somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লীজ এবার আওয়াজ উঠান!

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাদের মোল্লাকে ফাঁসি নয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। অনেকেই এই রায়কে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। প্লীজ আপনারা লজ্জা পাবেন না। লজ্জাকে তালাবন্দ করে রাখুন। প্লীজ কিছু করুন।

বিশাল একটা পরিবার আমাদের। আমার দাদারা ছিল ৮ভাই ১বোন। আমার কতজন কাজিন আছে তার সঠিক সংখ্যা আমার অজানা। এমনকি সব চাচাকেও আমি চিনি না। তবে পেপারে যখন পড়েছিলাম আলুব্দি গ্রামের সাফি মোল্লা, আমির হোসেন মোল্লা কোন এক রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তখন আব্বুর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম এরা আমার জ্যাঠা হন। খুশি হয়েছিলাম একটু হয়তো গর্বও হয়েছিল সেদিন আমার।

দিনের বেলা টিভি খুব একটা দেখা হয়না আমার। ভেবেছিলাম জামায়ত হয়তো হরতাল ডেকেছে বিচার বন্ধের দাবীতে। কাদের মোল্লার ফাঁসি নয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে এই খবরটা পেয়েছি তাই অনেক দেরীতে। যখন শুনেছিলাম তখনই অনেক খারাপ লাগেছিল এবং তখনো আমি জানোয়ারটার ফাঁসির দাবির পক্ষে ছিলাম।

১৯৭১ সালে আমদের গ্রামে পাকিস্তানিরা হামলা চালায়। লুট করে আমার দাদীদের গহনা, পুড়িয়ে দেয়া হয় ধানের গোলা, গুলি করে মারা হয় হালের বলদগুলোকেও। আমার দাদা মসজিদে গিয়েছিলেন নামায পড়তে। যেই জামায়াত ধর্ম নিয়ে এত মায়া কান্না করে, শুধুমাত্র ধর্মের জন্য যারা আজো পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে; তাদের সেই প্রি্য় ধার্মিক ভাইরা মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যায় আমার দাদাকে। তারই আরেক ভাইয়ের (হাচ্চু মাদবর) চোখের সামনে খুন করা হয় তাকে(নয়া মিঞা মাদবর) এবং তার আরেক ভাই(বাঁশি মাদবর)কে । গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবেরের সন্তান ছিলেন তারা কিন্তু জানাযার ভাগ্যটা পর্যন্ত তাদের হয়নি। আমার বাকি দাদাদের হাজারো কাকুতি মিনতি স্বর্ত্তেও লাশ ফেলে দেয়া হয় এক কুয়াতে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে যেয়ে হাতে গুলি খান আমার নানা। যুদ্ধের নয়টা মাস অবর্ননী্য় যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে আমার পরিবার। যার বিবরণ শুনলে এখনো ভয়ে শিউরে উঠি।

যুদ্ধের পর আমদের পরিবার কখনো সরকারের কাছে কোন সাহায্য চাইতে যায়নি। তবে সরকার এসেছিল আমদের গ্রামের মানুষের জমি অধিগ্রহন করতে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, আগুন্দা, ক্যান্টেনমেন্ট সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ বিঘা জমি অধিগ্রহন করে নেয় সরকার তৎকালীন বাজারদরে। এখন সেই জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েকশ গুন। আমার দাদাদের থেকে অধিগ্রহন করা জমিতে আজ সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে মিরপুর ক্যান্টেনমেন্ট। সারা জীবন যারা চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন জমি হারানোতে তাদের কি অবস্হা হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তারপরও সরকারের কাছে আমদের কিছুই চাও্য়ার ছিল না। ছিল না এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ। আল্লাহর রহমতে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। হারানো প্রতিপত্তি ফিরে না পেলেও সমাজে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সবই অর্জন করতে পেরেছে আমাদের পরিবার। এতেই আমরা তুষ্ট ছিলাম।

