somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুদাই

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সভ্যতা শুধু নদী আর নারী দখলের ইতিহাস নয়, সভ্যতা সময় সময় পেশাজীবিদের ভেতরের সংঘাত। কৃষক আর সৈনিকের সংঘাত সভ্যতা। ভুলুণ্ঠিত কৃষকের প্রতিরোধ আর পশ্চাৎসরণের উপন্যাস সভ্যতা।

নগরের পত্তন হতো নদি অববাহিকায়, পলল জমিতে মানুষ স্থানু হতে শিখেছিলো, সেই থেকে নদী ও সভ্যতা সমার্থক। কৃষিজীবি মানুষের সংস্কৃতির সাথে নাগরিক মানুষের সংস্কৃতির যোগাযোগ নেই, যাযাবর মানুষের সাথে কৃষিজীবি মানুষের সংস্কৃতির মিল নেই। তবু অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এরা পারস্পরিক লেনদেন করে, যাযাবরের তাঁবুতে দুর দেশের সাংস্কৃতিক চিহ্ন থাকে, সেসবের গায়ে বিনিময় মূল্য লেখা থাকে, শস্যের বিনিময়ে কৃষক সেসব সাংস্কৃতিক চিহ্ন গৃহে নিয়ে আসে, গৃহসজ্জা করে ।

ইতিহাস এবং পৌরাণিক গাঁথা মানুষের স্মৃতিবাহিত, শব্দে প্রকাশিত অনুভবগুলো মানুষের স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে বিমূর্ত হয়ে উঠে।

অনেক আগে কোনো এক সময় ইউফ্রেটাস নদীর অববাহিকায় কৃষিজীবি সভ্যতার পত্তন হয়েছিলো। তবে সময়ের প্রয়োজনে নদীকে বেষ্ঠন করে গড়ে ওঠা নগরগুলোর প্রতিরক্ষা দেয়ালের বাইরে ঠাঁই নিয়েছিলো কৃষিজীবি মানুষেরা। কৃষিজীবি মানুষেরা বললে হয়তো সম্পূর্নতা বলা হয় না, বরং বলা ভালো নগর ছিলো সৈনিকের আখরা। সেখানে রাজাধিরাজ, নগরপিতা আমত্য এবং সৈন্যসমেত বসবাস করিতেন, তাদের যুদ্ধের প্রয়োজনেই নগরের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মিত হয়েছিলো। রাজা পিতার মতোই প্রজাপালন করিতেন, প্রজাদের বিপদাপদে তাদের দেখভাল করতেন। রাজা সম্মানিত ছিলেন।

আর নগরের প্রতিরক্ষা দেয়ালের পাশে গড়ে উঠেছিলো আলাদা গ্রামভিত্তিক সভ্যতা। সেখানে মানুষ তাঁবুতে আর মাটির ঘরে বসবাস করতো, তার নদী থেকে মাছ ধরতো, দেব-দেবির উপাসনা করতো এবং কৃষিকাজ ও পশুপালন করে রাজাকে তার ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দিতো।

সভ্যতার গল্পগুলো এমনই। সেখানে পরিত্যাক্ত নগরের পাশে নতুন আরও বেশী সুরক্ষিত নগর গড়ে উঠতো। প্রাণচাঞ্চল্য আরও একটু দুরে সরে যেতো। নতুন নগরে প্রবেশের আগেই নগরের মূল চত্ত্বরে সম্রাটমুর্তির অভিষেক হতো। সম্রাটের নামেই নগর পরিচিত হতো, বিশাল বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠবার আগ পর্যন্ত নগরসভ্যতার ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে অনেক বারই। একটা পর্যায়ে পারিবারিক শাসনের ইতিহাস শুরু হলো, শুধুমাত্র যোগ্য মানুষই নগরের প্রতিপালক হয়ে উঠবার সামর্থ্য হারালো, বরং পরিবারকেন্দ্রীক নগর গড়ে উঠলো। ডাইন্যাস্টি গড়ে উঠবার পরের গল্প এটা।

