somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঞ্জীব দা কে নিয়ে লেখা....

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের প্রিয় সঞ্জীব দা যেদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন তার কয়েকদিন পর এক পুলিশ অফিসার লেখাটি আমার ঠিকানায় পাঠিয়েছেন। লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছিল এটি চিঠিপত্র বিভাগে ছাপা হতে পারে। তাই এডিটরিয়াল ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেই। মাসখানেক পর এডিটরিয়াল ইনচার্জ জানালেন, মানহীন লেখা তাই বাদ দিতে হলো। নিন লেখাটা আপনার কাছে রেখে দিন। আমি এটা স্বযত্নে রেখে দিয়েছিলাম আজ ব্লগে পোষ্ট করার জন্য। লেখক লেখাটির শিরোনাম দিয়েছেন এক কাপ চা


দূরের স্ট্রীট লাইটের আলোয় দ্রæত পায়ে এগিয়ে চলা ব্যক্তিটিকে ছায়ার মতো মনে হচ্ছে। ছায়াটাকে পরিচিত মনে হওয়ায় এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। এক পা, দু’পা করে যখন চলমান ছায়াটা কাছে আসে, তখন বুঝতে পারলাম আমার অনুমান ভুল নয়। হ্যাঁ, তিনি সঞ্জীব দা। উনাকে কেমন জানি ইত¯Íত মনে হচ্ছে। এলোমেলো চুল। দু’চোখে রাজ্যের ভয়। ডান হাত দিয়ে চেপে রেখেছেন বাম হাতের উপরের অংশ। মাঝে মধ্যে আলতোভাবে ম্যাসেজ করছেন। বাংলামটর মোড়ের দোকানগুলোর ঝলমলে আলোর কাছে আসতেই দাদার কাছে এগিয়ে সালাম দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম - ‘কেমন আছেন’? তিনি হকচকিয়ে উঠলেন। যেন কোনো শংকিত সাধকের ধ্যান ভাঙলো। কপালের রেখা বলে দিচ্ছে তিনি এই নগন্য পুলিশ অফিসারকে চেনেন না।

ভোরের কাগজের পাঠক ফোরাম যখন হৃদয়ের মধ্যমনিতে তখন প্রায়ই হৃদয়ের টানে (সঞ্জীব দা’র ভাষায় - নাড়ির টানে!) সেই ময়মনসিংহ থেকে চলে আসতাম বাংলামোটর, ভোরের কাগজ অফিসে। সেখানকার গল্প বা আড্ডার মধ্যমনি ছিলেন ঝাকড়া চুলের একজন মানুষ। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দিতেন লেখালেখির অমূল্য টিপস যা উঠতি লেখকদের ভীষন কাজে আসতো। মাঝে মধ্যে টেবিলটাকে তবলা বানিয়ে দরাজ গলায় গেয়ে উঠতেন তিনি। আহা, কি জাদু মাখা কণ্ঠ। বন্ধুর কাছে তার পরিচয় জানতে পারি। তিনি সঞ্জীব চৌধুরী। পত্রিকার সঙ্গে পাঠকদের সম্পৃক্ত করা যায়, পত্রিকার পাতায় পাঠকদের প্রতিভাকে বের করে আনা - এগুলো তারই মস্তিষ্ক প্রসুত আইডিয়া। তার হাতের ছোয়ায় ভোরের কাগজের ‘মেলা’ পাতার ফিচারগুলো পেয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। তুখোড় মেধাবী এ মানুষটি প্রিন্ট মিডিয়াকে ভালোবেসে অনেক লাভজনক চাকরির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন।

তারপর কিছুদিনের গ্যাপ। পড়ালেখার ব্যস্ততার কারনে খুব একটা ঢাকামুখো হইনি। এসময় একদিন বিটিভির ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে তার সেই বিখ্যাত গানটি প্রচারিত হয়। গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে.....। গায়ক সঞ্জীব দা-কে দেখে আমি আপ্লুত হই। মনে হয়েছে টিভি পর্দায় যেন আমার খুব কাছের একজন মানুষকে দেখছি। পরবর্তীতে তার দলছুট ব্যান্ড গঠন, যায়যায়দিনে যোগদান- সবই শুনেছি দূর থেকে। আজ এভাবে সঞ্জীব দা কে পেয়ে যাবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। দিনক্ষন মনে নেই। তবে সময়টা ২০০৭ এর জুলাইয়ের কোনো একদিনের ঘটনা।