কিন্তু এখন আমরা তুষ্ট নই। আর আমরা চুপ করে থাকতে পারছিনা। যুদ্ধের কারনে আমাদের পরিবার সব হারিয়েছিল। সহায় সম্পত্তি থেকে শুরু করে মান সম্মান মানসিক শান্তি স-ব-ই। কিন্তু আপনজন হারানোর বেদনা যে কত তা তো পরিমাপযোগ্য নয়! এই যুদ্ধ যারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়াছিল তাদের সবাইকে হয়তো শাস্তি দেয়া যাবেনা। কিন্তু যেসব রাজাকার তাদেরকে সাহায্য করেছিল তাদের বিচার দাবী করাটা কি খুব বড় চাওয়া হয়ে গেল? আমার দাদী ৪১বছর ধরে বিধবা। বয়স হওয়ার পরও সে ভোট দিতে যা্য় শেখের বেটিকে (শেখ হাসিনা)। শুধুমাত্র একটা আশায় যে হয়তো তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাতে পারবেন।

১৯৭১ সালে কাদের মোল্লা, আমির গুন্ডা এবং মন্ডল অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে মিরপুরবাসীর উপর। শুনেছি আলুব্দির মানুষের উপর বর্বরতা চালানোর নেতৃত্বে ছিল আমির গুন্ডা এবং কাদের মোল্লা। আমির গুন্ডা ১২বছর জেল খেটে পাকিস্তানে চলে গেছে। কিন্তু কাদের মোল্লা ছিল বহাল তবিয়াতে। এখন তাকে দেয়া হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এই নরপশুটা যে ৪১ বছর বেঁচে ছিল সেটাই তো অনেক বেশি। আমরা সরকারের কাছে কোন সংবর্ধনা চাইনা, চাইনা কোন টাকা পয়সা, এমনকি চাইনা কোন কোটা সুবিধা। শুধু চাই এই নরপশুটার সঠিক বিচার হোক।

'৭১এ যেসব দেশ আমদের সাহায্যের বদলে বিরোধিতা করেছে কেন তাদের প্রেশারে এদের শাস্তি লাঘব করা হবে? সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে যে এই যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি যে মুক্ত হয়ে যাবে না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে? কত মানুষকে খুন করলে আর কত্তটুকু বর্বরতা চালালে ফাঁসি দেয়া হবে? যে শহরের বাতাস থেকে আমরা অক্সিজেন গ্রহন করি সেই বাতাস থেকেই এই নরপশুটা এখনও অক্সিজেন নিচ্ছে! লাক্ষো শহিদদের আত্মত্যাগকে জুতোপেটা করে ক্ষমতার অট্টহাসি হাসছে! এসব ভেবে কি আপনাদের মন বিষিয়ে উঠে না? ঘৃনায় রি রি করে না? প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করে না? নাকি আমরাও শীতল রক্তের সরীসৃপ হয়ে গেছি!

যারা এই লেখা পড়ে ভাবছেন বর্বরতা তো আমার পরিবারের সাথে হয়েছে আপনার কি। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি ১৯৭১এ আমার পরিবারের উপর যে নৃশংসতা হয়েছে ২০১৩ তে আপনার পরিবারের সাথেও এমন হতে পারে। আজ যদি আপনারা আমাদের পাশে না দাঁড়ান আপনার বিচার দাবীর সময়ও হয়তো আপনি কাউকে পাবেন না। তাই সবাইকে বলছি একজোট হন। '৭১ এ একজোট হয়ে পাকিস্তানিদের হারিয়ে দিয়েছি আমরা তবে এখন কেন ওদের দোসরদের শাস্তি দিতে পারবো না! তাই সবার কাছে অনুরোধ ৪১বছর অনেক চুপ করে থেকেছি আর না। প্লীজ এবার আওয়াজ উঠান।

অভাগা আলুব্দী গ্রামের মেয়ে
সামিনা আলী
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×