somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্পের দেবতা, ঘুম যে আসে না!

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো অজানা নয় যে, অচিরেই বাংলাদেশে একটা বড়মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এর পক্ষে ঐতিহাসিক যুক্তিটি হল, প্রতি একশ বছরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় একটা বড় রকমের ভূমিকম্প হতে দেখা গেছে। ভূতাত্ত্বিক যুক্তিটি হচ্ছে, টাঙাইল অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরে একটা ফাটল ক্রমে বড় হচ্ছে। শুনলে শরীর হিম হয়ে যায়। কী মহা দক্ষযজ্ঞ চলছে ভূমির ভেতরে? ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের যে জীবন, তাদের প্রতিদিনের সুখদুঃখ আর ভবিষ্যত সাজানোর যেসব স্বপ্ন, তার অনেক নিচে, বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছায় না, যুক্তি যেখানে নাচার, ধর্ম যেখানে অবলা, ঈশ্বর যেখানে নিয়তির হাতে বন্দী, সেখানে চলছে এক সভ্যতার বিরূদ্ধে বিশাল রণপ্রস্তুতি।

জানান দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে ছোট ছোট স্কেলে ভূমি নড়ে। রিখটারে তার মাত্রা বেশি হয় না, কিন্তু তাতেই বিজ্ঞান বিব্রত। এক বিজ্ঞান বলে, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, অন্য বিজ্ঞান বলে ছোট ছোট ভূমিকম্প ভাল, তাতে বড় ভূমিকম্পের পেসিফিকেশন হয়ে যায়। এই পরস্পরবিরোধী বিবৃতির মাঝে বরাভয় খোঁজার জায়গাটা কোথায়?

ঘুম আসে না তাই গুগল খুলে বসি। দেখি সিচুয়ানের লোকদের রক্তমাখা চেহারা, ভেঙে পড়া দালানগুলোর ছবি। সিচুয়ান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, নিয়মিত ভূমিকম্প হয়েছে এখানে বহুবছর। ছবি দেখে যতদূর বোঝা যায়, ঢাকার মত ঘনবসতি সে নয়। সেখানে ভূমিকম্পের পর গোটা চীনের যাবতীয় রিসোর্স একত্র করেও অর্ধেক রেসকিউ করা সম্ভব হয় নাই। শুনে শরীর হিম হয়ে আসে।

ঢাকার কথা ভাবি। সাভারের পলাশবাড়িতে গার্মেন্টস ভবন ধ্বসে পড়ার ঘটনা। মাত্র একটা ভবন ধ্বসে গেল, হপ্তাব্যাপী তোড়জোড় করে কিছু লোককে জীবিত এবং মৃত বের করে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হল। এক ভূমি বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনেছি ঢাকায় নাকি ভূমিকম্প হলে ভূমিধ্বস হবে। অর্থাৎ দালানকোঠা মাটি গিলে খাবে। নরম নদীভরাট ভূমির ওপর অবিবেচকের মত গজিয়ে উঠেছে শহর, ফলে তাকে মাশুল দিতে হবে এভাবেই।

টিভির পর্দায় হাসি-হাসি বিশেষজ্ঞ, অবলীলায় বলেন, সিচুয়াল-স্কেলে নয় বরং একটা মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনই ঢাকা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। আর সেরকম কিছু হলে ঢাকাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া কিইবা করতে পারে সরকার। একটা ভবন থেকে যেখানে রেসকিউ সম্ভব হয় না, সেখানে একটা শহরের রেসকিউ!

এসব ভাবি আর দেখি বস্তিগুলো, নদীভরাট করে বানানো আবাসিক প্রকল্পগুলো, যেনতেনভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকা বহুতল ভবনগুলো। ভিসুভিয়াস ফুঁসে উঠবার আগের পম্পেই-এর চেহারা খুঁজি মনে মনে। পা টলমল করে ওঠে, রেলিং ধরে ফুটপাতে বসে পড়ার আগে চোখে ভেসে ওঠে প্রিয়জনদের ক্রন্দন আর আহাজারিসমেত লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে প্রিয় শহরটি।

কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটে না। ছোট ছোট ভূকম্পনের পর শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আমার অপ্রতিরোধ্য উদ্বেগের ওপর হেসে দেয় বন্ধুরা। বলে, এর চে ইমিডিয়েট অনেক কিছু আছে ভাবার। রিকশাঅলা মজিবর বলে, ভাই পেটেভাতেরই হিসাব মিলে না, ভূমিকম্পের হিসাব লমু কেমনে? কিন্তু হিসাব কে দেয়? হাসে ভূমিকম্পের দেবতা।

গুগল করতে করতে সিচুয়ান এর একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়। ভূমিকম্পের দুদিন আগে তোলা একটি ছবি। শ'য়ে শ'য়ে ব্যাঙ এসে হাইওয়ের উপর আশ্রয় নিয়েছে।



এই ঘটনাকে পাত্তা দেয় নি কেউ। দুদিন পর যখন সিচুয়ান লন্ডভন্ড হল, তখন নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে এ নিয়ে। এক পত্রিকা লিখেছে, নিউ আর্থকোয়েক এলার্ম! কিন্তু নতুন তো নয়, আবহমানকাল ধরেই লোকমানস এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে আসছে। বিজ্ঞান যখন আরো নিশ্চিত পূর্বাভাসের পথ করে দিতে লাগল, তখন আমরা ঐ সব লোকায়ত জ্ঞানকে আর মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করি নি। কিন্তু আজ, আসন্ন ভূকম্পনের মুখে, বিশেষজ্ঞরা যখন নিজেদের পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে ব্যাপৃত, তখন আমার কাছে এই ছবিখানা যেন উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে আসে। আমি ক্রমে ক্রমে ভূ-অভ্যন্তরের প্রাণিদের জীবনাচরণের দিকে আরো বেশি বেশি মনোযোগী হবো, ভাবি।


১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×