আব্রাহাম এমনই কোনো এক সময়ে প্রায় ৪০০০ বছর আগে জন্ম নিলেন। অবশ্য তার নামের উৎপত্তি বিবেচনা করলে মনে হয় এটা আদতে তার নাম নয় বরং পদবী। হেরণের মৃত্যুর পরে পিতা, স্ত্রী ও ভাতুস্পূত্র সমেত তার উর নগরী ছেড়ে অন্য কোনো প্রতিশ্রুত ভুখন্ডের দিকে যাত্রা।

এরই ধারাবাহিকতায় আব্রাহাম পৌঁছালেন মিশরে, সেখানে তার সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি কুনজর পড়তে পারে ভাবনায় তিনি নিজ স্ত্রীকে নিজের বোন পরিচয়ে পরিচিত করতে চাইলেন। অবশ্য ফারাওয়ের কুদৃষ্টি ঠিকই পড়লো সারা'র উপরে, সারা' ফারঅয়ের হারেমে বন্দী হলেন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আব্রাহাম কেনানের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলেন, তার পিতার মৃত্যু হয়েছে তখন, সুতরাং সঙ্গী শুধুমাত্র তার স্ত্রী এবং ভাতুস্পূত্র, এবং তাদের অনুগত দাস এবং গবাদী পশু। পথিমধ্যে ভাতুস্পূত্র লুতের দাস এবং আব্রাহামের দাসেদের ভেতরে সংঘাত শুরু হলে আব্রাহাম লুতকে নিজের ভুখন্ড খুঁজে নিতে অনুরোধ করলেন।

লুত জর্ডান নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠা নগরপূঞ্জের পাশের তৃনাবৃত ভুখন্ড বেছে নিলেন নিজের জন্য। আব্রাহাম সস্ত্রীক চলে গেলেন হেরনে। লুত সদম-গুমরাহ নগরের পাশের পলল জমিতে গবাদি পশু চড়িয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করছেন। আব্রাহাম হেরনে বসে সংবাদ পেলেন সদম এবং গুমরাহ দখল করে নিয়েছে কোনো এক সম্রাট। তবে এসবের সাথে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধৃত হয়েছে তার ভাতুস্পূত্র। আব্রাহাম যুদ্ধযাত্রা করলেন অনুগত দাসেদের নিয়ে।

কৃষকের স্বজাতিকে বাঁচাটে মরিয়া লড়াই করেছে, কখনও কখনও বিজয়ের মুকুট পড়েছে। তবে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তিত হয় নি মোটেও।

মালিক ই সাদিক, সালেম নগরীর রাজা এই বিজয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ আব্রাহামকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক দশমাংশ প্রদান করলেন, তবে আব্রাহাম ভাতুস্পূত্রকে সদম নগরে রেখে নিজের আবাসে ফিরে গেলেন।

মালিক ই সাদিক, কিংবা বিশ্বাসীদের মালিক একজন নিছক সম্রাট, তার পরিচয় কোনো এক মহান সম্রাটের অনুগত চর। তবে সেই মহান সম্রাটের উৎপত্তি সূর্যদেবের ঔরসে নয়।

লুতের বিড়ম্বিত জীবনের সংবাদ ফেরেশতা বাহিত হয়ে যখন ইব্রাহিমের কাছে পৌঁছালো তখন ইশ্বর সদম ও গুমরাহ বাসীর উপরে ক্ষিপ্ত। তিনি এই নগর ধ্বংস করে দিতে চান, ইব্রাহিম তাকে এই কাজ না করার অনুরোধ জানালেন। ইশ্বর শর্ত দিলেন, যদি সদম নগরীতে ৫০ জন বিশ্বাসী মানুষ পাওয়া যায়, তিনি এ নগর ধ্বংস করবেন না। এরপর সংখ্যা কমতে কমতে ২ এ এসে থামলো। তবে সদমবাসীদের ভেতরে লুতের পরিবার ব্যতিত অন্য কোনো বিশ্বাসীর খোঁজ পাওয়া গেলো না।

