পর্ব ১ এখানে
পর্ব ২ এখানে
পর্ব ৩ এখানে
পর্ব ৪ এখানে
অক্টোবর ১৮, শনিবার
সকালে আজও ঘুম থেকে আগে উঠে আরাম করে গোসল সেরে নিলো নিয়াজ আর দীপক। আমি আর করলাম না, কারন রাতে ঘুমের আগে আরাম করে গোসল করেছি। জানা গেলো আমরা আটটায় বের হবো, নাস্তা সেরে পাহাড়ে। এমন সময় একজন বস ডাকলেন আমাকে। বল্লেন যদি তুমি আর তোমার ওয়াইফ উঠতে না চাও তাহলো জিউন (অন্য ল্যাবের সিনিয়র কোরিয়ান মেয়ে) এর সাথে ওর গাড়ীতে থাকতে পারো। জিউন ও উঠবেনা, পাহাড়ে ওঠা দলের প্রায় ৫ ঘন্টা লাগবে সব মিলিয়ে। এমন সুযোগ চাইছিলাম, বল্লাম ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই। আমরা জিউন এর সাথেই থাকবো।
সকালের নাস্তার কিছু আইটেম, এর সাথে ভাত আর স্যুপও ছিলো
কটেজ থেকে একবারে বেরিয়ে গেলাম আমরা, সোজা গেলাম হোটেলে নাস্তা করতে। ভালোই খাবার, ডিম সবজির স্যুপ, ভাত, টুকটাক জিনিস। সাথে কফি। এবার ওরা সবাই পাহাড়ের দিকে গেলো। জিউন আমাদের কে নিয়ে অন্য দিকে যেতে লাগলো। ঘটনা হলো একটা ল্যাবমেট সিউলে ব্যাক করবে, তাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসবে জিউন। তার মানে আমরা পাহাড়ে যেতে চাইলেও চারটা গাড়িতে বেশ চাপাচাপি হতো। ভালো ই হলো আমাদের। এয়ারপোর্টে মেয়েটাকে নামিয়ে দিয়ে আমরা পাহাড়ের দিকে রওনা দিলাম। বলাই হয়নি পাহাড়টার নাম হলো গিয়ে হালা।
হালা পাহাড়ের নীচ থেকে তোলা, এখান থেকে শুরু করে উপরে ওঠা
হালার আরেকটা রঙিন ছবি
ওখানে যেয়ে দেখি তিন চারজন অলরেডি কিছুটা উঠে ব্যাক করেছে। ওখানে ইউনেসকোর একটা টুরিস্ট সেন্টার আছে। ভিতরে ঢুকে দেখি পাঁচটা পিসিতে নেট কানেকশন। ফ্রি ইউজ করা যাবে। কোন লোকজন নাই, একবার এটায় বসি একবার ওটায়। কিছুক্ষণ ব্লগিং করলাম একটা পোস্ট ও দিলাম হালার নীচে বসে।
ইউনেসকোর এই সেন্টারে ছিলো ফ্রি সাইবার ক্যাফে
সাইবার ক্যাফে তখন আমাদের দখলে
আমরা যেখানে বসে ছিলাম সেটা একটা পয়েন্ট। যারা উপরে উঠেছিলো তার অন্য একটা পয়েন্টে নেমেছে। সেটা আবার মূল উচ্চতা আর আমরা যেখানে ছিলাম তার মাঝামাঝি। আমাদেরকে সেখানে গাড়ীতে যেতে হবে। বসদের গাড়ি আগেই সেখানে নিয়ে গিয়েছে। আঁকাবাকা পথে সেখানে পৌঁছালাম। অনেক জায়গায় রং ধরেছে। একটা হোটেলে লান্চ সেরে নিলাম। বেশ কিছুক্ষণ ছবি তোলা হলো। কয়েকজন চলে গেলো সওনা তে স্টীম বাথ নিতে। আমরা বাকিরা রওনা দিলাম মিউজিয়ামের দিকে।
পাহাড়ের উপরে যেখানে অন্যরা হাইকিং শেষে নেমেছে
আরেকটা ছবি
দুপুরের খাওয়া সারলাম এই হোটেলে
মিউজিয়াম ঠিক না এটা একটা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা। অনেক পুরোনো জিনিস জমিয়েছেন এক বুড়ো চাচা। পুরোন আমলের জামাকাপড়, নকশি কাজ, পয়সা, কৃষি জিনিস ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জাদুঘরের কিছু ছবি
তার ওখানে বেশ কিছুক্ষন থেকে আমরা চলে এলাম এয়ারপোর্টের কাছেই একটা বীচে। খুব উত্তাল পানি এখানে, অনেক বাতাস। এখানেই সবাই মিলিত হবে, ডিনার শেষে রাত ৮.৩৫ এ ফিরতি ফ্লাইট। তখনও অনেক সময় আছে আমরা পাথরে নেমে ছবি তুললাম। একদল লোক বসে স্কুইড অক্টোপাস বিক্রি করছে, ওগুলো কাঁচাও খায় কোরিয়ান রা, ছোট ছোট করে কেটে।
সমুদ্র পাড়ের কিছু ছবি
আবারো জনৈক ছবিতুলক
সবাই মিলে ডিনার করতে ঢুকলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে। মাছ ভাজি এবারও, সাথে শৈবালের স্যুপ, তবে ভিতরে শামুক, একটা খেয়ে দেখি খুব মজা, কোন গন্ধ নাই, একদম মুরগির গিলার মতো। ৭ টার দিকে উঠে পড়লাম আমরা। বিমানবন্দর কাছেই।
শৈবাল আর শামুকের স্যুপ
ফেরার সময় বিমানবন্দরের ভীড়
যেয়ে চেকইন করে কেউ কেউ ডিউটি ফ্রি শপে কেনা কাটা করলো। প্রচুর ভিড় দেখলাম কারন সেমিনারে সিউল থেকে অনেক মানুষ আসে, সবাই ব্যাক করছে। ১৫ মিনিট পর পরই বলতে গেলে ফ্লাইট। সবার চেহারায় ৩ দিনের দৌড়াদৌড়ির ধকল বোঝা যাচ্ছে। প্লেনে উঠে এমন জায়গায় সিট পড়লো কোন জানালা নাই। ৫০ মিনিটের ফ্লাইট, একটু একটু করে কোক খেয়েই শেষ করে ফেল্লাম। গিমপো এয়ারপোর্ট থেকে সাবওয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ১১.৩০ টা বেজে গেলো। একদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু হবে নিয়মকরা জীবন।