আজ সেই ভয়াল ১৫ই নভেম্বর৷ গত বছর এদিনে 'সিডর' নামে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ লন্ডভন্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণাঞ্চল৷ ২৪০ কিলোমিটার বেগে আসা জলোচ্ছাসের তোড়ে ভেসে যায় দেশের বিস্তীর্ণ ওই এলাকা। তাই সিডর এখনও এক ভয়াবহ দু:স্বপ্নের নাম৷ এক বছর পার হলেও সেখানকার লাখ লাখ দুর্গত মানুষ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই সিডরের যান্ত্রণা।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। ১১ নভেম্বর আবহাওয়ায় সামান্য দুর্যোগ এর আভাষ পাওয়া যায় এবং এর পরদিনই এটি ঘূর্ণিঝড় সিডর-এ পরিণত হয়। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে এটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে এবং বাংলাদেশে একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।
আইএমডি ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে ১৪ নভেম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা করে। ওই দিন রাত ৮টার পর মংলা বন্দরের সকল কার্যক্রম এবং রাত ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্ধরে বিমান উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঝড়ের আশংকায় ঢাকা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থাও নেয়া হয় এবং নভেম্বর ১৫ তারিখে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চলে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের অংশবিশেষ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রীয় অংশ ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর পাথরঘাটায় বালেশ্বর নদীর কাছে উপকূল অতিক্রম করে। অতপর ঝড়ের তান্ডবে উপকূলীয় জেলা সমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে এবং সাথে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
ঘূর্ণিঝড়ে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০,০০০টন ধান নষ্ট হয়েছে যার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হয়েছে।
সুন্দরবনের পশুর নদীতে বেশ কিছু হরিণের মৃত্য দেহ ভাসতে দেখা যায় এবং এতে বিপুলসংখ্যক প্রাণীর মারা যায়। সিড়র প্রায় ৯৬৮,০০০ ঘরবাড়ী ধ্বংস এবং ২১০,০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে দেয়। এ ঝড়ে প্রায় ২৪২,০০০ গৃহপালিত পশু এবং হাঁসমুরগী মারা যায়। সরকারি হিসেবে তিন হাজারের কিছু বেশী লোকের প্রাণহানির কথা স্বীকার করা হয়। কিন্তু এতে ১০ হাজারেরও বেশী মানুষ মারা গেছে বলে আশংকা করা হয়।
সিডরের পর সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি সাহায্যের হাত বাড়ায় কিন্তু দুর্গত মানুষগুলি এখনও লড়াই করছে জীবনের সাথে৷ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গতদের পুণর্বাসনের কথা বলা হলেও তা এখনও সেভাবে বাস্তবায়িত হয়নি৷
সাহায্য সংস্থা অক্সফামের তথ্য মতে, সিডর আক্রান্ত এলাকাগুলিতে দু' লাখ ৭৬ হাজার পরিবার তেমন কোন সাহায্য পায়নি৷
বরগুনা জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাফায়েত হোসেন বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন সিডর দুর্গতদের জন্য গত বছর ৬০টি নতুন আশ্রয় কেন্দ্র তৈরী করা হয়েছিল৷ কিন্তু তা এতই স্বল্প সংখ্যক যে দু' তৃতীয়াংশ লোক এখনও আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছে৷
তিনি বলেন, আমাদের যদি টাকা দেয়া হতো তাহলে আমরা এক মাসের মধ্যেই সব বাড়ী তৈরি করে দিতে পারতাম৷
সিডরের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ২২০ কোটি ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল৷ সাহায্যের অনেক প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় সে প্রতিশ্রুত সাহায্যের মাত্র এক চতুর্থাংশ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৪৭