somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি মহিলা মাদ্রাসার অন্দরে... (৩)

১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



থাকা-খাওয়া:

সাধরনত একেক জামাতের মেয়েরা (শ্রেনী । এর প্রকার ভেদ পরে লিখছি) একেক রুমে থাকে। এক রুমের মেয়ে অন্য রুমে ঘুমানো দন্ডনীয় অপরাধ। সাধারনত হল রুম থাকে বিশাল। এক রুমে ১০০ জন থাকতে দেখেছি। উদ্ভাস্তুদের মত লেগেছে। ভয়ন্কর অবস্থা হয় মধ্যে রাতে এত গুলো মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে যখন পুরো রুমের বাতাসটা ভারি হয়ে যায়। বিশ্রি গন্ধে ভরে থাকে রুম।

কোন কোন মাদ্রাসায় ঠিক পাশেই থাকে বড় আপা -বড় হুজুর গুছানো এপার্টমেন্টে। তাদের থাকার খরচ মাদ্রাসার খরচের সাথেই যুক্ত। ছাত্রীদের বেতনের টাকা আর কালেকশনের নামে ধান্ধাবাজির টাকা দিয়ে আরামে ঘুমায়। আর এত গুলো মেয়ে অসাস্থাকর পরিবেশে দিন-রাত কাটায়।

থাকা খাওয়া ,ক্লাস সব হয় একই রুম। সব কিছু ফ্লোরিং। লিখার জন্য কাঠের ডেস্ক বা বেন্চ থাকে। মাটিতে বসে তার উপর লেখা-পড়া করে থাকে ছাত্রীরা। মেয়েরা বাসা থেকে তোষক, চাদর, বালিশ ,প্লেট, গ্লাস, বাটি ইত্যাদি নিয়ে আসে। সবার সিট নির্দিষ্ট থাকে। প্রত্যেকের থাকে নির্দিষ্ট মাপের টিনের ট্টান্ক। সেখানে তার সব জিনিষ পত্র রাখবে, সর্বদা তালা মেরে রাখার নির্দেশ রয়েছে। চাবি থাকে হয় গলায় চেইনের সাথে অথবা পায়জামার রিবনের সাথে বাধা।

৮০% মেয়েরা মাদ্রাসাতেই খায়। বেতনের সাথে খাওয়ার টাকা দেয়া থাকে। বেতন মাদ্রাসা ভেদে ১০০০-২০০০টাকা। সাধারনত মেনু হচ্ছে : ডাল +ভাত / শুকনা খিচুরী (রেয়ার) - মাছ/মাংস/ ডিম+ডাল+ভাত - ডাল+আলু ভর্তা। ( সকাল- দুপুর- রাত) । বছরে ২-৩ বার সকালে কলা+ পাউয়ারুটি / কাঠাল +মুড়ি ও খেয়েছি:) । শাক -সবজি একেবারে খাওয়া হয়না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে অবশ্য ডালের মধ্যে শাক-টাক দিয়ে দেয়।

খাবার দেয়ার সময় হলে বেল বাজে। মেয়েরা লাইন ধরে খাবার আনতে যায়। কোথাও কোথাও রোল কল ও হয়। কেউ ডাবল নিলো কিনা হয়তো তা বোঝার জন্য। মেয়েদের কে যখন ডাল আর আলু ভর্তা দেয়া হচ্ছে টের পেতাম পাশের কড়াইতে শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য দেশি মুরগি ভূনা হচ্ছে। সব যায়গাতেই বুয়াদের সাথে ভালো খাতির থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়। টিচারদের খাবারও খাওয়া যায় মাঝে মধ্যে। মাঝে মধ্যে সে সমস্ত মেয়েদের সাথে বুয়াদের ভালো খাতির থাকে তাদেরকে একটু শাক বা ডিম ভাজি করে দেয়।

যেসব মেয়েরা ( যাদের বাসা কাছে এবং সচ্ছল নয়, বাসা কাছেই। মাদ্রাসায় খাবরের খরচ থেকে বাসা থেকে খাবার পাঠানোটা তাদের জন্য খরচ কম পড়ে)। বাইরে থেকে খাবার আসতো তাদের সাথে খাবার চেন্জ করেও খেতো অনেক মেয়ে। বাসা থেকে আসা শুটকি ভর্তা নিয়ে তার মাংসের টুকরা টা দিতো । সেই মেয়েও খেত খুব তৃপ্তি নিয়ে। আবার কিছু ধনীর কন্যা যারা মাদ্রাসার খাবার খেতে পারেনা তাদের খাবারও আসে বাসা থেকে বিশাল টিফিন ক্যারিয়ারে। বন্ধবীরাও ভাগ পায়;)

বাড়তি খাবার যেমন বিস্কুট, চানাচুর ইত্যাদি দারওয়ানকে দিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আনানো যায়। এক মাদ্রাসায় দেখলাম মাদ্রাসার ভেতরেই দোকান। সেখানে পাউয়া রুটি, কলা, চিপস,এলাচি বিস্কুট, লাড্ডু, চানাচুর, আচার, মোমবাতি ইত্যাদি পাওয়া যায়। বুয়ারা দোকানদারি করে। মাদ্রাসায় সবচেয়ে দামি খাবার হচ্চে “কাচা মরিচ”। কেউ একটা কাচামরিচ দিলে চির কৃতগ্গ হয়ে থাকা হয়।

এই ডাল আর আলু ভর্তা খেতে খেতে জান শেষ। পুষ্টির প্রতি মাদ্রাসার কর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা হয়তো জানেইনা। ২-৩ বছর ধরে মাদ্রাসার ভেতরে থাকা মেয়েদেরকে দেখলেই বোঝা যায় অপুষ্টিতে ভুগছে। নেই কোনো খেলা ধুলার ব্যবস্থা। আরে কি বলি! এখানে তো জোরে হাটাই নিষেধ। মাটি ব্যথা পাবে তো!
তারপর মরলে পরে কবরে দু্পাশ থেকে চাপ দিবে যে!

চলবে……
২৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×