somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলানী হত্যাকারী নির্দোষ ।। বিচার বঞ্চিতা ফেলানী, বঞ্চিত বাংলাদেশ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। শীতের সকাল। কুড়িগ্রাম জেলার অনন্তপুর সীমান্ত। কথিত আছে প্রতিবছর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তে দখলদার ইসরাইল যত পরিমাণে ফিলিস্তিনি খুন করে তার চাইতেও নাকি বেশি হত্যাকা- ঘটিয়ে থাকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের কোন না কোন অংশে বিএসএফ এর হাতে নির্যাতিত হয়, আটক হয় বাংলাদেশের মানুষ। ভয়ঙ্কর সেই মৃত্যুফাঁদ অতিক্রম করতে গিয়ে বাংলাদেশের মেয়ে ফেলানী বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়। বাংলাদেশের নাগরিক ফেলানী দিল্লিতে কাজ করত গৃহকর্মী হিসেবে। দীর্ঘ দশ বছর সেখানে সে কাজ করে। বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর সাথে কাটাতারের সীমানা পার হয়ে দেশে আসার চেষ্টা করে সে। কিন্তু বিধিবাম। কাটাতারের বেড়ায় থাকা অবস্থায়ই সে বিএসএফ এর গুলিতে প্রাণ হারায় এবং দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা সে কাটাতারে ঝুলে থাকে। পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএসএফ তখন দাবি করে তারা আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালিয়েছে। তাদের বক্তব্যে অবাক হয় বিশ্ব বিবেক। পনের বছর বয়সী একজন কিশোরী সশস্ত্র বিএসএফ এর কাছে হুমকিস্বরূপ! বিএসএফের হাতে ফেলানীর এই নির্মম হত্যাকা-ের বিচার দাবি করে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তিরা। নিহত ফেলানীর বাবাও মিডিয়ায় মেয়ে হত্যার বিচারের দাবি জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়। বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১২ সালের মার্চে নয়াদিল্লীতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দেন বিএসএফের মহাপরিচালক। অবশেষে বিএসএফ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় দ-বিধির ৩০৪ ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন) এবং বিএসএফ আইনের ৪৬ ধারায় বিচার শুরু হয় ফেলানী হত্যার।
এরই ধারাবাহিকতায় বিএসএফ সদর দপ্তর ‘জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট’ গঠন করে এবং আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশের দুইজন সাক্ষী, একজন আইনজীবী এবং বিজিবির একজন প্রতিনিধিকে ভারতে যেতে বলা হয়। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুুড়িগ্রামের ৪৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ, কুড়িগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন এবং ফেলানীর বাবা মো. নুরুল ইসলাম ও মামা মো. আব্দুল হানিফকে ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়। গতকাল এ হত্যাকা-ের রায় ঘোষিত হয়।


রায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সেই আদালত। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরপরই মুক্তি দেওয়া হয় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদস্য কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে। বিএসএফ সূত্র এই খবর নিশ্চিত করেছে। পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারক প্যানেলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদী। আদালতটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোর্টমার্শালের সমতুল্য। এখন চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য রায়টির কপি বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিলো। ফেলানী হত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিতে বাংলাদেশ থেকে তার বাবা ও মামা ভারতে গিয়েছিলেন। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল যে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা হতে পারে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের। কারণ এমনকি ইচ্ছাকৃত হত্যাকা-ের ক্ষেত্রেও বিএসএফ এর আইনে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ে ন্যুনতম শাস্তি না হওয়াটা হতবাক করেছে সবাইকে।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এ বিচারের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবেন। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমার গাওয়া ৩টি নজরুল গীতি শেয়ার করলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা ও সাম্যের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×