somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছায়া

০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈশাখী আজ আসছে।তনুজার মুখ ভার।মেয়ে যখন মায়ের কাছে আসে সব মায়ের হৃদয় তোলপাড়
করে উচ্ছাসের ঢেউ,অথচ তনুজার বুক কাঁপছে।বাড়ি ছেড়ে পালাতে চায়ছে সে।যাবে কোথায়?দ্বিতীয়
কোন ঠিকানা নেই তার।
তনুজার মেয়ে ডাক্তার।এতদিন তার পোস্টিং ছিল বাঁকুড়ার এক গন্ডগ্রামে।এখন বদলী হয়েছে।
আগামীকাল এখানকার হাসপাতালে যোগ দেবে সে।ভাবতে বুক ধড়ফড় করে তনুজার।
বৈশাখী যখন দামাল,তনুজার মা বলেছিল,এই মেয়ের যা বুদ্ধি,তোকে একদিন
চরাবে।জীবাণুর মতো ছোট্ট সেই বাক্যটি অসুখের মতো গ্রাস করেছে তনুজার মন।নিজের
আতঙ্কের কথা আশঙ্কচিত্তে পল্লবকে বলেছিল সে।হেসেছে পল্লব--দুর পাগলী,লেখাপড়া শিখিয়ে
মেয়ের বিয়ে দেব,শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে সে তোমার উপর খবরদারি করতে আসবে নাকি!
ডাক্তার হয়ে পল্লবের স্বপ্ন এবং ত্যাগ সফল করেছে মেয়ে।সেই সুখের দিন দেখা হয়নি পল্লবের।
ছাই আর ধোয়াঁ হয়ে মাটি-জল-আকাশে মিশে গেছে ।তাতে জেদ বেড়েছে বৈশাখীর।গ্রামের হাসপাতালে ডাক্তারী করবে সে,চিকিৎসার অভাবে পল্লবের মতো আর কেউ যেন না মরে।
এতদিনে ছাড়পত্র মিলেছে,এলাকাময় আনন্দ-লহরী,শুধু তার কুঁড়েঘর আগলে থাকা মা, ঘরের
অন্ধকার কোন খুঁজছে।
মেয়ে ডাক্তার মানেই রাগী ,তাতে আবার অবিবাহিত।ওরা নাকি তেল-ঝাল-নুনের বিরোধী।
একাদশী-গঙ্গাস্নান সব বুঝি বন্ধ হবে তনুজার।কথায় কথায় বেরিয়ে পড়বে স্টেথো,থারমোমিটার,
ইনজেকশান।বৈশাখীকে জন্ম দিতে গিয়ে,মেয়ে-ডাক্তারের চড় আর ধমক খেয়ে তেমনই ধারণা
হয়েছে তনুজার।নিজের সন্তান তবু বৈশাখী যেন কুয়াশার মতো তনুজার কাছে।ছোট থেকেই
হোস্টেলে থেকেছে।ছুটিছাটায় যখন আসত বাবার কাছেই থাকত সারাক্ষণ,মা যেন তার গ্রহান্তরের
মানুষ।
ডাক্তারের অভাবে ধুঁকছিল গ্রামের হাসপাতালটি,বৈশাখীর উপস্থিতি আর উদ্যমে সেখানে যেন
প্রাণের হুল্লোড় উঠল।সারাদিন সেখানেই থাকে সে।তনুজার পাঠানো টিফিন-কেরিয়ার ,কতদিন
ফাঁকা হয়নি।শুনে তনুজার রাগ হয়।কিছু বলতে সাহস হয় না।
বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয় বৈশাখীর।দেখে,বারান্দার খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঢুলছে তনুজা।
ক্লান্ত বৈশাখী স্নিদ্ধ হেসে বলে--তুমি এখনও ঘুমোওনি ?
ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ায় তনুজা।গায়ে-মাথার আঁচল ঠিক করে বলে-তোমাকে খেতে দেব বলে
বসেছিলাম,ওই একটু চোখ লেগে গেল।
আমি হাতমুখ ধুয়ে,সব গরম করে খেয়ে নেব,তুমি ঘুমোও-গে।
--তাই কখনো হয়,তুমি কত কাজ করে এলে,হাতমুখ ধুয়ে এসো,আমি সব ঠিক করে রাখছি।
বলে ব্যস্ত-ত্রস্ত পায়ে রান্নাশালে হাঁটে তনুজা।
মায়ের কথা আচরণে কৌতুক বোধ করে বৈশাখী।সে কিছু জানতে আগ্রহী হলে দায়সারা উত্তর
দেয় তনুজা।তার নিজের কিছু জানার নেই।পুতুলের মত সব কাজ করে নিরবে।যেন চুরির দায়ে
ধরা পড়া মানুষ।তার বিষাদমাখা মুখ দেখে বৈশাখীর মনে হয়,তার মুখের আদল মায়ের মত,মনের
গড়ন আলাদা কেন ?
