবড় পরিচয়।
বহুলোকের হাত ঘুরে বআজ আমি পাঠাগারে তালাবদ্ধ
তবুও শেষ হয়নি উপযোগ।
কাল আমায় বন্দী করেনি, কালই আমার বন্দী
এপারে-ওপারে সেতু গড়ে আজও টিকে আছি।
আমি শুধুই একখানা বই নই
আমি কখনো মিলনের হাসি, বিরহের বেদনা
আবার এই আমিই হই ভীষণ বিভীষিকা।
আমার কোন বিদ্বেষ নেই
আমি সকলের জন্যই উন্মুক্ত।
তাইতো জীর্ণ কুটির কিংবা রাজপ্রাসাদ
সর্বত্রই আমি বিরাজমান।
আমার কোন অন্ত নেই
ঊষাকালে ছিলাম গোধূলি লগনেও থাকব
মাঝে হব শুধু হাতবদল।
আমি কোন সাম্রাজ্য নই, তাই লুট হবার ভয় নেই
আমি শুধুই দিয়ে যাই।
বহুকালের পরিক্রমার লগ্নে
আমি অতন্দ্রপ্রহরী এক বই
বুকে ধরে আছি কাল, সমাজ, সভ্যতা।
অনেকের গোপন কাহিনীই আমার জানা
কিন্তু আমার নিজের কোন কাহিনী নেই
আমি এক বই , এই আমার বড় পরিচয়।।।

১৮.নতুন যাত্রা
কাল যে ছেলেটি বন্ধু হল ওর কাছেই জানতে পারলাম
জীবন বড় আঁধার।
আকাশে যে চাঁদ উঠেছিল
ওর হাসিতেও দেখেছিলাম অন্ধকারের ছায়া।
আকাশে উড়ন্ত পাখিটা হঠাৎ গতি থামিয়ে দিল
ওর ডানার ঝাপ্টা জানাচ্ছিল অশনি সংকেত।
নদীর হারানো স্রোতে বিস্মিত হই
চমকে উঠে দেখি অতল সীমারেখা।
আজ পুরো প্রকৃতি চায় পরিবর্তন
দেখতে চায় দুর্বিনীত সমাজ।।
বন্ধু চায় পরীক্ষা শেষে ঘুরতে যাওয়ার স্বাধীনতা
চাঁদ দিতে চায় পূর্ণোচ্ছটায় আলো
সেই সাথে চায় মানুষের মনকে আলোকিত করতে।
কলম ছুটতে চায় দুরন্ত গতিতে
জেগে উঠতে চায় অন্যায় বিরোধী হাতিয়ার হয়ে।
কয়লা আর শুধুই পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হতে চায়না
ওর প্রবল আক্রোশে "ও" জ্বালাতে চায় অন্যায়কে।
পথহারা পথিক আজ আর উল্টোপথে হাটেনা
পুরো সমাজটা আজ অবিস্মরণীয় পরিবর্তনের খেলা খেলে
আমরা চাইছি সে পরিবর্তনে অংশীদার হতে।।

