somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি মহিলা মাদ্রাসার অন্দরে....(৬)

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছাত্রী-শিক্ষক/শিক্ষিকা সম্পর্ক:

শিক্ষকদের সাথে ক্লাস আওয়ার ব্যতিত বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া ছাত্রীদের কথা সাধরনত হয়না। সবকিছুই শিক্ষিকাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। প্রতিটি রুমে একজন করে শিক্ষিকা থাকেন। রুম বড় হলে ২-৩ জন। সব কিছু এরাই দেখা শোনা করেন।

এদের মধ্যে প্রধান হলেন বড় আপা/ খালাম্মা। এই বড় আপা/খালম্মা কখনও মাদ্রাসার মধ্যেই কোন আলাদা এপার্টমেন্ট এ থাকেন অথবা মাদ্রাসার বাইরে নিজের বাড়িতে থাকেন। বাইরে থাকলে সকালে আসেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে চলে যান।

বড় আপা/খালম্মা হচ্ছেন বড়(প্রিন্সিপাল) হুজুরের বউ। ভেতরকার সব খবর আদান-প্রদান এই বড় খালাম্মা/ আপার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। বড় আপা/ খালম্মা যেহেতু ভেতরের বস তাই তার কিছু চাটুকার থাকাটা স্বাভাবিক ব্যপার। মানে ডান হাত আর বাম হাত থাকে ২-১ টা। সেই কথায় পরে আসছি।

মেয়েদেরকে বেশীর ভাগ মাদ্রাসাটেই “তুই” বলে সন্ম্বোধন করা হয়। তবে পরিস্থতি ভেদে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন ধরেন বড় হজুরের মেয়ে বা শালীদের কে সাধরনত তুই বলবেনা কেউ অথাবা বিশাল ধনীর মেয়ে যার বাবা মাদ্রসায় ডোনেট করে থাকে অথবা বড় কোন কাজে আসে। সে কথায় পরে আসছি।

ছোট ছোট বাচ্চাগুলো কে অসচেতন বাবা-মা গুলো দিয়ে যায় মক্তব থেকে পড়তে। মক্তব মানে হচ্ছে যেখানে শুধু কায়দা পড়ানো হয়। প্লে গ্রুপ বলতে পারেন কিন্তু খেলা-ধুলার কোন ব্যবস্থা বা অবস্থা নেই। এই বাচ্চাগুলোর সাথে বাজে ধরনের ব্যব হার করা হয়। সুন্দর ভাষায় কথা বলা কোন হাদিসে নিষেধ দেখিনি।

এদের কে ফজর এর সময় উঠানো হয় নামাজ পড়ানোর জন্য যদিও এদের প্রতি নামাজ ফরয হওয়ার অনেক সময় বাকি আছে। (বলা হয় ছোট বেলা থেকে অভ্যেস করানো হচ্ছে। পিচ্চি গুলো পায়জামা,জামা আর ওড়না পরে জুবুথুবু হয়ে থাকে। যে সময় খেলা-ধুলা করার বয়স সে সময় এরা এরকম বন্ধ পরিবেশে থেকে বড় হয়। যখন ছুটির শেষে বাবা মা দিয়ে যায় মাদ্রাসায় তখন এদের চিৎকার করে কান্না দেখলে যে কারো কষ্ট লাগবে।বাবা -মা গুলো সত্যিই অসচেতন।

ফজরের সময় যে শিক্ষিকা যে রুমের দায়িত্বে সে সেই রুমের মেয়েদেরকে উঠাবে নামাজের জন্য। এবং এ জন্য বেত ও ব্য ব হার করে থাকে এরা। ঘুমন্ত ছাত্রীর পাশে দাড়ায় থেকে বেত দিয়ে হালকা করে বাড়ি মারে। নামাজ পড়ে কোরআন শরিফ পড়তে হবে। এর পর আর ঘুমানো যাবেনা।

এই সময়টা হলো দুঃস হ। নামাজ -কোরআন পড়ার পর কিযে একটা ঘুম যে আসে! তখনও ক্লাসের টাইম হয়না তারপরও ঘুমানো নিষেধ। চোখ মেলে রাখা যায়না। এক মেয়ে আরেক মেয়েকে জাগিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে কখনও। টিচার আসতে থেকলে তাকে জাগিয়ে দেয় জাগ্রতজন।

এরপর সাকলের খাবার খেয়ে ক্লাস রুমের জন্য যায়গা পরিস্কার করা হয়। শিক্ষরা পর্দার আড়াল থেকে ক্লাস নেয়। শিক্ষিকারা ভেতরে বেসেই ক্লাস নেন। বড় ক্লাসের কিতাব গুলো সাধরনত শিক্ষকরাই পড়িয়ে থাকেন। কিছু কিছু হজুর কোন কোন ছাত্রীকে মা , বোন বা খালাম্মাও বানিয়ে ফেলে।
আমাদের এক হুজুর ছিলেন যিনি এক ছাত্রীকে মা আরেক জন কে মেয়ে বলে ডাকতেন। বেশ কিছু দিন পর সে বিয়ের জন্য মিয়ে খুজছেন। একেবারে না পেয়ে শেষে তার সেই পাতানো মা-মেয়েকেও প্রোপোজ করেছেন।
তবে সবাই এরকম না। সত্যিকারের শ্রদ্ধা পাওয়ার মত অনেক শিক্ষক ছিলেন-আছেন আমাদের। যাদের কথা মনে পড়লে এখনও শ্রদ্ধা জাগে মনে।

