somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন -- বর্ণবাদ মুদ্রাকে টস করে দেখা

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ দিনকাল ভালোনা, চারদিকে নানান হাঙ্গামা! এরমাঝে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে লেখালেখি করা একটু বিলাসিতাই। তাও লিখি, এটা না হয় খারাপ সময়ে একটা প্রমোদই হলো] ;)
আসল কথায় আসা যাক!

*************************************************************
১. মুদ্রার প্রথম পিঠ
এবারের ভোটে কি হবে না হবে তা নিয়া লোকজনের মাথা-ঘামানোর শেষ নেই, তবে মোটাদাগে আমি যেটা মনে করি, তা হলো, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা ল্যান্ডস্লাইড বিজয় হবে। ৩৫০ এর উপর ইলেক্টোরাল ভোট ওবামা পাবে বলেই মনে করি -- সেখান থেকে দেখলে এখন আর ওবামাকে সাপোর্ট করার যেই জিহাদী জোশটা সেই হিলারীর সাথে ফাইটের সময় ছিলো, সেটা আর অনুভব করিনা। (তখন ওবামার ডাইহার্ড সমর্থক ছিলাম, এখনও ওবামাকেই সমর্থন করি, তবে উৎসাহে ভাটা পড়ে গেছে!)।

নানান আড্ডায়-আলোচনায় যখন ভোটের প্রসঙ্গ চলে আসে, তখন আমি নির্দ্বিধায়ই বলে ফেলি যে "ওবামার ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি হবে!"। লোকজন একটু চোখ কুঁচকে তাকায়। অনেকেই আবার উল্টোমুখী নির্দ্বিধা নিয়ে বলে, "লাভ নেই! আমেরিকানদের মন থেকে এখনও বর্ণবাদ মুছে যায়নি, দেখবেন শেষ মূহুর্তে ম্যাকেইনকে ভোট দিয়ে দেবে।" তারপর শুনতে হয় সেই ব্র্যাডলী ইফেক্টের কথা, যেটার মাধ্যমে বক্তা এই কথা প্রতিষ্ঠিত করতে চান যে সাদারা ঠিকই ভোটবুথে ঢুকে শেষমুহূর্তে ভাববে, "একজন কালোমানুষের কি আসলেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, মানে দুনিয়ার সুলতান হওয়া সাজে!" এই চিন্তা শেষমূহুর্তে মাথায় আসলেই ওবামার খেলা শেষ, মানে বর্ণবাদই শেষ কার্ড হবে -- এমনটাই অনেকের বক্তব্য।

তো, এই বর্ণবাদ নিয়েই কিছু চিন্তা মাথায় খেলল।

২. মুদ্রার দ্বিতীয় পিঠ
প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় খেললো তা হলো, এই অদৃশ্য বর্ণবাদের দোষটা কাদের উপর চাপবে? ঐতিহাসিকভাবেই সমাজের বা রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর, আমেরিকার দিকে তাকালে সাদাদের উপর। ইতিহাসের কারণেই আজো মানুষ পুরোপুরি বিশ্বাস করেনা যে সাদাদের মন থেকে বর্নবাদ পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে।

যেমন ধরুন, এখনকার আমেরিকার নির্বাচনটা নিয়েই ভাবা যাক! একপাশে আছেন ভীষণ ভীষন ক্যারিশম্যাটিক, সুবক্তা, যথেষ্ট জ্ঞানী আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর আকর্ষণীয় পার্সোনালিটির বারাক ওবামা, আর অন্যপাশে আছেন বৃদ্ধ, প্রাণশক্তিহীন, গোঁয়াড়, সবসময় সাইডলাইনে থাকা ম্যাড়ম্যাড়ে পার্সোনালিটির জন ম্যাকেইন। এখন, এই ওবামা যদি হতেন সাদা, আর ম্যাকেইন যদি হতো কালো -- তাহলে ভোটের হিসাব নিয়ে এখনও যে জল্পনা-কল্পনা চলছে তা কি চলতো? সবাই কি আমার মতো নিশ্চিত হয়ে বলতোনা যে ওবামা তো ল্যান্ডস্লাইড জিতবে!

এটুকু পর্যন্ত সবাই হয়তো একইরকম ভাববেন, তবে বর্ণবাদকে যদি একটা মুদ্রা ধরি, আর তাকে যদি টস করা হয় -- তাহলে সবসময় একই পিঠ পড়বে সেরকম কোন কথা নেই।

অর্থাৎ, ম্যাকেইন কি বর্ণবাদের শিকার নন?

শুধু একবার দেখুন, এবারের নির্বাচনে কতভাগ সাদা আমেরিকান ওবামাকে সাপোর্ট করছেন আর কতভাগ কালো আমেরিকান ম্যাকেইনকে সাপোর্ট করছেন?
সাদা পুরুষদের মধ্যে ওবামা-ম্যাকেইন সাপোর্টার প্রায় সমান সমান। সাদা নারীদের মধ্যে ওবামা সাপোর্টার বেশী, এবং সেটা কখনই একারণে নয় যে ওবামা দেখতে হ্যান্ডসাম!
অন্যদিকে, কালো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ওবামার সমর্থক, সঠিক পরিসংখ্যান জানিনা, তবে উদারভাবে ধরলেও এটা ধরা যায় যে উভয়গোষ্ঠীর (কালো নারী আর পুরুষ) শতকরা আশিভাগের বেশী ভোট পাবেন ওবামা!

