রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দেশগুলোর জোট জি-২০ সম্মেলনের শেষ দিনে সিরিয়ায় অভিযান চালানো নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠলেও পরিকল্পনায় অটল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
Published : 06 Sep 2013, 05:09 PM
সম্মেলনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে সিরিয়ায় শাস্তিমূলক অভিযান চালানোর পক্ষে মত দিয়েছে কিছু দেশ। আর কিছু দেশ মত দিয়েছে এর বিপক্ষে।
সম্মেলনের শুরুর দিন থেকেই বিশ্ব নেতাদের অনেকে সিরিয়ায় অভিযান না চালানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ওপর।
কিন্তু সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং চাপ ঠেলে সিরিয়ায় হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ওবামা এখনো অটল।
হামলার পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও থেমে নেই তার। নানা যুক্তিতে তিনি রাসায়নিক অস্ত্র হামলার জন্য সিরিয়াকে জবাব দেয়ার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছেন নেতাদেরকে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেতা জানান, বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের সম্মেলন শেষে নৈশভোজেই সিরিয়ার বিষয়টি নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ থাকলেও সিরিয়া সঙ্কট নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বেশি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এর মুখপাত্র সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান পরিকল্পনার বিরোধিতা করে বলেছেন, তাদের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের কফিনে আরেকটি পেরেক ঠুকার মতোই ব্যাপার।
চীনও হামলার বিপক্ষে মত দিয়েছে এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন সিরিয়ায় হামলার পদক্ষেপ ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ওদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, রাশিয়া বারবার সিরিয়া বিষয়ক প্রস্তাবনা আটকে দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জিম্মি করে রেখেছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের কারণে সিরিয়াকে জবাবদিহি করানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এখন আর ‘জুতসই কোনো পথ নয়’।
রাশিয়ার ভেটোর কারণে সিরিয়ায় সামরিক হামলায় নিরাপত্তা পরিষদের সায় না পেয়ে ওবামা এখন মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
গত ২১ অগাস্ট সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকন্ঠে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনীর বিষাক্ত গ্যাস হামলায় ১ হাজার ৪২৯ জন নিহত হয়েছে বলে মার্কিন সরকার অভিযোগ করেছে।
এ হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট আসাদ ও বিদ্রোহীরা একে অপরকে দায়ী করে আসছে।
যুক্তরাজ্যও জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রিহীত নমুনা পরীক্ষায় সেখানে সারিন গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পুতিনের প্রেস মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বৃহস্পতিবার নৈশভোজের সময়ই দেখা যায় নেতাদের কেউ কেউ সিরিয়ায় দ্রুত সামরিক হামলার পক্ষে। আবার কেউ চান যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের অনুমতি নিয়ে হামলা চালাক।
ব্রিটিশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ফ্রান্স, তুরস্ক, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে জোরাল সমর্থন দিয়েছে।
কিন্তু পিটার্সবার্গের সংবাদদাতারা বলছেন, জি-২০ তে সিরিয়ায় হামলার সমর্থকদের চেয়ে বিরোধিতাকারীদের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু এ বিরোধিতার মধ্যেও ওবামা তার পরিকল্পনায় অটল থেকে সম্মেলনের নেতাদেরকে
আরেকবার জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভূমিকার ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য আছে।
আর সেকারণে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিধি সমুন্নত রাখাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে সম্মেলনে নেতাদেরকে জানান তিনি।