somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাসের ৬ষ্ট অধ্যায় )

১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার ৬ষ্ট পর্ব পরিবেশিত হল।)




আজও দু ঘন্টা হয়ে স্কুল ঢং ঢং । স্কুলের গেটে ভাই মনিকে দেখতে পেল ঝিনু । ভাইমনি কি করে জানে স্কুল ছুটি হয়ে যাবে। ভাইমনি বলেন আমি তোর বেতন দিতে এসছিলাম। ওহো ঝিনুর যে মনেই নেই আজ বেতন দিন। রিক্সায় উঠে ভাই মনির কাছে আবদার জুড়ল, -‘ভাই মনি সেই শাদ্দাতের গল্পটা বলবি বলে আর বললি না যে? এখন বল না।’
-‘ঝিনু তোকে অন্যদিন শোনাব। আজ থাক। ভাইমনি আস্তে হাসল।’ ভাইমনি জোরাজুরি করতে ইচ্ছে হল না ঝিনুর। আজকাল ভাইমনি যেন অনেক দুরের মানুষ হয়ে গেছে। একটা চাপ চাপ ভয় ঝুলছে সব জায়গায়। ঘন কুয়াশার মত লেপ্টে আছে সব কিছু। ওর ওর মধ্যে দিয়ে ঝিনু কারও পুরান চেহারা খুঁজে পাচ্ছে না। ঝিনুর ইচ্ছা হল একবার বলে ভাইমনি তুই একবার হো হে করে হেসে ওঠে। রিক্সা থেমে গেল। সামনে লাল আলো। মোড় ঘুরতেই রিক্সাওয়ালা চাপা স্বরে বলে উঠল,
-‘খুকী মনি, আপনি না শাদ্দাতের গল্প হুনতে চাইছিলেন। সামনে শাদ্দাতের পোলা পানগো দেইখ্যা লন।’ তাহলে রিক্সাঅলা ভাই এতক্ষন ওদের কথা শুনছিলেন। ঝিনু তার শুনে চমকে সামনে তাকায়। দু সারিতে গুটিকয়েক লোক নিয়ে একটা শান্ত মিছিল এগিয়ে আসছে। কোথায় শাদ্দাতের চেলাপেলা? মিছিলের সামনে যারা তাদের অনেককেই ঝিনু চেনে । ওইত সাজু চৌধুরী । ওদের স্কুলে পুরস্কার দিতে একবার এসেছিলেন। মাগো মা মহিলা চিল্লাতে পারেন বটে। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাড়া দুটি ঘন্টা দ্বিতীয় বিপ্লব দ্বিতীয় বিপ্লব করে কি সব যেন বলছিলেন। হড় হড় করে অত কথা কি আর বোঝা যায়। কিছুক্ষন পর পর কেবল দ্বিতীয় বিপ্লব টাই বোঝা যাচ্ছিল। তার পাশে না মহিন আহম্মদ। দেখেই ঝিনুর হাসি পেল। ওনার গায়ে অবশ্যি শুধু ওনার গায়ে নয় ওনাদের সাথে সব্বার গায়ে হাতটাকা কালো কোট সব সময় আছেই। ভীষণ গরমে ঝিনুর যখন হাফ ধরে তাপ বেরোচ্ছে তখন ওই কোট চাপিয়ে ওনাকে বহুবার দিব্যি ঘুরতে দেখে আববাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো।
-‘আব্বু ওই কোট কি এয়ার কন্ডিশন করা? তাহলে আমাকে একটা কিনে দাও না । গরমের সময় আরাম হবে। ঘাম হবে না।’ কথাটা শেষ হয়েছে কি হয়নি আব্বুর হাসি শুনে হনে হল ঘর বুঝি ভেংগে পড়বে। কোট নিয়ে পুরান কথাটা আজকে ওর আবার মনে পড়ল। আতিয়া চৌধুরীকে ও দেখল সামনে। আরে বাপড়ে এক থুড়থুড়ে বুড়ি এসেছেন মিছিলে। ঝিনু তাকে চিনতে পারল না। ভাই মনি চিনিয়ে দিলেন বিগ্রেডিয়ারের মা। পাশের লোকটা তার ছেলে। বিগ্রেডিয়ারের ভাই । ঐ যে, ছেলেটি ভার্সিটির ছাত্র, জাহিদুল ইসলাম। ওদের হাতে সেই লোকটির মালা দেয়া ছবি যার আমলে ঝিনু তিন বেলা রুটি খেয়েছে। ভিক্ষুক ভাত চায়নি, ফ্যান চেয়েছে। আর ঝিনুর মত অনেক বাচ্চারা না খেয়ে মারা গেছে। মিছিলটা রিক্সার পাশে দিয়ে একটা জোকের মত একে বেকে চলে যাচ্ছে। জোঁক দেখলে ঝিনুর গা ঘিন ঘিন করে।
-‘বাপরে এত বড় জোঁক ।’ ভাবতেই ওর মাথা গুলিয়ে উঠে। গলগল করে বমি করে দেয় ঝিনু।