১৯.শিকল
মনটাতে মোরা শিকল পরেছি, মনটা তাই আজ বদ্ধ
মরুভূমি আজ জীবন মোদের মন করে চিরযুদ্ধ।
শিকল , শিকল, শিকল
সব শিকল আজ এক হয়ে যেন হয়ে উঠেছে সচল।
স্বাধীনতা আজ শৃঙ।খলিত
মানবতা তাই পদদলিত।
শিকলের কথা বলি
আজকে শিকল সবখানেতে উঠছে শুধু দুলি।
আমরা সবাই রঙিন পুতুল, চলি শিকলের টানে
সাধ্য কি কার , ভাঙব শিকল মনের সমীরণ!!!
কোন কারিগর গড়ল শিকল, কোন কারিগর ভাঙে
]সপ্তডিঙ্গার মাধুকর বুঝি সে খবর শুধু জানে।।
লিখতে গিয়ে ভুলে যাই সব শিকলের ঐ টানে
দেখতে গিয়ে অন্ধ হয়েছি শিকলের প্রবচনে।
শিকল প্রতাপশালী
ওর প্রতাপে ফুটেনাক আর নতুন নতুন কলি।
যার সুবাসে ভাসবে জাতি, হাটবে নতুন পথে
অঙ্কুরে ওরা বিনষ্ট হয় শিকলের মহীরথে।
দেয়ালে সবার পিঠ ঠেকেছে, এবার এগুতে হবে
খুলতে হবে সকল শিকল বিজয়ের গৌরবে।
শতনয়নে দিব্যভরে দেখি সেদিনের স্বপন
যেদিন ধরায় অবসান হবে শিকলের দুঃশাসন।।
মুক্তপ্রাণ,মুক্তমন, ধরার মুক্ত হাওয়া
বিধি তোমার কাছে মোদের এটুকুই শুধু চাওয়া।।

২০.মনমাঝি
হেলেদুলে চলে জীবনতরী সংসার সাগরে
মনমঝি তুমি হালধরো জোরে, যেতে হবে ওপারে।
আশরাফ নই-আতরাফ নই, আমি অতি সাধারণ
হৃদয়ের চাপা কষ্টগুলো করেদাও নিবারণ।
সুখ খুজতে ঘর বাধি সবে, সুখ দেয় শুধু ফাকি
সুখ যেন শুধু মনের বিলাপ, অচিন কোন পাখি।
স্রোতে তোড়ে জীবনতরী দূরে ভেসে চলে যায়
মনমাঝি তুমি দেখেও কেন বসে আছ নিরালায়?
যখন ছিল নতুন হাওয়া, মন ছিলো মনোরমা
সবকিছু ভুলে জীবনকে সেথা ভেবেছি তিলোত্তমা।
ভুল ছিল যত চাওয়া-পাওয়া ; বৃথা সব আয়োজন
সবকিছু বাদে আজ তাই মাঝি তোমাকেই প্রয়োজন।
মনমাঝি তুমি শুনতে কি পাও আমার আরাধনা
হৃদয়মাঝারে একেছি শুধু তোমারই আল্পনা।
তাইতো বলি বারে বারে পাড়ে ফেরাও তরী
আধমেরে তুমি করে নাও আজই তোমারই সঙ্গী করি।।।


টাইপ করতে গিয়ে হাসি থামিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।।। বেচারা ছন্দ মেলানোর জন্য কিশোরমনের কি যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ক্রিয়েটিভ কাজের ধরনটাই বোধহয় এমন_ পুরনো দিনের কর্ম দেখলে সেগুলোর অপরিপক্কতা হাসির খোরাক যোগায়। তাইতো ব্লগে এখন যেসব লেখা দেই, ৫বছর পর হয়ত এগুলো পড়েই এখনকার চেয়েও বেশি হাসবো।।। এভাবে জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ত সারাজীবের কর্ম দেখেই হাসি চলে আসবে। মিল্টন কি সেজন্যই শেষের দিকে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রানজ কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন সকল পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলতে, এমনকি রবিঠাকুর স্বয়ং কবিতা লেখার চেয়ে চিত্রকলাতেই যে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তার নেপথ্য কারণও কি এই পুরনো লেখাগুলোকে হাস্যকর লাগা??? সৃজনশীলতার ধর্মই কি এমন???
ঘোড়ারোগের সময়টাতে আরও একটা রোগ ছিল সব লেখা কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করা। একটা সময় চলে আসল যখন পরিচিত একজন মানুষও বাদ ছিলনা যাকে একাধিক কবিতা উৎসর্গ করা হয়নি।।।
ও হো, আসল কথাই তো বলা হয়নি সে সময় আমি বাংলা-ইংরেজি কবিতা লিখতাম
John F. Harton নামে। ধরতে পারেন এই কবিতাগুলো (!!)John F. Harton এরই লেখা!!! .........(চলবে).........




৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×