somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাজারো স্বপ্ন ভঙ্গের পরও আমরা স্বপ্ন দেখি

০৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন জন্মেছি তখন বাতাসে ছিল সামরিক জান্তার বারুদের গন্ধ। একটি স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়েও মুক্ত হাওয়া আমি পেলাম না। আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেছি। এখন আমি ২৪ বছরের পরিণত এক যুবক। চোখের সামনে দেখেছি পনেরো বছরের গণতন্ত্র। গণতন্ত্র দেশকে এগিয়ে এনেছে। অন্তত বাতাসে সামরিক জান্তাদের বিষাক্ত গন্ধ তো ছিল না। যে গণতন্ত্র জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই গণতন্ত্রকে আমি মুখ থুবড়ে পড়তে দেখেছি। গণতন্ত্র মানে হয়ে উঠেছিল ক্ষমতায়ন। গণতন্ত্রের নামে হয়েছে, দুঃশাসন, দরিদ্রকে আরও দরিদ্র করে দেয়া, হটকারীতা, দূর্নীতিতে প্রথম হওয়া, হরতাল, সেই হরতালে সরকারের পুলিশকে দিয়ে আগ্রাসী ভুমিকা পালন করানো, ইত্যাদি। গণতন্ত্র আর সংবিধানের দোহাই দিয়ে চলেছে দেশকে ধর্ষণ।
যে সপ্নের দেশ গড়বে বলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার মনে আজ প্রশ্ন জাগে, কোথায় সেই স্বপ্নগুলো আর কোথায় আমার সেই স্বপ্নের দেশ?
তাই কোন নতুন স্বপ্ন আমি দেখতে চাই না। কারণ, পুরণো স্বপ্নকে আমি পূরণ হতে দেখি নি। কারণ, আমি দেখেছি, কীভাবে প্রসাশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, আমি দেখেছি টপ টু বটম কিভাবে সরকারী কিংবা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। আমি দেখেছি, নির্বাচন কমিশনকেও দলীয়করনের হাত থেকে রেহাই দেয়া হয়নি এমনকি রাষ্ট্রপতি পদটিও রেহাই পায়নি। আমি দেখেছি, শুধুমাত্র ভোটে জেতার জন্য রাজাকারদের আশ্রয় নিতে। আমি দেখেছি, রাজাকারদের গাড়ীতে আমার দেশের লাল-সবুজ পতাকা পতপত করে উড়তে। এতো কিছু দেখে আমি স্বপ্ন দেখি কি করে (!) তাছাড়া বিগত পনেরো বছর আমাদের দেখানো হয়নি কোন স্বপ্ন। আমাদের দেখানো এবং শেখানো হয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ। আর তাই একদল আরেক দলের নামে আক্রমান্মক, উত্তেজিত কথামালায় ভরপুর হয়েছে আমাদের আত্মা। তাই খুব বলতে ইচ্ছে হয়, আমরা স্বাধীন দেশে জন্মেছি, হিংসা করার জন্য, অন্য মতাদর্শের মানুষদের ঘৃণা করার জন্য। আমরা জন্মেছি একটি অন্ধকার হতাশায়। আমরা শিখেছি, কিভাবে ইতিহাসকে নিয়ে ছিনিবিনি খেলতে হয়। কারণ, আমরা দেখেছি, ইতিহাসও আমাদের দেশে বিভক্ত। তাই, স্বপ্নের দেশ “বাংলাদেশ” আমরা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু সেই দেশে স্বপ্ন দেখাকে অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি স্বপ্নের কথা বলাও অপরাধ।
তারপরও স্বপ্নরা উকি মারে মনে। এগারো জানুয়ারীর পরিবর্তনে ভেবেছিলাম, হয়তো একটি বিশুদ্ধকরণ প্রকিয়ার মধ্য দিয়ে এই দেশটার কিছু হবে। দুর্নীতিবাজদের ধড়পাকড় হয়েছে। মনে করেছিলাম, একটা পরিবর্তন হতে চলেছে। জনগণ বুক ভরা আশা নিয়ে বার বার সরকারকে প্রশ্ন করলো, একে কবে ধরবেন-ওকে কবে ধরবেন। সেই আশা পূরণ হলো। এমনকি বাঙলার ক্ষমতাধর দুই নেত্রী এবং কথিত রাজপূত্রকেও ধরা হলো। সব স্বপ্ন যেনো পূরণ হওয়ার পথেই ছিল। কিন্তু সব ভুল। আমি ভুলে গিয়েছিলাম পনেরো বছরের রাজনীতি গড়ে উঠতে দেয়নি নতুন কোনো নেতৃত্ব। আমি ভুলে গিয়েছিলাম, আমাদের গণতন্ত্র বাস করে দুটি পরিবারে। গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য তাদের পা স্পর্শ না করলে এ জাতি কিছুই করতে পারবে না। এ জাতি তাদের ভালোবাসে। এর প্রমাণ জাতি দুটি পরিবারকেই বার বার দিয়েছে। আবারও দিলো। সরকারের কাছে দাবি করলো তাদের ছেড়ে দেয়ার। অজানা বেড়া জালে আটকানো সরকারও অনেক কৌশল করে তাদের মুক্তি দিলো। সেই সাথে মুক্তি পেলো আরও কিছু দূর্নীতিবাজ। আবারও আমার স্বপ্নগুলো ধ্বসে পড়লো। আবারও নিমজ্জিত হতে হলো হতাশায়।
নিকৃষ্টতার মাঝে থাকলে মানুষ নিকৃষ্ট হয়ে যায়। কথাটি সত্য প্রমাণিত হলো। তারা পনেরো বছর যেই নিকৃষ্টতা করেছে সেই নিকৃষ্টতার বৃত্ত থেকে তারা বের হতে পারেনি। আবারও শুরু করলো সেই সেকেলে নিকৃষ্ট কার্যকলাপ। সেই একই কথা, নির্বাচনে ষড়যন্ত্র হবে, বিশেষ দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নির্বাচন। এটা হলে নির্বাচন হবে না-ওটা হলে নির্বাচন হবে না, আন্দোলন হবে, হরতাল হবে। অন্যদলেরও একই কথা, তারা নির্বাচন বানচাল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুতরাং তাহলে এও মানতে হবে, যারা নির্বাচনে জিতবে তারা আবারও চালাবে দমন-নীপিড়ন, আবারও হবে দূর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ। তাহলে এভাবেই আবারও চলবে দেশ! বার বার স্বপ্ন ভঙ্গের দেশ বাংলাদেশ। এখানে আমরা অসহায়। অসহায় মানুষদের স্বপ্ন দেখতে মানা। তাই আমরা হতাশায় নিমজ্জিত এক জাতি পরিণত হচ্ছি। যেমন, হতাশায় ডুবে হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন,

