somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের আহমদ ছফা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহমদ ছফাএকজন বাংলাদেশী লেখক, কবি ও সমাজবিজ্ঞানী।আহমদ ছফার বাংলামোটরের চারতলার ভাড়া বাসাটি ছিল তরুণ-প্রবীণ লেখকদের আড্ডাস্থল। ঢাকার শাহবাগের আজিজ মার্কেটের দুই তলায় আড্ডা দেওয়ার জন্য ছফা একটি দোকানও ভাড়া করেছিলেন।শাহবাগের আড্ডা শেষে প্রায়ই সে আড্ডার কেউ কেউ ছফার সঙ্গে বাসা পর্যন্ত হেঁটে এগিয়ে দিতেন তাঁকে। এর নাম ছিল উত্থানপর্ব। পাশেই তিনি গরীব বাচ্চাদের একটি স্কুলও খুলেছিলেন। তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের আটাশে জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।আহমদ ছফা সমুদ্র সৈকতের ঝিনুক কুড়িয়েদের মতো, কণা কণা মুক্তা দিয়ে বাংলা সাহিত্যের শরীরে যে অলংকার দিযে গেছেন সেগুলোই তাকে অকৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখবে প্রজন্মপরাক্রমে।

এক সময় তিনি কাঁধে পাখি নিয়ে চলাফেরা করতেন।ছফা বলেন- "আমি দেখছি, সবচেয়ে খারাপ লোকেরা সবচেয়ে ভালো বায়োগ্রাফি তৈরি করে।" জীবদ্দশায় আহমদ ছফা বুদ্ধিজীবি মহলে বিশেষ আলোচিত ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেন- তোমারই স্পর্শে পান্না হলো সবুজ,রবীন্দ্রনাথ এটা গ্যেটের সেকেন্ড পার্ট থেকে চুরি করেছে।এই যে বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে, তালি দেওয়ার যে ক্ষমতা এটাই মানুষকে বড় করে। ১৯৮৬-তে জার্মান ভাষার ওপর গ্যোটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি, যে জ্ঞান তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম ফাউস্ট অনুবাদে সাহস জুগিয়েছিল।ছোটগল্প পত্রিকায় আহমদ ছফার একটি গল্পের কথা মনে আছে এখনো। এক মালিক তার একটি বিদ্রোহী কর্মচারীর হাত কেটে ফেলে। এই বর্ণনার জন্যে আহমদ ছফা একটি মাত্র বাক্য ব্যবহার করেছিলেন। শোষক ও শোষিত—আহমদ ছফার বিবেচনায় পৃথিবীর মানুষ এই দু’ভাগে বিভক্ত। ছফা শোষিতদের পক্ষে কলম ধরেছিলেন।

ছফা বেপরোয়া কথা বলতেন। আবার বাংলাদেশের ভাল লেখকদের কদর ও করতেন। গুণী মানুষদের সম্মান দিতে ছফা কখনো কুণ্ঠা বোধ করতেন না। ছফার লেখালেখির মধ্যে সাহিত্য কতোটা ফুটে ওঠে সেটা মুখ্য ছিল না। প্রধান ছিল রাষ্ট্র বাংলাদেশ,তার বিকাশ। আর স্বকীয় দর্শন। সাথে সত্য উচ্চারণের সাহস। শব্দের পর শব্দ আর বাক্যের পর বাক্য বসিয়ে অনর্থক কথার খেলায় ছফা কখনো মাতেন নি। আহমদ ছফার এই গুণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।২৯ জুলাই-০১ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথিতযশা জীবনবাদী লেখক আহমদ ছফা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৫৮ বছর। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন আহমদ ছফার জন্ম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার গাছ বাড়িয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট বিজ্ঞানে এম.এ। লেখক হিসেবেই তাঁর মূল পরিচয়।কবি জসীমউদ্‌দীনকে নিয়ে সাড়ে চার পৃষ্ঠার ছোট একটি স্মৃতিচারণ লিখেছিলেন ছফা।

হুমায়ূন আহমেদের ‘বলপয়েন্ট’ নামক স্মৃতিচারণায় জানা যায়,তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ছফার নাম সুপারিশ করেছিলেন।ছফা জানতে পেরে শাসিয়েছিলেন তাঁকে।ধমক দিতে দিতে বলেছিলেন,“হুমায়ূন আপনি আমার নামে সুপারিশ করেন!এত বড় আস্পর্ধা আপনার!” ছফা ‘লেখক শিবির পুরস্কার’ও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।পুরস্কার নেবেন কি নেবেন না সেটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।কিন্তু কাছের মানুষের সাথে রুক্ষ আচরণ করতে তাঁর বাধতো না।তবে তাঁর শিষ্য-সাগরেদদের(যেমনঃব্রাত্য রাইসু)প্রতি অনেক স্নেহশীল ছিলেন বলে জেনেছি।

