somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাসের ৭ম অধ্যায় )

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার ৭ম পর্ব পরিবেশিত হল।)


স্বাধীন হবার পর হারুদার বাবাকে আর দোকানে বসতে হয় না। হারুদা নাকি ব্যাগ ভরে টাকা আনেন। কথাটা ভাইমনি অনেক বার বলেছেন। হারুদারা মন্ত বাড়ি বানিয়েছেন। ওদের দুটো চমৎকার গাড়ি হয়েছে। হারুদা ফিট- ফাট ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে আববুর কাছে আসেন। উচু স্বরে রাজনীতি নিয়ে গল্প করেন। আসলে ঠিক গল্প নয়। হারুদাই কথা বলেন। কাদের মেরে ফেলা উচিত কাদের ধরে আচ্ছাসে পিটুনি দেয়া উচিত অবলীলায় বলে যান। আব্বু মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শোনেন। এ নিয়ে আপুর হাজারও নালিশ।
-‘কি দরকার অমন উটকো লোকদের সাথে কথা বলার। বেটা ‘সিক্সটিন ডিভিশনের’ লিডার। মুখে মুখে এখন কতোরকম ‘ঝারি’ দেয়। ওসব বকবক শোনার কোনও মানে আছে কি? ইতিহাসের ওসব আবর্জনাকে ঘরের চৌকাঠ পার হতে দেয়া উচিত না।’
এমনতর কঠিন নালিশের জবাবও আব্বু হাসি মুখেই দেন। তিনি বলেন,
-‘নারে মা, ঘরের দরজা সবার জন্য খোলা রাখা মানে মনের দরজা খোলা রাখা নয়। তা ছাড়া ওদের হুক্কাহুয়া শুনে বোঝা যায় দেশটির হালচাল।’ তবে ঝিনু দেখেছে আববু আর এখন হারুদাকে আগের মত খাম এনে দেননা মাসের পয়লা তারিখে আসার কথা মনে করিয়ে দেন না। হারদাও আগের মত মস্ত আদাব না দিয়ে টুক করে নমস্কার বলে শুধু। হারুদা ঠিক আলাউদ্দিনের সেই যাদুর প্রদীপটি পেয়ে গেছেন। প্রদীপের ইয়া বিশাল দৈত্যটা সোলায়মানের খনি থেকে নিশ্চয়ই রাশি রাশি হীরা মুক্তা এনে দিচ্ছে। তাতেই না হারুদারা এত বড়লোক হয়ে গেল। ভাইমনি একথা শুনে হেঁসেই বাঁচেননা । বলেন,
-‘একটু বড় হও তা হলে এমনিতেই বুঝবি ।’
সেই ১৫ তারিখের পর ওদরে বাসায় কাউকে আর দেখা যায়নি। তাই আজ ওমন জুতো মসমসিয়ে হারুদাকে আসতে দেখে ঝিনু হা করে তাকিয়ে রইল। মনে হল আব্বু খানিকটা অবাক হয়েছেন।
-‘নমস্কার কাকা বাবু । কেমন আছেন?’
-‘ ভাল আছি। বস তোমাদের খবর শোনাও । অনেকদিন দেখেনি। কোথাও গিয়েছিলে নাকি?’ কেমন খস খসে শুকনো শুকনো আব্বুর গলার স্বর মনেই হয় না আব্বু কথা বলছেন।
-‘ভগবানের আর্শীবাদে ভালই আছি। ব্যবসার কাজে বিদেশে ‘গেছিলাম’ আরকি। ব্যবসা মানুষে করে, যা গাধার খাটুনি জানটান বেরিয়ে যাবার অবস্থা ।’
-‘তা তোমার মা-বাবা কেমন আছেন?’
-‘মা-বাবা ভালই আছেন। তাদের বয়স তো কম হল না। এবার তীর্থ ধর্ম করতে বেরিয়েছেন। গয়া-কাশি-বৃন্দাবন সব ঘুরে আসুক।’
-‘ভাল তোমার ভাইবোনেরা কোথায়?’
-‘ওরাও মা বাবার সাথেই রয়েছে। কদিন বেরিয়ে টেরিয়ে আসুক। তা কাকাবাবু দারুণ এক আনসার্টেন অবস্থায় পড়ে ছিলাম। সব ভগবানের ইচ্ছা । আবার সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পথে।’ হারুদা আজও অনেকক্ষন বসে রইলেন। বক বক করলেন। হাসলেন হো হো করে । এক সময়-‘ নমস্কার কাকা বাবু’ বলে চলে গেলেন। ভাইমনি এতক্ষণ যেন জিব কামড়ে চুপচাপ বসে ছিলেন। হারুদা চলে যেতেই চীৎকার করে উঠলেন,
- ‘শকুন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×