somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরে কানের কাছে মুখটি নিয়ে একটি কথাই বললো তাকে বিদায় করো না হলে তোমার সর্বনাশ হবে!!! (১)

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কণা..কণা, আমার দুধটা এখনো দিসনি কেন?

ভাইজান, দুধ তো সব বিড়াল খেয়ে ফেলেছে। কি বলসিছ এসব? প্রতিদিন তোর মুখে একই কথা শুনছি। তুই দুধটুকুও ঠিক মতো রাখতে পারিস না? আমি তো ঠিকভাবেই রাখি ভাইজান। কিন্তু মরার বিড়াল তো দুধটাকে ঠিক রাখে না। খেয়ে ফেলে। ঠিক আছে, আজ বুঝলাম কাল থেকে যেন আর এ কথা না শুনি। হঁ্যা। ঠিক আছে ভাইজান।

একেকজন মানুষের নেশা একেক রকম। কেউ সময় মতো সিগারেট খেতে না পেলে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। কেউ বা খায় চা কেউ পান। কেউ বোতল.. ..ইত্যাদি। আমার নেশা একটু অন্যরকম। প্রতিদিন সকাল ও রাতে যদি এক গ্লাস করে দুধ না খাই তাহলে আমার মাথাটা যেন ধরে থাকে। খুব খারাপ লাগে তখন। প্রতিদিন এক লিটার দুধ নিই এক গোয়ালা থেকে। কিন্তু কণা মেয়েটি এখানে আসার পর থেকে একদিনও দুধ মুখে ওঠেনি আমার। তার কথা মতো একদিনে মরার বিড়াল-টা খুব উৎপাত শুরু করে দিয়েছে নাকি! প্রতিদিনই দুধ খেয়ে ফেলে শালা!


আমি কলমজীবি মানুষ! এ প্রত্রিকায়, ওই প্রত্রিকায় লিখে থাকি এবং একুশে ফ্রেবুয়ারীর বই মেলাতে কয়েকটি প্রেমের উপন্যাস লিখে সেই আয় দিয়ে কষ্ট করে সারা বছর কোনো রকমে পেট পুরে খাই। বিএ পাশ বেকার এক যুবক। অনেক চাকরির জন্য ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত জুতার শুকতলা ক্ষয় করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি।

ছোট থেকেই বিভিন্ন প্রত্রিকায় লেখার একটু-অধুট অভ্যাস ছিল। ধীরে ধীরে এখন তা নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। মোট কথা, লেখালিখি ছাড়া আর কোন কাজই ঠিকভাবে করতে পারি না। জানি না এ লেখাগুলো পাঠকরা কিভাবে হজম করে! তবে তারা এসব অখাদ্য হজম করাতেই তো দুবেলা খেয়ে-পরে বেচে আছি।

লেখকরা একটু অন্য ধরনের মানুষ হয়। সাধারণের থেকে তাদের আনন্দ, শখ, রুচি একটু আলাদা টাইপের হয়। কেউ গাছে বাড়ি বানিয়ে সেখানে লিখতে ভালোবাসেন। কেউ বা সাগরের কাছকাছি গেলেই মগজে লেখার মাল-মশলা এসে কিলবিল করতে থাকে। আবার কেউ গাজা সেবন, বোতল টানা ছাড়া নাকি লিখতেই পারে না!

আমার ব্যাপারটি ঠিক এ রকম:

আমার মাথায় যদি কোন লেখার প্লট না আসে কি করি তখন? এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেট নিয়ে হাইওয়ে ফুটপাথ ধরে হাটাহাটি করতে থাকি। দেখতে থাকি হাজারো মানুষের জীবন যুদ্ধ। ফুটপাথে শুয়ে থাকা পঙ্গু এবং ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলি। বস্তির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলি অথবা আমার চোখে অন্য রকম লাগা কোন পথচারীর...।
এভাবেই তাদের সুখ-দুখের গল্প শুনতে মাথায় এসে ভিড় করি একাধিক গল্পের প্লট।


সেদিনও গল্পের মাল-মশলা খুজতে হাতে গোল্ডলিফ প্রেয়সীকে চুমু খেতে ভেতে পথ চলছিলাম। সেদিন আর শহরের চেচামেচি, হই-হট্রগোলের মধ্যে যেতে ইচ্ছ করলো না। তাই নদীর পাড়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে একা হেটে চলছিলাম।

জায়গাটি খুব নির্জন। মাঝে মাঝে দুই একটি ঘর দেখা যাচ্ছে। তাও বস্তির মতো। হয়তো বস্তিই বলা যায় সেগুলোকে। ওই বস্তিবাসী বোধহয় শহরের ফুটপাথে থাকার চান্স না পেয়ে এখানে চলে এসেছে।
হাটাতে হাটতে অনেক দুর চলে এসেছিলাম। অন্য কোনদিনও এতো দুর আনিনি। যেখানে অবস্থান করছিলাম এর একটু সামনে গেলেই বিরাট জঙ্গল। গাছ গাছালি, পাখির কলকাকলিতে ভরা কি সুন্দর এক পরিবেশ! সবুজ ওই প্রকৃতির সমরোহ আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ঢুকে গেলাম জঙ্গলটির ভেতর।
তখনো চুমু খেয়েই যাচ্ছিলাম আর গোল্ডলিফ প্রেয়সীকে। সূর্যের আলো সবুজ পাতায় ঝিকমিক করছিল। এতো দিন জানতামই না আমাদের কাছাকাছি এ রকম প্রাকৃতিক বন আছে।

হাটতে হাটতে জঙ্গলটার মাঝ বরাবর যেন এসে গিয়েছি! প্ররিশ্রম আর টানা হটাতে ক্লান্ত আমি একটি গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাড়ালাম।
হঠাৎ হিস হিস শব্দটি শুনতেই তড়াক করে লাফ দিয়ে সরে এলাম গাছটার কাছ থেকে। আমি তো আরেকটু হলেই এই মর্ত্য উদ্যান ছেড়ে স্বর্গ উদ্যানে পা রাখতাম! দেখলাম, কুচকুচে কালো একটা সাপ ঝুলে আছে গাছটার একটা ঢাল প্যাচিয়ে।ওই ডালটির নীচেই একটু আগে আমার অবস্থান ছিল। দরকার নেই বাবা এতো প্রকৃতি বিশারদ হয়ে। যাই, পালাই এ মৃতু্যপুরী থেকে। বলা তো যায় না, কখন ঘাড়ের ওপর কোন জন্তু লাফিয়ে পড়ে ঘড়টা মটকে দেয়।

হাটা দিলাম ফিরতি পথে। কিন্তু.. কিন্তু.. একি! অনমনে জঙ্গলের এতোটা ভেতরে চলে এসেছি যে, বেরোবার পথটাই তো হরিয়ে ফেলেছি! আমি এখন এই ভয়ংকর জঙ্গল থেকে বেরোবো কি করে?
হায় হায়! তাহলে কি এক অধম লেখকের এখানেই জঙ্গল সমাধি হবে!

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×