ইশ্বরের প্রতিনিধি এসে পৌঁছালো লুতের কাছে। কোরানের ভাষ্য, সুরা হুদ আয়াত ৭৭-৭৮, সদম ও গুমরাহ নগরীর বাসিন্দারা ছুটে আসলো লুতের গৃহাভিমুখে। তার ফেরেশতাদের চাইলো। তবে এর বদলে লুত নিজের কন্যাদের উপহার হিসেবে প্রদান করতে চাইলো সেই বিকৃত যৌনাচারের চর্চাকারী নগরবাসীদের , বললো, তারা পবিত্র এবং কুমারী, এদের গ্রহন করো তবে আমার অতিথিদের অসম্মান করো না, অপমান করো না।

সদমবাসী বিকৃত যৌনাচারী ছিলো, সেখান থেকে সোডোমনি শব্দটির উদ্ভব, যার অর্থ বিকৃত যৌনাচার, এটা পায়ুসঙ্গম থেকে শুরু করে সমকামিতা পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে কোরানের ভাষ্যে এটা নিছকই সমকামিতা।
কোরানিক ভাষ্যে সদমবাসীর অপরাধ তার সমকামী, এবং তারা ফেরেশতার হোগা মারতে আগ্রহী হয়েছিলো।

তবে ইহুদি কিংবা খ্রীষ্টানভাষ্য মতে সদমবাসীর অপরাধ আরও বিস্তৃত, তারা অতিথিদের উপরে অত্যাচার করতো, তারা নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে চলতো না, তারা অবিচার ও পাপাচারে লিপ্ত ছিলো, তারা এমন কি লুতের এক কন্যাকে অতিথির প্রতি অতিরিক্ত সদয় হওয়ার অপরাধের হত্যা করে সেই লাশের সারা গায়ে মধু মাখিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলো নগর চত্ত্বরে যতক্ষণ না তার শরীর মৌমাছি খুবলে না খায়।
তারা পায়ুকামে অভ্যস্ত ছিলো, তারা ব্যবসার রীতি মানতো না।

এবং এদের ভেতরে বিশ্বাসী মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। ইব্রাহিম যখন ইশ্বরকে অনুরোধ করছে সদম নগরী ধ্বংস না করবার জন্য তখন লুতের গৃহে বসে ফেরেশতা বলছে হে লুত তুমি এ নগর ছেড়ে যাও । এ নগর ইশ্বরের অভিপ্রায়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

অবশেষে আকাশ থেকে অগ্নিবৃষ্টি হলো, গুমরাহ ও সদম নগরী ধ্বংস হয়ে গেলো। সেই সাথে এই জর্ডন নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠা ৫টি নগর ধ্বংস হয়ে গেলো। লুত তার দুই কন্যাকে নিয়ে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিলেন।

আব্রাহাম এরপরে ইব্রাহিম কিংবা বিশ্বাসীদের পিতা হয়ে উঠলো।
লুতের মেয়েদের ধারণা ছিলো তারাই পৃথিবীর শেষ মানবপ্রজাতি, তাই লুতকে মাতাল করে মেয়েরা পিতার সাথে সঙ্গমলিপ্ত হলো, এবং তাদের ঔরসে জন্ম নেওয়া সন্তানসন্ততিরা ছড়িয়ে পড়লো সেখানে।


তবে গুমরাহ নগর অমরত্ব পেলো, এখনও সেই শব্দের অর্থ এমন একদল মানুষ যারা সত্যকে স্বীকার না করেই পাপাচারে লিপ্ত থাকে, অবুঝ এবং নির্বোধ মানুষের দল যারা নিশ্চিত ধ্বংস জেনেও ফেরেশতার হোগা মারতে চায়।

সোডোমনি আর গুমরাহির হাত থেকে ইশ্বর ইব্রাহিমের সন্তান-সন্ততিকে রক্ষা করুন।

আমিন

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×