somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কৈশোরে কাব্যের ঘোড়ারোগ পর্ব-৩

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। যে কয়দিন হলে আছি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্লগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কি হতে পারে আমার মত 'পঞ্জম প্রজাতির গর্দভ ব্লগারের কাছে। অতএব জয় বাবা ব্লগনাথ!
গতকাল ব্লগার ফারিহান মাহমুদের একটি পোষ্ট পড়ে কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ছড়া-গল্প লিখি ক্লাস থ্রি থেকে, তবে তা একেবারে বিপদজনক চরম আকার ধারণ করে নাইন-টেনে পড়ার সময়, এবং সেটা এতটাই যে টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত গণিত+উচ্চতরগণিতে লেটারমার্ক পাই তো না-ই বরং নম্বরগুলো ছিল সেইরকম: ৫৪ এবং ৪৭!
আপাতত কোন কাজ যেহেতু নেই, তাই আমার পুরনো ডায়েরী ঘেটে সেই সময়কার লেখা শিশুতোষ কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সামান্য শখ হয়েছে। এই শখের সৌজন্যে হলেও এতদিনপর সেই পুরনো ডায়েরীটা নতুন করে খুললাম। এখানকার বেশিরভাগ কবিতাই ক্লাস সেভেন-ক্লাস টেন এর মধ্যবর্তী সমযকালে লেখা।।।। আরও আগের লেখাগুলো এই মুহূর্তে হলে নেই। ছুটিতে বাসায় গেলে খুজতে হবে।
শ্রদ্ধেয় যতিন সরকারের একটি বইয়ে পড়েছিলাম " ম্যালেরিয়া এবং কাব্যরোগ বাঙালি জীবনে অনিবার্য। ম্যালেরিয়া হতে যদিওবা রেহাই পাওয়া যায়, কাব্যরোগ থেকে নিষ্কৃতির আশা দুরস্থান!"- আপনাদের দোয়ায় ম্যালেরিয়া তো শৈশবে হয়েছেই, কাব্যরোগটাও এমন বাড়াবাড়ি রকম হয়েছিল যে সেটা ঘোড়ারোগে রূপ নিয়েছিল। সেই ঘোড়ারোগের দৃণ্টান্তগুলো ব্লগে প্রকাশ করতে চাইছি। এবং সম্পূর্ণ ধারাবাহিকটি উৎসর্গ করছি শ্রদ্ধেয় ব্লগার ফারিহান মাহমুদকে

৯.কবি
নজরুল-রবি যা দিয়েছেন তা নিয়েই থাক পড়ে
আমি অধম লিখে যাই শুধু নিজের মনের রোঢ়ে।
জন্ম বড় ভুল সময়ে বুঝলো না কেউ মর্ম
হেনকালেও আমি করেছি শুধু বিচিত্র সব কর্ম
আমি তাই শুধি ভাবি
আমি যেন কোন ভুলগ্রহে আসা স্বঘোষিত এক কবি।
লোকে মোরে নিন্দায়ে বলে "হতচ্ছারা ওরে"
নিজেরে তুই কবি ভাবিস বলতো কিসের জোরে?
তোর কি কোন তাল_লয় আছে, আছে কি ভাষাজ্ঞান
মিছেমিছি ব্যাটা কেনরে করিস কবিতা নিয়ে ধ্যান?
কবিতা কি তোর মুখের বুলি লিখবি মর্জিমত
নিত্যদিনই তোর মত কবি দেখছি শত শত।
আমি তাই শুধু হাসি
এদেশে কি করে উঠবে বল আঁধারের শেষে শশী।
লিখেছেন রবি-লিখেছেন কাজী-লিখেছেন সুকান্ত
কেউ না জানুক আমি তো জানি আমার কি দৌরাত্ম
আমি আজেবাজে লিখে খাতা করি শেষ_
কলম ভেঙ্গে ফেলি
আমি আজ তাই অসহায়ভাবে সমালোচনা শুনে
কিছু রেখে দেই.,বাকিসব মনে পুরি।
ভাবুক সেজে লাভ কি বল সকলেই ছিছি করে
সকলের তরে ফুকারি আমি ; কেউ নয় মোর তরে।
কবিতা আমায় দেয়নি কিছুই, তবুও আমি কবি
কবিতার মাঝে অবিরাম খুজি নিজের মনের ছবি।
কবিতার চেয়ে কবি বেশি আজ চেয়ে দেখ চারিধারে
ওদের ভীড়েই কবিতাগুলো হারায় চিরতরে।
আমি তাই শুধু দেখে যাই
বলার ছিল অনেক কিছুই; শোনার কেহই নাই।
তবুও আমি কবি
মোর কথা শুনে হেসে খুন হবে স্বর্গ থেকে রবি।

১০. বন্ধুভাবনা
ও চাঁদ, তুমি মোর বন্ধু হও
তোমার ঐ দীপ্তিময়তার পরশে কর সুশোভিত
মুছে দাও মনের সকল জরা-জীর্ণতা
খুলে দাও মুক্তপ্রাণের দুয়ার।
হে বহমান নদী, বন্ধু হয়ে আমায়
তোমার ঐ নিরন্তর গতিময়তা দাও
দূর কর সব আবর্জনা, দূরে বহূরে
জীবনকে কর একাগ্রতায় ভরপুর।
হে উড়ন্ত পাখি, তুমি মোর বন্ধু হও
জীবনের এ দাসত্ব থেকে আমায় মুক্ত কর
এনে দাও তোমার অবাধ স্বাধীনতা।
হে পীপিলিকা, তোমার শৃঙ্খলা
ছড়িয়ে দাও পুরো দেশজুড়ে
যে দেশে জেকে বসেছে অলসতা।
হে কোকিল বন্ধু, তোমার সুরেলা কণ্ঠে
ধ্বনিত কর সাম্যের সুর
গেয়ে উঠো মানবতার গান।
হে ঝড়, তোমার ঐ দুরন্তবেগ দিয়ে
উড়িয়ে নাও দেশের দারিদ্র্
সিয়ে এসো সমৃদ্ধির হাওয়া।
হে বিচিত্র প্রকৃতি, ফিরো এবার এদিক
বন্ধু হয়েই পাল্টে দাও পুরো অবয়ব।