বটমলাইন হলো, ম্যাকেইন যদি জেতেন, তাহলে লোকে ছ্যা ছ্যা করবে এই বলে যে "শালার আমেরিকা থেকে এই একবিংশ শতাব্দীতেও বর্ণবাদ গেলোনা!"
ওবামা জিতলে কি কেউ বলবে, "আমেরিকার বর্ণবাদী কালোরা ম্যাকেইনকে একদমই ভোট দেয়নি, তাই বেচারা হেরেছেন।"? আমার মনে হয়না, কেউ বলবে।

অথবা, এমনটি ভাবুন। কলিন পাওয়েলের মতো রিপাবলিকান হোমরা-চোমরা যদি সাদা হতেন, আর তিনি যদি নিজ দলের কালো প্রার্থী ম্যাকেইনকে উপেক্ষা করে ডেম সাদা প্রার্থী ওবামাকে সমর্থন দিটেন, তখন কি অনেকেই বলে উঠতোনা, "শালা বর্ণবাদী কোথাকার!" তবে এখন নয় কেন -- এই প্রশ্নটা স্বভাবতঃই চলে আসে।

আমেরিকার কালোরা একসময় ভয়াবহ বর্ণবাদের শিকার হয়েছে, সে অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা নিজেদের অধিকার ফিরে পাবার একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে গত কয়েক দশক; এই প্রক্রিয়ারই একটা দশা কি এমন হতে যাচ্ছে যে এখন তারা নিজেরাই বর্ণবাদী হয়ে উঠছে?


৩. মুদ্রার তৃতীয় পিঠ
তবে কি এটা ধরে নেয়া ঠিক হবে যে আমেরিকায় বর্নবাদ ডোমেইন বদল করে এখন কালোদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে? নাকি বর্ণবাদের সাপেক্ষে ওবামার অবস্থান নির্ণয়ের একটা বাড়তি প্রয়োজন আছে?

বারাক ওবামা আসলে কোনপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে? না আমি সামাজিক/অর্থনৈতিক -- এরকম কোন দৃষ্টিভঙ্গি না, একদম বর্ণবাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে বলছি। বারাক ওবামার বাবা আফ্রিকার কালোমানুষ, মা আমেরিকার সাদামানুষ। একজন সাদা আমেরিকানের মনে বর্ণবাদ উঁকি দেয়ার সময় সে এটা ভেবে নিতে পারেই যে, সমস্যা কি ওবামার গায়ে তো সাদাদের রক্তও বইছে। আবার একজন কালো আমেরিকানও নিশ্চয়ই এভাবে ভাববে যে, "না হয় পুরো কালো হলোনা, তাও কালোর রক্ত আছে এমন মানুষ যে এদেশে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছে তা-ই বা কম কি!"
বর্ণবাদের গ্রে এলাকায় যাদের ঘুরোফিরা, তারা ওবামার পক্ষ নিতে পারবেন সহজেই।

আরেকটু খেয়াল করি। ওবামার নানী অসুস্থ হয়ে পড়াতে তিনি ছুটে গিয়েছেন হাওয়াইতে, নানীকে দেখতে। এটা কি কিছুটা পরিকল্পিত কিনা সেটাও ভাবা যায়। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে সাদা নানীকে দেখতে ছুটে যাওয়াটা কি এমন কিছু বোঝানোর ইঙ্গিত যে "দেখো, ওবামার সাথে তার পরিবারের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মানুষটি কিন্তু সাদা!" শেষ মুহূর্তের ওবামার এই স্ট্রাটেজী কি ব্র্যাডলী ইফেক্টকে ঘটতে না দেয়ার কোন গোপন হাতিয়ার?

৪. শেষকথা
লেখাটিকে অনেকেই এমনভাবে নিতে পারেন যে আমি বর্ণবাদকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে দেখছি, আসলে আমেরিকার সমাজে এখন আর বর্ণবাদের সেরকম প্রভাব নেই। ওবামার নানীকে দেখতে যাওয়া বা কালোদের একচেটিয়া ওবামাকে সমর্থন বা "সাদা না হলে ম্যাকেইন এতদিন লড়াইয়ে টিকতে পারতনা তত্ব" -- এগুলো আমার বর্ণবাদী মনের অতিকল্পনা।

হতে পারে।

তবে ভোটপ্রদানের সময় যে বর্নবাদটার কাজ করার কথা সেটাকে কেউ দেখবেনা --- কাজেই সেটা যে কাজ করছেনা বলি কিভাবে। বিশেষ করে, মুসলিম "অভিযোগ" আসার পর ওবামা যেভাবে নিজেকে খ্রিস্টান প্রমাণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যখন তিনি আমেরিকার মতো দেশে দাঁড়িয়ে বলতে পারেননি, "আমি মুসলিম হই বা খ্রিস্টান হই --তাতে কিছু যায় আসেনা" -- তখন বর্ণবাদ যে একেবারে উধাও হয়ে গেছে এটা বলা দুষ্কর।

শেষকথা হলো -- আমি নিজেও বর্ণবাদী, ওবামার পক্ষে বর্ণবাদ কাজ করছে বলে মনে করার পরও আমি তাকেই সমর্থন করছি -- ছওটবেলা থেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে গালমন্দ শুনতে শুনতে সাদাদের প্রতি এক ধরনের অসমর্থন যে মনের মধ্যে গেঁথে আছে, সেটা টের পাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৩৫
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×