somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশপ্ত (৪র্থ পর্ব)

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব - ৩য় পর্ব Click This Link

চেয়ারম্যানের বাসা থেকে বের হয়েই সে চলে যায় মোনায়েম মাষ্টারের বাড়ি। যে করেই হোক মাষ্টারকে ক্ষমা চাওয়াতে পারলেই সে নিজেও বাঁচবে সাথে মাষ্টারও বাঁচবে।
দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ে রফিক।
- কি রফিক! কি হইছে?
রফিকের সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। হাপাতে হাপাতে সে বলল, স্যার আপনেরে আল্লাহর দোহাই লাগে আপনে চেয়ারম্যনের কাছে মাফ চান।
মাষ্টার বুঝে যায়। মাষ্টার বুঝে যায় তার উপর কোনো আঘাত আসতে পারে। আর তাই রফিক এসেছে তার সাবধান বাণি শোনাতে।
মাষ্টার একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন, বস তুই। ঠান্ডা হ। লেবুর শরবত বানায়া দিমু?
- না না স্যার। আমি কিছু খামু না।
- আচ্ছা খাইস না। এখন বল কি হইছে?
- স্যার কি দরকার আপনের এই বয়সে চেয়াম্যানের লগে গুতাগুতি করনের। কি জন্যে এভাবে তারে অপমান কইরা ক্ষেপাইয়া দেন।
মাষ্টার হাসেন। শুধুই হাসেন।
রফিক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে মাষ্টারকে।
মাষ্টার তখন বলল, শোন রফিক, ওর মতো জানোয়াররে অপমান করলে আমার শান্তি লাগে।
-কিন্তু কি দরকার। কি পাবেন এই শান্তি দিয়া?
-কি শান্তি পাবো? কাপুরুষ হয়ে না থাকার শান্তি। প্রতিবাদ করার শান্তি। এই বয়সে তো রাস্তায় রাস্তায় হরতাল অবরোধ করার মতো শক্তি নাই। তাই বয়কটের মাধ্যমে প্রতিবাদ।
- কিন্তু কেন এই প্রতিবাদ! কি লাভ?
মাষ্টারের চোখ লাল হয়ে ওঠে। ক্যান প্রতিবাদ? তুই জানোস না ঐ হারামীটা যুদ্ধের সময় কি করছে? এই গ্রামের মানুষ সব ভুলতে পারে আমি কিন্তু ভুলি নাই। এই গ্রামের চা দোকানদার জব্বার ভুলতে পারে তার মেয়েকে এবং তার স্ত্রীকে মিলিটারী ক্যাম্পে তুলে দিয়ে এসেছিল এই কাশেম। আমি ভুলি নাই। পাগলী মরিয়মের নামের পাশে পাগলী কেন লাগলো তা এই গ্রামের মানুষ ভুলে যেতে পারে কিন্তু আমি ভুলি নাই। আমার মনে আছে, কাশেম নিজ হাতে মরিয়মের তিন ছেলেকে এবং তার স্বামীকে জবাই করে হত্যা করেছিল। আমি ভুলি নাই কিছুই।
বাংলার ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায় আমি ভুলি নাই। তাই প্রতিবাদ করি। আমার ছেলে এই দেশের জন্য নিজ দেহকে বিসর্জন দিছে আমি তা ভুলি নাই। আমার ছেলে আমারে চিঠিতে লিখছিল, বাবা তোমাকে একটি নতুন দেশ উপহার দিবো। আমার ছেলের সেই উপহার সংরক্ষণের জন্য আমার প্রতিবাদ। আর তুই বলতাছস আমি ঐ কুত্তাটার কাছে মাফ চামু। অসম্ভব! অসম্ভব রফিক।
আমার ছেলের রক্ত এই মাটিতে মিশে আছে। আমি পিতা হয়ে সেই রক্তের উপর দাড়িয়ে কোনো রাজাকারের কাছে ক্ষমা চাবো না।

এই সব কিছু রফিক হতভম্বের মতো শুনছিল। এক পর্যায়ে সে মাষ্টারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। এবং কাঁদতে কাঁদতে বলে, স্যার আমি এখন কি করমু। কি করমু?
মাষ্টার রফিকের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, বাবা, তুই কি করবি এটা তোরে ঠিক করতে হইবো। তবে একটা কথা মনে রাখিস, মৃত্যুর আগে যখন নিজেকে প্রশ্ন করবি, তুই এই দেশের জন্য এই জাতির জন্য কি করেছিস, যখন তোর বিবেক বলবে, তুই কি করেছিস সারাজীবন। তখন এই সব প্রশ্নের উত্তর যখন তুই পাবি না তখন কিন্তু নিজের জীবনকে পুনরায় শুরু করবার কোনো সুযোগ থাকবে না। নিজেকে জবাব দেয়ার মতো কিছু করে মৃত্যুই হচ্ছে বীরের মতো মৃত্যু।


চেয়ারম্যান তার বসার ঘরে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। আজ রাতেই রফিকের মাষ্টারের বাড়িতে আগুন লাগানোর কথা। কিন্তু রফিক সকালের পর আর আসে নি। মিঠুকে খবর দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে রফিককে নিয়ে তাড়াতাড়ি আসে। আগুন লাগানোর কাজটা ঠিক হবে কি ভুল হবে তা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন কাশেম চেয়ারম্যান। এমন সময় আকমল দৌড়াতে দৌড়াতে চেয়াম্যানের বসবার ঘরে ঢুকে বলা শুরু করে,
চাচা, ও চাচা। আযাব, গজব পরছে আমাগো গেরামে। হে আল্লাহ। আমরা কি পাপ করছি!
মাষ্টার বিচলিত কন্ঠে বললেন, অই হারামজাদা কি হয়েছে?
- চাচা, গেরামে অভিশাপ ঢুকছে। মসজিদের ইমামের কাছে চান্দা চাইছে। সে দেয় নাই। এখন নাপাকীগুলা লেংটা হইয়া মসজিদের সামনে নাচা শুরু করছে।
চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সমস্ত কিছু যেনো ভেঙে পড়ছে। তার চারপাশে সব কিছু যেনো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার শরীরে শক্তি ঝরে পড়ছে। তার পবিত্র গ্রামে ঢুকেছে অভিশপ্ত তৃতীয় লিঙ্গ। যাকে আমরা বলি হিজড়া সম্প্রদায়।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×