সকালে হাসপাতাল যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে বৈশাখী দেখল,তার টেবিলে চা-জলখাবার নেই।
ভাবল,মা হয়তো এখনো গঙ্গাস্নান করে ফেরেনি।আনমনে খবরের কাগজ পড়তে শুরু করল সে।
সব পড়া হয়ে গেল তবু তনুজা ঘরে ঢুকল না দেখে চিন্তা হল,জ্বরটর হল না তো ?
বারান্দার তিনদিকে খলপা লাগিয়ে ঘরের মত করেছে তনুজা।সেখানে একটা চৌকি পাতা,তাতে
মাদুর বিছানো,শুয়ে আছে তনুজা।বৈশাখী কতবার বলেছে,ঘরে শোবে চল।তনুজা শোনে না,বলে
--এখানে ঠাকুরের পায়ের নিচে আরাম পাই।
জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে তনুজা,সকালের রোদ ছড়িয়ে পড়েছে তার শুভ্র গালে।বৈশাখীর
ইচ্ছে হল ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে।পারল না।অভিমান হয়।মা কোনদিন জড়িয়ে ধরেনি তাকে।
আদর করেনি কতকাল।পরের মায়ের মত সরে থেকেছে দূরে।
তনুজার কপালে হাত রাখল বৈশাখী।ধড়মড় করে উঠে বসল তনুজা।শাড়ির অাঁচল ঠিক করতে
করতে লজ্জিত স্বরে বলল--জ্বরজালা কিছু হয়নি বাছা,কেন যে আজ ঘুম ভাঙল না,যাই তোমার
চা করে আনি।
তনুজার হাতখানি ধরল বৈশাখী,আজ তোমাকে কিছু করতে হবে না,সব আমি করব।মায়ের জন্যে
না হয় একদিন ছুটি নিলাম।
--তাই কখনো হয়,হাসপাতালে কত রোগী,তুমি তাদের যত্ন না নিলে তোমার বাবার আত্মা কষ্ট
পাবে।
--সিরিয়াস পেশেন্ট কেউ নেই,এমারজেনসী কিছু হলে আমার কাছে লোক আসবে।এখন লক্ষী
মায়ের মত তুমি বল তো,তুমি আমাকে এড়িয়ে চল কেন,কী দোষ করেছি তোমার কাছে!
শেষের কথাটুকু ধরা গলায় বলল বৈশাখী।তার আয়ত চোখ দুটিতে টলমল করে উঠল অভিমানের
শিশিরবিন্দু।মেয়ের অনুযোগ মায়ের বুকের তলার মাটি ভিজিয়ে দেয়,স্নেহের পদ্মদিঘিতে উথালপাথাল করে ঢেউ।মাটির মেঝেয় দৃষ্টি রেখে সে বলল--তুমি বিয়ে করলে না কেন ?
বিয়ের কথায় লজ্জার লাল আবির ছড়িয়ে পড়ল বৈশাখীর চোখেমুখে।স্নিগ্ধ হেসে সে বলল--তুমি
তো আমাকে কখনো বিয়ের কথা বলোনি মা,এখন বললে তাই বলছি,তুমি যাকে আমার উপযুক্ত বলে মনে করবে তাকেই মালা দেব।
মৃদু হেসে তনুজা বলল--এই তো আমার মেয়ের মত কথা।অথচ একদিন আমার মা বলেছিল,
তোর মেয়ে তোকে চরাবে,সেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি,বিয়ের কথা বলতে সাহস হয়নি।
--পাগলী মা আমার,ছায়া সে যতই বড় হোক,গাছের চেয়ে নিজেকে বড় ভাবে না সে!
বৈশাখীর কথায় বৃষ্টি-স্নানের পুলক অনুভব করল তনুজার তৃষিত হৃদয়।মেয়েকে বুকে জড়িয়ে
চোখ বন্ধ করল সে পরম বিশ্বাসে॥





২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×