somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন বিদ্রোহী?

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অলোক কাপালি। শারিরিক ভাবে খেলার জন্য উপযুক্ত নয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে বসে আছে। কবে সে খেলার উপযুক্ত হবে সেই আশায়। বা আদোও কি সে কখনও খেলতে পারবে? অজানা ভবিষ্যত তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে।

এমন অবস্থায় তার কাছে একটা সুযোগ আসলো। সে আবার খেলতে পারবে। যে খেলার স্বপ্ন দেখে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে সেই ক্রিকেট। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল কল্পনার ভবিষ্যত। তার ব্যাটিং এর সামনে অসহায় হয়ে দাড়িয়ে আছে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়ারা। তাদের প্রতিটি প্রচেষ্টায় তার ব্যাটিং এর সামনে মুখ থুবরে পড়ছে। গেলারিতে হাজার হাজার দর্শক। উচ্ছাস্বে মেতে আছে। তাদের মুখে শুধু একটি নাম, অলোক কাপালি।

ব্যাট হাতে ভীরু পায়ে মাঠে গিয়ে দাড়ালো সে। তার কাধে আজ অনেক দায়িত্ব । তাকে প্রমান করতে হবে, না সে খেলার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত । তাকে মুক্ত হতেই হবে। আর তার ফলাফল আমরা সকলেই তো জানি। আই,সি,এল এর বর্তমান আসোরের সর্বাধিক রানের মালিক ও। প্রথম ১০০ রান করার কৃত্তিত্বও তারই। যে খেলোয়ার খেলার মত অবস্থায় নেই সে কিভাবে এসব করতে পারে? নিশ্চয় আমাদের কোন ভুল হচ্ছে। আমাদের ক্রিক্রেট বোর্ডের সন্মানিত কর্মকর্তারা তো কোন ভুল করতেই পারেন না। এটা নিশ্চয় আমাদের দৃষ্টিভ্রম।

বাংলাদেশ সরকার একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করতে চায়। তার জন্য কতই না চেষ্টা। একজন শিশুকে শিক্ষিত করে তুলতে কতই না আয়োজন। শিশুকে শিক্ষিত সমাজে প্রতিষ্টিত করতে বাংলাদেশ সরকারের কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। হ্যা আপনি ঠিকই শুনছেন। ১২ লাখ। সেই শিশু যখন নিজের পায়ে দাড়াতে শেখে তখন সে সব ভুলে যায়। ভুলে যায় তার অতীত। ভুলে যায় তার কর্তব্য।

আমাদের দেশ গরিব । এ দেশের কোন ভবিষ্যত নেই। এদেশে আমার কিছু হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিদেশের রঙ্গিন স্বপ্ন তাকে দেশ ছাড়া করে। টাকা, টাকা দরকার। যে দেশ আমাদেরকে এটি ভাবার যোগ্য করে তুলল সেই দেশের প্রতি কি আমাদের কোন কর্তব্য নেই।

অনেকে বলবেন, আসলে তেমনটি নয়। আমরা প্রবাসে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছি। বা বিদেশ থেকে ভালোমত কাজ শিখে এসে মাতৃভুমির জন্য কিছু না কিছু করব। কিন্তু এসব পরিহাস ছাড়া আর কি। কতজন আছেন যারা শৌখিন জীবনধারাকে বিদায় জানিয়ে আমাদের কষ্টের অংশিদার হবেন।

আমাদের দেশের কিছু খেলোয়ার আজ তাদেরকে টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে টাকা এতই বড় হল? যে দেশ তাদেরকে খেলতে শিখালো । যে দেশ তাদেরকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিল। সেই দেশের হয়ে না খেলে তারা কিনা আজ টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল।

আমরা সবাই তাদের পিঠে একটি ছাপ্পা মেরে দিয়েছি। এরা দেশদ্রোহী। এদের হতে সাবধান। তাই আমার মনে আজ শুধু একটি প্রশ্ন বারবার উকি দিচ্ছে। বিদ্রোহী বা দেশদ্রোহী শব্দের অর্থটা আসলে কি? এরা যদি দেশদ্রোহী হন তাহলে যারা প্রবাশে থেকে দেশের উন্নতির নামে বড় বড় লেকচার দেন তারা কি? তারা কি ধুয়া তুলসি পাতা।

আমরা আসলে দেশে তেমন সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ি সঠিক কাজ পাচ্ছিলাম না। এরকম অনেক অনেক অযুহাত আছে এবং থাকবেও। কিন্তু তারা কি এটা জানে না তাদের উপস্থিতি আমাদের দেশের জন্য কতটা জরুরি। আমরা তাদেরকে দেশদ্রোহী বলি না। বরং তারা যখন দেশের বর্তমান অবস্থায় হা হুতাশ করার জন্য দেশের মাটিতে আসেন তখন আমরা ফুলের মালা দিয়ে তাদেরকে বরন করে নিই। তাদের সন্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দিই। তাদের লোক দেখানো হা হুতাশ শেষ হলে তাদের যথাস্থানে গমন।

আমি জানি আমার লেখাটি যারা পরবেন তাদের প্রায় সবাই প্রবাসি। আপনাদের কাছে আমার শুধু একটি প্রশ্ন, আপনারা কি দেশদ্রোহী নন? অন্তর থেকে জবাব দিন তো। আমি জানি আপনারা অনেক বড় বড় কথা বলবেন। বিভিন্ন যুক্তি দাড় করাবেন। তবে আমি এটিও জানি এর উত্তর দিতে আপনারা সাহস পাবেন না। সত্য বড়ই বেদনাকর।

যদি আপনারা মনে করে থাকেন না প্রবাসীরা বিদ্রোহী বা দেশদ্রোহী নই। তাহলে যারা আই,সি,এল এ খেলতে গেল তাদেরকে কেন দেশদ্রোহী বলে গালাগালি দিচ্ছেন। তারাও তো দেশের মুখ উজ্জল করছে। কেন তাদেরকে দূরে ঠেলে রাখছেন। আমি এটা শুধু প্রবাসীদেরকে বলছি না। আমরা যারা দেশে পড়ে আছি তাদেরকে উদ্দেশ্য করেও বলছি।


আমি একটি গল্প বলেই শেষ করে দিতে চাই। দুই বন্ধু ফুটপাত দিয়ে হেটে যেতে যেতে গল্প করছিল। কথাপ্রসঙ্গে তারা ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা শুরু করে। বাংলাদেশের দক্ষিন আফ্রিকার কাছে হারের প্রসঙ্গে একজন বলল," বাংলাদেশ জাতীয় দল কি খেলতে পারে? ওদের বদলে ঢাকা ওরিঅর কে নামিয়ে দিলে দেখতি। আমাদের জয় একেবারে নিশ্চিত ছিল"। দ্বিতীয় বন্ধুটি জবাব দিল," দেখ ওদের কথা বলবি না। ওরা দেশদ্রোহী। আমাদের উচিত এক এক করে ওদের গুলি করে মারা"। প্রথম বন্ধুটি তখন হেসে বলল," এমন কথা বলিস নারে। তাহলে তুই আগে মরবি। তোর বাবা তো শুনেছি বিদেশে থাকে"।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×