যেহেতু বড় খালাম্মা/ আপারা ভেতরের দায়িত্বের বস সেহেতু তাদের কিছু ডান-বাম হাত থাকা স্বাভাবিক। কাউকে কাউকে চাটুকারও বলা যায়। এরা সাধরনত ছোট ক্লাসের শিক্ষিকা। মক্তব বা প্রথম শ্রেনীর কোরআন তাজবিদ পড়ান। কিন্তু পরবর্তিতে এরা ভাইস-প্রিন্সিপালের দায়িত্বে চলে আসেন।
এরা ব্যক্তিকগত ভাবে যাদের পছন্দ না করেননা তাদের ব্যপারে নেতিবাচক কথা বলেন বড় খালাম্মা/ আপাদের। আবার বড় খালাম্মা/ আপা যাদের ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না করেন তাদের নামে বেশী বেশী বলে থাকেন। তবে এ ব্যপারটা অবশ্যই বড় খালাম্মা/ আপা মানুষ হিসেবে কেমন তার উপর নির্ভর করে। কওমি মাদ্রাসা বলে কোন কথা না।

তাই আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এমন বড় খালাম্মা/ আপার কথা। আমার বড় খালাম্মা/ আপার একজন চাটুকার ছিলো। যার উপরে তার চোখ পরতো তার বারোটা বেজে যেতো। সেই বড় খালাম্মা/ আপা যাদেরকে পছন্দ করতোনা তাদের সব কাজ কর্ম মনিটর করা হতো। এবং যে কোন ছোট কারনে তাদেরকে পাকড়াও করা হতো এবং সুযোগ মত প্রিন্সিপাল কে জানানো হতো।
প্রিন্সিপালকে জানাতেন অবশ্যই তার বউ নিজের মতো করে ঘটনা বানিয়ে। এরপর সেই ব্লাক লিস্টেড মেয়েগুলো কে শাস্তি দেয়া হত। কেউ সত্য কথা বলার খুব একটা সাহস পেতোনা, কারন আবার এ কথা বড় আপা/খালাম্মার কানে গেলে জান হালুয়া।

ওস্তাদের সেবা:

ওস্তাদের সেবা নামে কওমি মহলে একটা টার্ম আছে। ওস্তাদের সেবা না করলে এলেম পূর্ণ হবেনা। ছেলে কওমি মাদ্রাসায় এই ব্যপার বেশী দেখা যায়। ওস্তাদের সেবা বলতে ঠিক মত পরা তৈরী করা, তার কথা আমল করার পাশাপাশী তার কাপড় ধুয়ে দেয়া, খাবার এনে দেওয়া, চুল আচড়ে দেয়াও দেখা যায়।

সেবার সুবাধে শিক্ষিরা নিজেদের জামা বা ওড়নায় হাতের কাজও করিয়ে থাকে ছাত্রীদের দিয়ে। শিক্ষিকার খাবার এনে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একজন মেয়ে থাকে। যে খাবার তুলে শিক্ষিকার যায়গার পাশে রেখে দিবে। বিকেলে তার চুল আচড়ে দেয়া থেকে ওকুন মারাও ছাত্রীরা কোরে থাকে। জুতা এগিয়ে দেয়া কাপর ধুয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ওস্তাদের সেবা করা হয়।

কিছু কিছু হুজুরও তাদের কাপর চোপর দিতেন মেয়েদের কাছে ( কিছু কিছু মাদ্রাসায় এটা এখন নিষেধ। হুজুর এবং মেয়েদের মধ্যে অতিরিক্ত সখ্যতা গড়ে উঠায় ) কোন কোন মেয়ে আনন্দের সাথে এসব কাজ করে কেউ কেউ বিরক্তির সাথে।

আর যদি বড় আপা/খালাম্মা মাদ্রাসাতেই থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। তার থালা-বাসন থেকে শুরু করে তার ছোট ছেলে-মেয়ের কাজ কর্মও ছাত্রীরা করে থাকে। কেউ কেউ বড় আপা খুশী হলে বর হজুর খুশী, হোয়াইট লিষ্টে নাম থাকবে, অন্য স্টুডেন্টারা সমীহ করবে বড় আপা/খালাম্মার কাছা কাছি বলে সেই জন্য এসব করে থাকে। কেউ কেউ পুরপুরি উস্তাদ এর সেবা করছে এই নিয়তে।

এসব বড় খালাম্মা /আপারা মেয়ে গুলো খাটায় যখন ইচ্ছা তখন, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে। কেউ বলার কিছু নাই। এসব মেয়েদের বাবা-মারাও তেল মারে যাতে মেয়ের উপর শুভ দৃষ্টি থাকে। মেয়েকে দেখতে আসলে বড় কগালাম্মা/আপার জন্য এটা সেটা নিয়ে আসে। যারা এসব বড় খালাম্মা/ আপাদের চোখে ভালো তাদের দিয়ে অন্যদের উপর চোখ রাখানো হয়। সময় মত রিপোর্ট চলে যায়। আমি আবারো বলছি মানুষ ভেদে এমন হয়। সব বড় খালাম্মা /আপা এক রকম না। তবে ওস্তাদের সেবার ব্যপারে সব খালাম্মা /আপারাই একমত।

চলবে……………..
১৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×