somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেসিপি ফর ডিজাস্টার

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল টিভিতে দেখলাম পঙ্গপালের মতো মানুষ লাফাচ্ছে - কারন তাদের নেত্রী দেশে ফিরেছে। একজন মানুষ বিদেশে যেতেই পারে - আর বিদেশে গেলে দেশে আসা স্বাভাবিক। কিন্তু তার জন্যে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে রাস্তায় লাফাবে কেন?

উত্তরটা জানিনা। যদি কেউ জানেন - জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। তবে আমার একবন্ধু একবার একটা কথা বলেছিলো। ওর কথা হলো যে দেশে একটা ম্যানহোলের ঢাকনা খুললে যেখানে শত শত মানুস ভিড় করে - সেখানে একজন নেতার আহবানে কেন হাজার হাজার মানুষ যাবে না।

বড়ই সত্য কথা। তবে এই হাজার হাজার মানুষের নেত্রীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে কতগুলো শ্রমঘন্টা অপচয় হলো তার দামই বা কতো, ভাবলে অবাক লাগে বটে।

একটা খসড়া হিসাব করা যাক। যদি গড়ে ১৫ টাকা ঘন্টা হিসাবে এক লক্ষ মানুষের ৬ ঘন্টার শ্রম হিসাব করি - তবে মোট টাকার পরিমান আসে মোটামুটি ১ কোটি টাকা। তার উপরে ফুল আর গাড়ীর তেলে হিসাব ধরলে হয়তো আরো অনেক বেশী হবে।

এই বিপুল অপচয় হলো একজন নেত্রীকে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আনতে - সেখানে জনমানুষের ভোগান্তির কথা না হয় নাইবা বললাম। কারন - দুর্ভাগা মানুষ গুলার কথা ভাবার মতো সেখানে কেউ নেই।

সমস্যা সেইখানে না। যখন নেত্রী মুখ খুললো - তখন মনে হলো আরে এতো আমাদের "পঁচার মা" ইতো। দুই বছরে সামরিক বাহিনীর ঠেলে রাখা সাময়িক সরকারের বিরাট হমম্বিতম্বির থেকে যে অশ্ব ডিম্ব বের হয়েছে - তা আমাদের নেত্রীর "পঁচার মা" স্টাইলে কথা শুনেই তা বোধে আলো। সেই পুরোনো সুর - সেই পুরোনো গান।

হতাশ হলাম - কবে একজন নেতা আসবে বাংলাদেশে যে আজকের মানুষের মতো করে কথা বলবে!

(২)

আজ আবার দেখলাম আরেকদল পঙ্গপাল হৈ হৈ করছে। আর দেশনেত্রী একবাক্যে এই সরকারের দুই বছরের সকল প্রচেষ্টাকে পতেঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিতে চাইছে। উনি দেশের স্বাধীনতা নিয়ে খুবই চিন্তিত - কিন্ত রাজাকারা উনার মিত্র! উনি বললে উনারা কিছুই করেনি - যা অন্যায় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। ফালু-হারিসের দূর্নীতির ডাবলসের চ্যাম্পিয়ানশিপ আর গিয়াস আল মামুনের সিঙ্গেলসের চ্যাম্পিয়ানশীপ তো উনার নজরের ভিতরেই ছিলো। তাইলে কি উনি তা যথেষ্ঠ মনে করেন না?

পুরো বত্তৃতাটা আর ৭ দফা পড়ে মনে হলো - দুই বছর হয়তো উনি টাইম ডায়লুশানের ভিতর দিয়েই অতিক্রম করেছেন। এইতো সেদিন - নির্বাচন টা হলো না - এইতো।

তবে খালেদা জিয়ার অবস্থান আর জামাতের নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা দেখে মনে হচ্ছে - একজন অহংকারী মানুষ হিসাবে খালেদা জিয়াই জিতে যাবেন। কারন উনার সমর্থক গোস্ঠীর কাছে যুক্তি অর্থহীন হয়ে যাবে আবেগের কাছে। উনি নির্বাচনটাকে বারগেনিং পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন - উনার আর উনার পরিবারের পুনস্থাপনের জন্যে। মধ্যের থেকে দেশ আর দশ হয়ে পড়ছে জিম্মি। একদিকে উনি দেশের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করছেন নির্বাচনে হুমকীর মুখে ফেলে - অন্যদিকে কৌশলী যদি সরকার জয়ী হয় - তবে বিএনপিকে হয়তো পাঁচ বছর পর মুসলিম লীগের মতোই মৃতপ্রায় দল হিসাবে দেখা যাবে।