রাষ্ট্রচালকেরা- তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ, যদিও অত্যন্ত শক্তিশালী জনগণকে মনে করছে উচ্ছিষ্টভোজী পশুপালন, তারা নর্দমা ঘেটে জীবন ধারণ করবে, বা করবে না। বর্বরতা একে পিষ্ট করে চলেছে, মিথ্যাচার একে দূষিত করে চলেছে, অনধিকার মানুষকে অসহায় পশুতে পরিণত করছে। আমি কোনো মুক্তির লক্ষণ দেখি না, অন্তত আমার জীবনে মুক্তি দেখবো বলে মনে হয় না.......

[আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম, হুমায়ুন আজাদ]

সত্যিই তিনি মুক্তি দেখে যাননি। বরং বিধাতা তাকে এই নিকৃষ্টতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

২.

কিছু কিছু ঘটনা মনে স্বপ্ন দেখার সাড়া জাগায়। যেমন, যখন দেখি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রাষ্ট্রপতি রূপে প্রতিয়মান হয় একজন ব্ল্যাক। অথচ গত শতাব্দীতেও এই ব্ল্যাকদের উপর চলেছে ভয়াবহরকমের অত্যাচার। আর সেই ভয়াবহতার অবসান তো ঘটেছেই, উল্টো ইতিহাস রচনা করে চলে আসলেন বারাক ওবামা। তারুণ্যের স্রোতে বারাক ওবামা হলেন পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি।
If young people have vision then they make change. এই বাক্যটিই এনেছে পরিবর্তন। হয়তো, আজ থেকে ৪০ বছর আগে কোন এক শিশুর মনে দাগ কেটেছিল ব্ল্যাকদের উপর অমানবিক অত্যাচার। আর তখন সে হয়তো মনে মনে বলেছে, এ অন্যায় সে কখনো করবে না এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকেও শেখাবে "এটা অন্যায়"। এভাবেই হয়তো পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনতো এভাবেই আসে। লক্ষ্য এবং স্বপ্ন থেকে আসে পরিবর্তন। আর এভাবেই পরিবর্তন আসলো যুক্তরাষ্ট্রে। পরিবর্তনের সুর নিয়ে আসলেন বারাক। তাই তিনি তার ভাষণে বললেন,

আমরা যে পরিবর্তন চাই, তা কেবল নির্বাচনে বিজয় নয়; বরং এই বিজয় আমাদের সেই পরিবর্তনের জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছে মাত্র। কাজেই এখান থেকে আমাদের সরে গেলে চলবে না। আপনাদের অংশগ্রহণ ছাড়া সেই পরিবর্তন সম্ভব নয়।..........

বারাক ওবামার ভাষণ আমাদের সবার জন্য উৎসাহ জনক। তার ভাষণে স্বপ্ন আছে, আছে বাস্তবতা। আছে অতীত, আছে ভবিষ্যত, আছে লক্ষ্য।
আমাদের নেতৃত্বে কোন স্বপ্ন নেই কোন লক্ষ্য নেই। তারপরও শুধু নতুন গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে আগামী ১৮ই ডিসেম্বর আমাদের নির্বাচন। তারপরও হতাশায় থেকেও আমরা আশা করি সেই নির্বাচন একটি পরিবর্তন আনবে। সামনের বছরের সকাল হবে একটি নতুন সরকারের সকাল। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলোতে কোনো দলবাজী হবে না, দূর্নীতি হবে না, হটকারীতা হবে না। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখি- নতুন, সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের চেষ্টা করা হবে, মানুষকে দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়া হবে। তবে স্বপ্নকে পূরণের দায়িত্ব আমাদের। নির্বাচনে আমাদের তাদের ভোট দিতে হবে যারা যোগ্য ও দূর্নীতি মুক্ত। যাদের মধ্যে স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতা আছে, যাদের মধ্যে আছে হতাশার অন্ধকারাচ্ছান্ন ঘর থেকে মুক্ত করার শক্তি। তখনই আমরা মুক্তি পাবো। মুক্তি পাবে আমার দেশ বাংলাদেশ। তবেই আমরা এক ধাপ এগিয়ে যাবো স্বপ্নের দেশ গড়ায়।
এমনই একটি স্বপ্ন দেখি। হাজারো স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তারপরও আমরা বাঙালী জাতি স্বপ্ন দেখি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×