দুই ভাই চার বোনের মধ্যে আহমদ ছফা ছিলেন বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান।১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে নিজের গ্রামের নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তার লেখা থেকে জানতে পারি- শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে বাংলাদেশ যুব আওয়ামী লীগ প্রসিডিয়ামের সভাপতি কেন্দ্রীয় বাকশালের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা এবং রাস্ট্রপতির বুদ্ধিবিবেচনার একমাত্র ভরসা বলে কথিত জনাব শেখ ফজলুল হক মনি স্বাধীনতার পরে একেবারে শূন্যাবস্থা থেকেই তিন তিনটি পত্রিকার জন্মদান করেছিলেন। একটি ছিল বাংলাদেশের বিচারে ইর্ষাযোগ্য মানের অধিকারী ইংরেজি দৈনিক, নাম "বাংলাদেশ টাইমস", বাংলা দৈনিকটির নাম "বাংলার বাণী" এবং চলচ্চিত্র পত্রিকাটির "সিনেমা" নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় সাব এডিটরের কাজ করতেন। শেখ মুজিবুর রহমানের তিন বছরের শাসনকালে জনাব শেখ ফজলুল হক মনির মত অনেকেই এরকম সামান্য অবস্থা থেকে অকল্পনীয় অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পেরেছেন।

আহমদ ছফা বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় বিচরণ করেছেন। আমারা তাঁর বেশির ভাগ রচনাতেই খুঁজে পাই মনীষার গাঢ়তা, সাহিত্যের সৃজনশীলতা। অসুন্দরের বিরুদ্ধে মনস্তাপ এবং সুন্দরকে ধারণের মনস্বিতা। বাংলাদেশের প্রতি-এই দেশের মানুষের প্রতি তাঁর হৃদয়ে যে মমতা, দায়িত্বশীলতা ছিলো তা ফুলের মতো প্রস্ফোটিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রচনায়। তিনি নিন্দা-প্রশংসার তয়োক্কা না করে চিৎকার দিয়ে প্রায় বলতে চেয়েছেন বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর কথা।আহমদ ছফা ছিলেন একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও নিজস্ব ঘরানার লেখক। সম্ভবত তাঁর জীবিকার কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। কিন্তু লেখকতার দিকেই তাঁর অভিমুখ্য ছিল সব সময়। শেষ পর্যন্ত লেখক ছাড়া আর কিছু নন তিনি।প্রচুর ও ভিন্নধর্মী নানারকম লেখা লিখতেন—উপন্যাস থেকে দৈনিক পত্রিকার কলাম অবধি। আর যে কোনো লেখাতেই তাঁর হাতের ছাপ পরিষ্কার চেনা যেত। এই ব্যক্তিত্ব উপার্জনই তো একজন লেখকের আরাধ্য।

বাংলাদেশের জন্মের পর আহমদ ছফার বুদ্ধিবৃদ্ধির নতুন বিন্যাস চমক জাগিয়েছিল। তাঁর কলম ছিল শাণিত। স্বাধীনতার পর কবি ফররুখ আহমদ যখন চকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তখন আহমদ ছফার তীক্ষষ্ট যুক্তিমালাতেই তাঁকে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। সে সময় তিনি একটি উপন্যাস লিখেও সাড়া জাগিয়েছিলেন, ওঙ্কার। শিল্পী এসএম সুলতানকে তিনিই অনেকখানি জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। আহমদ ছফার ভালোবাসা এবং ক্রোধ দুই-ই ছিল প্রচণ্ড। কিন্তু ভণ্ডামি ছিল না।

আহমদ ছফার প্রথম গ্রন্থ একটি উপন্যাস- সূর্য তুমি সাথী। প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন ও এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এপ্রিল মাসে কলকাতা চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সেখান থেকে দাবানল নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক গণকণ্ঠ ধারাবাহিকভাবে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ রচনা প্রকাশ করেন।২০০১ খ্রিস্টাব্দে আহমদ ছফা রচনাবলি দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পায়।পুষ্প বৃক্ষ আর বিহঙ্গের কথা বলতে গিয়ে ছফা মানুষের কাহিনী বলে গেছেন। ছফা ভেবেছিলেন একটা আরণ্যক টাইপ লেখা হল। কিন্তু এর ফল গেল অনেক গভীরে। ঘটনা শুরু হয় বাসা পাল্টানো নিয়ে। পুরানো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাসায় উঠবেন। সে বাসায় উঠে দেখলেন সেখানে এক ফালি ছাদ ও তাঁর জন্য বরাদ্দ। ছফার পালক ছেলে সুশীল এসে একটা মৃতপ্রায় তুলসি গাছ আর কিছু নয়নতারা চারাকে বাঁচানোর দায় নিল। আস্তে আস্তে যত্ন পেয়ে সেগুলো ঠিক সেরে ওঠে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×