কি হবে তা বলার সময় এখনও আসেনি। ভবিষ্যতেই বলে দেবে - কে কোথায় থাকবে।

তবে এইটা নিম্চিত করে বলা যায় - খালেদা জিয়া অহংকারের বশে যা করছেন আর যা বলছেন -তা একটা "রেসিপি অব ডিজাস্টার" হিসাবেই বিবেচিত হবে। নির্বাচন বর্জন আর পরবর্তীতে আন্দোলন মানেই ধংস, লাশ আর অর্থনীতির উপর খড়গ। একটা দেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে যেখানে ২ কোটিই বেকার, ৩০ ভাগ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে, আজকের দিনে জন্ম নেওয়া একটা শিশুর জন্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নেই - সেই দেশের জন্যে যে টুকু নূন্যতম সমজোতার ভিত্তিতে একটা গনতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী লক্ষ্যে দলগুলো কাজ করা দরকার ছিলো - একটা দারুন সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ হাতছাড়া করছে দেখে দু:খিত হচ্ছি। যেভাবে নেত্রীরা জনগনের জন্যে জীবনপন করে যাচ্ছে - তা না করে নিজেরাই যদি দয়া করে অবসরে চলে যেতেন - তাহলে নির্বোধ পঙ্গপালের আত্নঘাতি সংঘাত থেকে দেশ বেঁচে যেত। কিন্তু মনে হয় - তা আর হবে না। সবাই যদি বিজয় নিশ্চিত করেই খেলতে নামেন - তবে তা আর খেলা থাকে না - হবে চর দখল। চরদখলের নেতৃত্বদানকারী নেত্রীদের জন্যে একটা বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে ব্যর্থথাই মনে হচ্ছে এই সরকারে প্রথম ব্যর্থতা।

দেশনেত্রীর এই রেসিপির ডিজাস্টারটা কি দলের বা দেশের জন্যে কাজ করবে - তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

(২)

এখানে একটা কথা বলা দরকার। যে নেত্রীদের জন্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ নাওয়া খাওয়া কাম কাজ বাদ দিয়ে হাত পা নাড়ার জন্যে রাস্তায় - বা ময়দানে দাড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা - তাদের সমালোচনা করার আমি কে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো পোস্টের ছবিটা। দীর্ঘ নয় বছর বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে আমিও রাস্তায় থেকেছি - পুলিশের পিটানী খেয়েছি - পুলিশের দিকে ঢিল মেরেছি - দেশটাকে অচল করেছি। সেই ৯ বছরে সেলিম-দেলোয়ার- ময়েজউদ্দিন-তাজুল-বসুনিয়া-নুর হোসেনসহ অনেক গনতন্ত্রের সৈনিকরা জীবন দিয়েছে। ছাত্ররা তাদের পড়াশুনা নষ্ট করে রাস্তায় নেমেছে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছি দুই নেত্রী। সেই দুই নেত্রীই আজ গনতন্ত্রের জন্যে বোঝা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের গনতন্ত্রের সংজ্ঞা লেখার সময় এই দুইজনের কথা মাথা রাখতে হচ্ছে। সমস্ত যুক্তি আর ভবিষ্যতের চিন্তার কথা বাদ দিয়ে এই দুই জনের কাছে জিম্মি হয়ে আছে তাদের দল - আর তাদের দুইজনের পিছনে আছে বিরাট একদল মানুষ - যারা সহজেই আবেগে দূর্বল হয়ে যায়।

আমিও একজন সেই সময়ের মানুষ আর আমারও কিছুটা দায় আছে এই দুই নেত্রীকে উপরে উঠানো। জানিনা কত বড় ভুলই না করেছিলাম সেই দিন আমরা।

এই বিষয়েও আরো অপেক্ষা করতে হবে বৈকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৩৯
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×