(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার ৭ম পর্ব পরিবেশিত হল।)
স্বাধীন হবার পর হারুদার বাবাকে আর দোকানে বসতে হয় না। হারুদা নাকি ব্যাগ ভরে টাকা আনেন। কথাটা ভাইমনি অনেক বার বলেছেন। হারুদারা মন্ত বাড়ি বানিয়েছেন। ওদের দুটো চমৎকার গাড়ি হয়েছে। হারুদা ফিট- ফাট ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে আববুর কাছে আসেন। উচু স্বরে রাজনীতি নিয়ে গল্প করেন। আসলে ঠিক গল্প নয়। হারুদাই কথা বলেন। কাদের মেরে ফেলা উচিত কাদের ধরে আচ্ছাসে পিটুনি দেয়া উচিত অবলীলায় বলে যান। আব্বু মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শোনেন। এ নিয়ে আপুর হাজারও নালিশ।
-‘কি দরকার অমন উটকো লোকদের সাথে কথা বলার। বেটা ‘সিক্সটিন ডিভিশনের’ লিডার। মুখে মুখে এখন কতোরকম ‘ঝারি’ দেয়। ওসব বকবক শোনার কোনও মানে আছে কি? ইতিহাসের ওসব আবর্জনাকে ঘরের চৌকাঠ পার হতে দেয়া উচিত না।’
এমনতর কঠিন নালিশের জবাবও আব্বু হাসি মুখেই দেন। তিনি বলেন,
-‘নারে মা, ঘরের দরজা সবার জন্য খোলা রাখা মানে মনের দরজা খোলা রাখা নয়। তা ছাড়া ওদের হুক্কাহুয়া শুনে বোঝা যায় দেশটির হালচাল।’ তবে ঝিনু দেখেছে আববু আর এখন হারুদাকে আগের মত খাম এনে দেননা মাসের পয়লা তারিখে আসার কথা মনে করিয়ে দেন না। হারদাও আগের মত মস্ত আদাব না দিয়ে টুক করে নমস্কার বলে শুধু। হারুদা ঠিক আলাউদ্দিনের সেই যাদুর প্রদীপটি পেয়ে গেছেন। প্রদীপের ইয়া বিশাল দৈত্যটা সোলায়মানের খনি থেকে নিশ্চয়ই রাশি রাশি হীরা মুক্তা এনে দিচ্ছে। তাতেই না হারুদারা এত বড়লোক হয়ে গেল। ভাইমনি একথা শুনে হেঁসেই বাঁচেননা । বলেন,
-‘একটু বড় হও তা হলে এমনিতেই বুঝবি ।’
সেই ১৫ তারিখের পর ওদরে বাসায় কাউকে আর দেখা যায়নি। তাই আজ ওমন জুতো মসমসিয়ে হারুদাকে আসতে দেখে ঝিনু হা করে তাকিয়ে রইল। মনে হল আব্বু খানিকটা অবাক হয়েছেন।
-‘নমস্কার কাকা বাবু । কেমন আছেন?’
-‘ ভাল আছি। বস তোমাদের খবর শোনাও । অনেকদিন দেখেনি। কোথাও গিয়েছিলে নাকি?’ কেমন খস খসে শুকনো শুকনো আব্বুর গলার স্বর মনেই হয় না আব্বু কথা বলছেন।
-‘ভগবানের আর্শীবাদে ভালই আছি। ব্যবসার কাজে বিদেশে ‘গেছিলাম’ আরকি। ব্যবসা মানুষে করে, যা গাধার খাটুনি জানটান বেরিয়ে যাবার অবস্থা ।’
-‘তা তোমার মা-বাবা কেমন আছেন?’
-‘মা-বাবা ভালই আছেন। তাদের বয়স তো কম হল না। এবার তীর্থ ধর্ম করতে বেরিয়েছেন। গয়া-কাশি-বৃন্দাবন সব ঘুরে আসুক।’
-‘ভাল তোমার ভাইবোনেরা কোথায়?’
-‘ওরাও মা বাবার সাথেই রয়েছে। কদিন বেরিয়ে টেরিয়ে আসুক। তা কাকাবাবু দারুণ এক আনসার্টেন অবস্থায় পড়ে ছিলাম। সব ভগবানের ইচ্ছা । আবার সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পথে।’ হারুদা আজও অনেকক্ষন বসে রইলেন। বক বক করলেন। হাসলেন হো হো করে । এক সময়-‘ নমস্কার কাকা বাবু’ বলে চলে গেলেন। ভাইমনি এতক্ষণ যেন জিব কামড়ে চুপচাপ বসে ছিলেন। হারুদা চলে যেতেই চীৎকার করে উঠলেন,
- ‘শকুন।