ম্যাড় ম্যাড়ে বিকেল । চারদিকে মরা মরা ভাব। আজকাল আর বেরিয়ে আসার আনন্দ নেই। মাটিতে দাগ টেনে কিত কিত খেলতেও ভাল লাগনো । দুর ছাই কে যেন সোনার কাঠি আর রুপার কাঠি উল্টে পাল্টে দিয়েছে। আনন্দে হুল্লোড়। ছোট জমিতে ঘাস ফড়িংয়ের পিছে দৌড়ানো। হৈ হৈ চিৎকার। হোমটাস্ক। স্কুল সবকিছুকে এক কৌটায় ভরে কে যেন কোন অচিন দেশের দীঘির কাজল কালো পানির তলায় পুতে রেখেছে । আম্মু আদর করে না । ভাইমনি গল্প শোনায় না। আব্বু হাসতে ভুলে গেছে। ভাইয়ার সাথে খুনসুটি বাধে না বড় আপা খ্যাক খ্যাক করছে না। মেজ অপার দাবার বোর্ড- ঘুটি এলামেলো পড়ে আছে। আর রুকার জ্বর সারেনি । ঝিনু একদম একলা। বিকেল গেলে আসবে সেই থমথমে কাল রাত। গেট দব্ধ। দরাজায় একগাদা খিল কালো কাঠ। বিবিসির খবর। আব্বুর কুঁচকে উঠা কপাল। আম্মুর তসবি ঘোরান। ধ্যাৎ তা আর ও বিচ্ছিরী । আরে এ বিকেলটা যে অংক পরীক্ষার প্রশ্নের মত। হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না। প্রশ্নের মাথামুন্ড কিছুই বোঝা যায় না। হাতুড়ি মুখো কয়েক জন আপা আর স্যারেরা মসমস করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচ্ছিরী সব বিচ্ছিরী।
সে সময় দেখে দূর্দ্দাড় পা ফেলে আসার শব্দ শুনে ও তাকায়। আরে হারুদা ঝড়ের বেগে আসছে। ঝিনু অবাক হয়। হারুদার বাবা আগে ওই মোড়ে একট গুমটি পানের দোকান নিয়ে বসতেন। ঝিনুদের বাসা হতে এইটুকু দুরে দমুড়ানো-মুচড়ানো ঘরে ওরা থাকত । কতগুলো ভাই-বোন। কি ছেড়া কাপড়-চোপড়ই পড়ত । বেচারাদের তখন কি কষ্টই না হত। হারুদা ভাইমনি এক ক্লাসেই পড়তেন । কিন্তু ফেল মেরে মেরে পড়া লেখা ছেড়ে দেন হারুদা। শেষে কেবল হৈ হৈ করে বেড়াতেন। তবে ওদের বাসায় হারুদার যাওয়া আস মোটেও বন্ধ হয়নি। মাঝে মাঝে আসতেন। মুখ কাচু মাচু করে কোনার চেয়ারে বসে থাকতেন। চা খেতেন । এই চেয়ারে বসা নিয়ে বড় আপা ঘ্যান ঘ্যান করতেন,
-‘আব্বু তুমি কি? যে আসে তাকেই চেযারে বসাও। একটু মান সম্মান নেই নাকি? পরশুদিন দেখি হকার ছোকরাকে চেয়ারে বসিয়ে কি যেন গল্প করছ। বসতে দিতে চাইলে ওদের কে মোড়ায় বসতে দাওনা কেনো। ওখানে তো মোড়াও রাখা আছে।’ আপুর এমন কথা শুনে আববুর হাসি হাসি মুখ কালো হয়ে যেত। তিনি শান্ত গলায় বলতেন
-‘মা মনি সবাই আল্লাহর তৈরি মানুষ। বড় ছোট সামাজের তৈরি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করনা। এবং বাড়াবাড়ি করা ঠিকও হবে না।’ আব্বুর এমন শান্ত স্বর শুনে বড় আপা চুপ হয়ে যেতেন। তবে আব্বুর সামনে আর কোনও কথা না বললেও গজ গজ করতেন আড়ালে। আব্বু হারুদাকে একটা খাম এনে দিতেন। হারুদা লম্বা আদাব দিয়ে চলে যেতেন ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×