somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কৈশোরে কাব্যের ঘোড়ারোগ পর্ব-৪

২০ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। যে কয়দিন হলে আছি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্লগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কি হতে পারে আমার মত 'পঞ্জম প্রজাতির গর্দভ ব্লগারের কাছে। অতএব জয় বাবা ব্লগনাথ!
গতকাল ব্লগার ফারিহান মাহমুদের একটি পোষ্ট পড়ে কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ছড়া-গল্প লিখি ক্লাস থ্রি থেকে, তবে তা একেবারে বিপদজনক চরম আকার ধারণ করে নাইন-টেনে পড়ার সময়, এবং সেটা এতটাই যে টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত গণিত+উচ্চতরগণিতে লেটারমার্ক পাই তো না-ই বরং নম্বরগুলো ছিল সেইরকম: ৫৪ এবং ৪৭!
আপাতত কোন কাজ যেহেতু নেই, তাই আমার পুরনো ডায়েরী ঘেটে সেই সময়কার লেখা শিশুতোষ কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সামান্য শখ হয়েছে। এই শখের সৌজন্যে হলেও এতদিনপর সেই পুরনো ডায়েরীটা নতুন করে খুললাম। এখানকার বেশিরভাগ কবিতাই ক্লাস সেভেন-ক্লাস টেন এর মধ্যবর্তী সমযকালে লেখা।।।। আরও আগের লেখাগুলো এই মুহূর্তে হলে নেই। ছুটিতে বাসায় গেলে খুজতে হবে।
শ্রদ্ধেয় যতিন সরকারের একটি বইয়ে পড়েছিলাম " ম্যালেরিয়া এবং কাব্যরোগ বাঙালি জীবনে অনিবার্য। ম্যালেরিয়া হতে যদিওবা রেহাই পাওয়া যায়, কাব্যরোগ থেকে নিষ্কৃতির আশা দুরস্থান!"- আপনাদের দোয়ায় ম্যালেরিয়া তো শৈশবে হয়েছেই, কাব্যরোগটাও এমন বাড়াবাড়ি রকম হয়েছিল যে সেটা ঘোড়ারোগে রূপ নিয়েছিল। সেই ঘোড়ারোগের দৃণ্টান্তগুলো ব্লগে প্রকাশ করতে চাইছি। এবং সম্পূর্ণ ধারাবাহিকটি উৎসর্গ করছি শ্রদ্ধেয় ব্লগার ফারিহান মাহমুদকে
[/sb

১৩.মন
মন তুমি কি সুনীল আকাশ,
নাকি আকাশের তারা?
মন তুমি কি ঝড়
নাকি ঝড়ের ঝাপ্টা হাওয়া?
মন, হয়তো তুমি খরস্রোতা নদী
কনো ভাঙ্গো, কখনো গড়ো।
তোমার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে পাই প্রেরণা
মন, কোথায় তোমার আবাস?
তোমাকে অনুভব করি, স্পর্শে পাইনা
স্বর্গের দান তুমি,মর্তে তোমার ঠাই
আজ সকলে সমবেত সুরে তোমারই গান গাই।।।

১৪.আমি হব
আমি কখনই সকালবেলার পাখি হবনা
হলে হব সকালের স্বর্ণালী আলো।
আমি অনেক কিছুই হব
হয়ত আজ , নাহয় কাল।
একটা কিছু তো অবশ্যই হব।
কবিতা লিখে হব মধুসূদন
নয়তো মধুকে ছাপিয়ে হব ইতিহাস।
আমি একটু বেশিই বোধহয় অন্যরকম
চারদিকে হয়ে যায় যখন এতকিছু, তখন আমি..
আমি শুধু নির্বিষভাবে বসে থাকি।
তারুণ্যের দীপ্ততা আমায় স্পর্শ করেনা,
সময়ের গতি আমাকে স্তব্ধ করেনা
এমনকি নারীর হাসিও পারেনা সামান্যতম মুগ্ধতা ছড়াতে।
তবুও ভাবি কিছু একটা হবই
হওয়ার তো আর শেষ নেই।
কৈশোরের মুহূর্তগুলো কেটে যায়
এগিয়ে আসতে থাকে সময়
ঘোলাটে হয়ে আসে সবকিছু
কিন্তু আমার কিছুই হয়না
আমি কি আমার কল্পনাকে আনতে পারবো বাস্তবতায়?
দিন যায়, ঘনিয়ে আসে আঁধার.........তারাপর?
সম্ভবত তার আর কোন পর নেই।।

