somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান ইলেভেন এর দুই বছর বা এক যুগ পূর্তি !!!

০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৭ সাল থেকে মেয়েটিকে চেনে ছেলেটি। বড় বোনের কাছে পড়তে আসতো মেয়েটি। ওরা থাকতো একই কলোনীতে। ছেলেটি আর মেয়েটির পরিবারের মধ্যে এক সময় সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবে ৭৭ থেকে ৮২। এক সময় ছেলেটির বাবা বদলী হয়ে যায়। কলোনী ছেড়ে তারা চলে যায় অন্য কোনো স্থানে। মেয়েটি থেকে যায় আগের স্থানেই।

ছোট কাল থেকেই ছেলেটি বাউন্ডুলে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, যখন তখন দেশের এ স্থান থেকে সে স্থানে ঘুরতে চলে যায়। নামে মাত্র পড়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাস টাসের ধার ধারতো না। ৯১ সালে ছেলেটি কঠিন ভাবে জড়িয়ে পড়ে একটা মেয়ের সাথে। তদ্দিনে সে চাকুরী নিয়ে ঢাকার বাইরে। প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসা আর মেয়েটির সাথে দেখা করা ছিল ছেলেটির নিয়মিত রুটিন। ছেলেটির পরিবার, বন্ধুমহল- সবাই জানতো ওদের বিষয়টি। ৯১ থেকে ৯৪। ভালোই যাচ্ছিল ওদের দিনকাল।
হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। সে ঝড়ে টানা ৪ বছরের সম্পর্কটা তছনছ হয়ে যায়। স্বল্প আয়ের ছেলেটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা মেয়েটি স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। মেয়েটির বড় দু বোনের নিজেদের ঢাকায় বাড়ি আছে। আর ছেলেটি...? ৫/৬ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী করে। কী হবে মেয়েটির ভবিষ্যৎ ? তাই ঠান্ডা মাথায় (!) বসে সম্পর্কের ইতি ঘটালো মেয়েটি। ছেলেটি আর তার বন্ধুদের তরফ থেকে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে চেষ্টার কমতি ছিল না, হয়নি। সবাই ব্যর্থ হয়।

৯৫ সালের ফেব্র“য়ারি মাস। বই মেলায় ছেলেটি একটা স্টল নেয়। সে সময় হুমায়ূন আহমেদের যুগ। তাই হু.আহমেদের একক বইয়ের দোকান করে। দোকানের নাম- কোথাও কেউ নেই। মধ্য ফেব্র“য়ারির কোন এক ছুটির দিনের ঘটনা। দুপুরের পর একদল মেয়ে এলো দোকানে। এর মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে ছেলেটির এক বা একাধিক হার্টবিট মিস হলো। সমস্যা হচ্ছে, মেয়েটি খুব চেনা-কিন্তু চিনতে পারছে না ছেলেটি ! বেশ কিছু সময় পর মেয়েটির বান্ধবীরা পরিচয় দিলো। তাইতো ! ছেলেটি চমকে উঠে। এইতো সেই মেয়ে, যাকে নিয়ে ছোট বেলায় সে স্বপ্ন দেখতো। এ মেয়েটিকে ৮২ সালের পর আর দেখেছে কি না, মনে নেই।

বাসায় ফিরে ছোট ভাই বোনদের মেয়েটির গল্প বলে। শুনে ভাই বোনেরা উল্লসিত হয়। নিজেদের মধ্যে জরুরি মিটিং করে। বাবা কে গিয়ে বলে- ‘ আমরা মেজদার জন্য পাত্রী পেয়েছি। আপনি অনুমতি দিলে ওর বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা করা যায়।’ ছেলেটির মা মারা গেছেন ৮৮ সালে। বাবা দীর্ঘদিন থেকে একা। তার বড় ছেলে বৌ নিয়ে আলাদা থাকেন। সপ্তাহান্তে বাবার সাথে দেখা করে যায়। সারা দিন ছেলে মেয়েরা স্কুল-কলেজ আর অফিসে ব্যস্ত থাকে। সব ভেবে বাবা রাজি হন। ৯৬ সালের মাঝামাঝি মেয়েটির পরিবারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়।ছেলেটির বাবার সাথে মেয়েটির বাবার আগে থেকেই চমৎকার সম্পর্ক ছিল। যদিও ম্যালাদিন যোগাযোগ নেই। কিছুদিন সময় চেয়ে নেয় মেয়েটির বাবা। অবশেষে হ্যাঁ বলেন তিনি।

৯৬ সালের ১ নভেম্বর মহা ধুমধামের সাথে মেয়েটি আর ছেলেটির বিয়ে হয়। তারপর ? কতকিছু ঘটে পৃথিবীতে...। ওদের জীবনে। মেয়েটির বাবা মারা যান ৯৮ সালে। ২০০০ সালে ওদের এক ছেলে সন্তান হয়। ২০০১ সালে ছেলেটির বাবা মারা যান।

আজ ২০০৮ সালের ১ নভেম্বর। আজ বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেনের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি। আর ছেলেটি এবং মেয়েটির বিয়ের এক যুগ পূর্তি। হাসি-আনন্দ-দুঃখ-বেদনা-কষ্ট-সুখ নিয়ে ওরা দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছে ১২ বছর। ওরা ভাল আছে, সুখে আছে। আসুন, ছেলেটি আর মেয়েটির জন্য দোয়া করি- ওরা আমৃত্যু সুখে থাকুক। ভাল থাকুক।

পুনশ্চ : এই গল্পের সাথে লেখকের জীবনের সম্পর্ক কাক তাল মাত্র !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:১৬
৩৫টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×