দাদা, আমাকে আপনি হয়তো চিনবেন না। আমি একসময় ভোরের কাগজ পাঠক ফোরামে যুক্ত ছিলাম। আপনার সম্পাদিত ‘মেলা’ পাতাতেও লিখেছি। ইদানিং আপনার গান শুনে মুগ্ধ হই। আমি আপনাকে চিনি। আমার কথা শেষ হলে তিনি তার মোবাইল ফোন, টাকা- পয়সা সব ছিনতাই হবার কথা জানান। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তধস্তিতে বাম হাতের কনুইয়ের দিকে কিছুটা কেটে গেছে। আমাকে কেটে যাওয়া জায়গাটা দেখাতে যেয়ে ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠেন। এ অবস্থায় রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে একটা টোল এনে তাকে বসতে দিই। আমি মোটর সাইকেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে ছিনতাইকৃত স্থানে যেতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, এতোক্ষনে হয়তো ওরা কেটে পড়েছে। পরক্ষনে অবুঝ শিশুর মতো বলে উঠেন, আমিও সহজে ছাড়িনি। ওরা সংখ্যায় চার- পাচজন না হলে দেখিয়ে দিতাম।
- চলুন আপনাকে বাসায় পৌছে দিই।
- না, না আপনি ডিউটি করছেন।
- সবেমাত্র আমার ডিউটি শেষ হয়েছে। পরের শিফটের লোক এসে গেছে। এখন আমার বিদায়ের পালা।
-ঠিক আছে। তবুও আপনাদের ডিউটি যে কতো পরিশ্রমের তা বুঝি। আপনি বরং আমাকে একটা সিএনজি ঠিক করে দিন।
সঞ্জীব দা’র চোখগুলোতে শংকার ছাপ দেখে আমি বলি, এতো রাতে অটোরিক্সা বা ট্যাক্সি ক্যাব পাওয়া বেশ কঠিন।

অনেক বলার পর শেষ পর্যন্ত আমার মোটরবাইকে চড়ে বাসায় যেতে রাজি হন। বাসায় কলিংবেল বাজতেই ওপর তলা থেকে দাদার একমাত্র মেয়ে কিংবদন্তীকে কোলে নিয়ে বৌদি দরজা খুলে দেন। দাদাকে দেখে উৎকন্ঠিত কন্ঠে দাদার মোবাইল ফোন বন্ধের কারণ জানতে চান। দাদা তার কাছে সব ঘটনার বিবরণ বলতে থাকেন।

বৌদি আমাকে চা খাওয়ার জন্য ভেতরে যেতে বলেন। সঞ্জীব দা ও চা খাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করেন।
- দাদা বাসাতো চিনে গেলাম। অন্য সময় এসে খেয়ে যাব। এখন চা খেলে আমার রাতের খাবারে অরুচি চলে আসবে। বলেই বিদায় নিই।

এর দু’দিন পর সঞ্জীব দা ফোন করে আবারও চায়ের কথা মনে করিয়ে দেন। আমার কাজের ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়নি।

পত্রিকা পড়ে জেনেছি তিনি বেচে নেই। আজই চলে গেছেন দিগন্তের ওপারে। এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন তো হবার কথা ছিল না !
সঞ্জীব দা, আমাদের কাদিয়ে এভাবে চলে যেতে পারলেন?
আপনার নতুন গান আর কোনদিন শুনতে পারবো না ভাবলে এতো বিমর্ষ লাগে কেন?
আমাকে এক কাপ চা পাওনা রেখে আপনি এভাবে চলে যেতে পারলেন?

ওমর ফারুক দোলা
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×