১১. আত্মলিপি
কে তুমি ডেকেছো বন্ধু জানিনা কোন কারণে
আমি শুধুই ব্রহ্মচারী তোমাদের অরণ্যে।
বিশ্বাস আর অবিশ্বাস পাশাপাশি সদা চলে
এক নিমেষের ভুলের তরে যায়গো হৃদয় জ্বলে।
আমি ধরিনাকো কারো পাণি
যা ভেবেছো সবই তোমার ব্যর্থ সম্মোহনী।
আমি এক মরীচিকা
অদ্যবধি পাইনি খুজে নিজের সীমারেখা।
বেদনার মেঘে ঢাকা পড়ে থাকে আমার মনের আকাশ
তাইতো কভু করতে পারিনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ।
গুণী বলে কেন করেছো বৃথাই গুণের অমর্যাদা
আমার মাঝে যা দেখেছো সবই গেলকধাধা।
মন নিয়ে আমি ছিনিমনি খেলি জান নাকো সে খবর
বুকের ভেতর দিয়েছি সকল মানবীয়তার কবর।
মন বাগীচার হাসনা হেনায় ফুটেনাক আর কলি
বৃথাই কেন পাঠাও সেথায় তোমারও বুলবুলি।
ফিরিয়ে নিয়ে জীবনের তনরে কৃতার্থ কর মোরে
নিশাচর আমি রয়ে যেতে চাই সকলের অগোচরে।
হল সবই অবসান
তোমার-আমার মনের মাঝে বিস্তর ব্যবধান।।।

১২.পাণ্ডুলিপি
সময়ের কলম, আর দুঃখের কালি
এই দিয়ে রচেছি জীবন পাণ্ডুলিপি।
জীবন সাদামাটা
সঙ্গীসাথী প্রহেলিকা সবই, আসলে সবাই একা।
যত বাড়ে দিন, বাড়ে পরিসর লেখার ক্রমধারায়
পাণ্ডুলিপি লিখে যাই তবু নিঝুম মনের ছায়ায়।
এ লেখায় আছে অবাধ স্বাধীনতা
যত কোলাচল, তত অবিচল, বেড়ে চলে অধীরতা।
এমনিভাবেই বাড়তে থাকে লিপির পরিসর
পাঠক সময়, লেখক আমি; বাকি সব নির্ঝর।
এ লিপিতে নেই কোন শিল্পজ্ঞান
মৃতজীবনের গল্প নিয়ে এ এক উপাখ্যান।
নয়কো শুধুই বিচিত্রতার একটি পাণ্ডুলিপি
কালের স্রোতে জীবন তটে শতশত প্রতিলিপি।
জীবনের যত ব্যথা, যত শোক
প্রতিনিয়তই বাড়িয়ে চলে লিপির উপযোগ।
জীবন বর্ণময়
বর্ণময়ের অন্তরালে লিপির পরিচয়।
একমুঠো স্বপ্ন পাণ্ডুলিপির প্রচ্ছদ
এ লিপিটা ছাপবে সময়, পড়বে ভবিষ্যৎ
শত বিরহ-বেদনায় রচিত হয়েছে আমার পাণ্ডুলিপি
পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায় লুকিয়ে থাকি আমি।।।

.............টাইপ করতে গিয়ে হাসি থামিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।।। বেচারা ছন্দ মেলানোর জন্য কিশোরমনের কি যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ক্রিয়েটিভ কাজের ধরনটাই বোধহয় এমন_ পুরনো দিনের কর্ম দেখলে সেগুলোর অপরিপক্কতা হাসির খোরাক যোগায়। তাইতো ব্লগে এখন যেসব লেখা দেই, ৫বছর পর হয়ত এগুলো পড়েই এখনকার চেয়েও বেশি হাসবো।।। এভাবে জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ত সারাজীবের কর্ম দেখেই হাসি চলে আসবে। মিল্টন কি সেজন্যই শেষের দিকে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রানজ কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন সকল পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলতে, এমনকি রবিঠাকুর স্বয়ং কবিতা লেখার চেয়ে চিত্রকলাতেই যে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তার নেপথ্য কারণও কি এই পুরনো লেখাগুলোকে হাস্যকর লাগা??? সৃজনশীলতার ধর্মই কি এমন???
ঘোড়ারোগের সময়টাতে আরও একটা রোগ ছিল সব লেখা কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করা। একটা সময় চলে আসল যখন পরিচিত একজন মানুষও বাদ ছিলনা যাকে একাধিক কবিতা উৎসর্গ করা হয়নি।।।
ও হো, আসল কথাই তো বলা হয়নি সে সময় আমি বাংলা-ইংরেজি কবিতা লিখতাম
John F. Harton নামে। ভরতে পারেন এই কবিতাগুলো (!!)John F. Harton এরই লেখা!!! .........(চলবে).........

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×