১৫.অতৃপ্ত পৃথিবী
জীর্ণ-শীর্ণ পৃথিবীর বুকে সর্বত্রই আজ দুখ
দুঃখের ভীড়ে মিলিয়ে গেছে জীবনের যত সুখ।
বিশ্বাস নামের শব্দটি আজ তিন আক্ষরেই বাধা
ধোকাবাজি আর প্রতারণা তাই একইসূত্রে গাথা।
কারিগরের চেয়ে নিন্দুক বেশি, শ্রোতার চেয়ে নেতা
মানুষগুলো বন্দীপাখি, নয়কো স্বাধীনচেতা।
বাপের চেয়েও বড় টাকা, মা-ভাই সবই টাকা
টাকা থাকলেই বন্ধু অনেক, না থাকলেই ফাকা।
অন্যায় আর অনাচার আছে বাতাসের সাথে মিশে
একটাই শুধু প্রশ্ন মনে_"সমাধান হবে কিসে?"
নিত্যনতুন করছে মানুষ মানুষ ধরার ফন্দি
বিবেক চির ঘুমিয়ে গেছে, জীবনটা তাই বন্দী।
মিথ্যে জীবন, মিথ্যে বাঁচা, মিথ্যে সকল আশা
এ পৃথিবীর সবখানেতে তাই ঘুণেরা বেধেছে বাসা।

১৬.পাপী
শুন হে বন্ধু, শুন হে মানুষ, শুনে রাখ সব আদম
কম বেশি মোরা সবাই পাপী, এ আমার চির কসম।
মোদের পাপে সুন্দর ধরা হয়ে উঠেছে নরক
দেহের মাঝে কলুষিত মন, উপরে রঙিন মোড়ক।
পাপ করেছে আদ-হাওয়া_ খেয়ে গন্ধব ফল
তাদের থেকেই আজ জগতে নেমেছে পাপের ঢল।
জগৎজুড়ে পাপের হাওয়া, নেই কোথাও পূণ্য
যে যত বড় পাপী সে-ই তত ধন্য!
ইচ্ছায় করি-অনীহায় করি-করি মনের ভুলে
পাপের ফসিল জীবিত হয়ে ঘুরে বিশ্বজুড়ে।
মায়ের পাপে সন্তান দোষী পুরো সমাজের চোখে
সমাজপতিই আসল পাপী, তবুও আছে সুখে।
মনের কাছে পাপী মোরা, পাপী সকল কাজে
তবুও যেন পাপী ধরণীতে রয়েছি সাধুর সাজে।...........

টাইপ করতে গিয়ে হাসি থামিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।।। বেচারা ছন্দ মেলানোর জন্য কিশোরমনের কি যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ক্রিয়েটিভ কাজের ধরনটাই বোধহয় এমন_ পুরনো দিনের কর্ম দেখলে সেগুলোর অপরিপক্কতা হাসির খোরাক যোগায়। তাইতো ব্লগে এখন যেসব লেখা দেই, ৫বছর পর হয়ত এগুলো পড়েই এখনকার চেয়েও বেশি হাসবো।।। এভাবে জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ত সারাজীবের কর্ম দেখেই হাসি চলে আসবে। মিল্টন কি সেজন্যই শেষের দিকে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রানজ কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন সকল পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলতে, এমনকি রবিঠাকুর স্বয়ং কবিতা লেখার চেয়ে চিত্রকলাতেই যে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তার নেপথ্য কারণও কি এই পুরনো লেখাগুলোকে হাস্যকর লাগা??? সৃজনশীলতার ধর্মই কি এমন???
ঘোড়ারোগের সময়টাতে আরও একটা রোগ ছিল সব লেখা কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করা। একটা সময় চলে আসল যখন পরিচিত একজন মানুষও বাদ ছিলনা যাকে একাধিক কবিতা উৎসর্গ করা হয়নি।।।
ও হো, আসল কথাই তো বলা হয়নি সে সময় আমি বাংলা-ইংরেজি কবিতা লিখতাম
John F. Harton নামে। ধরতে পারেন এই কবিতাগুলো (!!)John F. Harton এরই লেখা!!! .........(চলবে).........


১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×