somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিসংখ্যানে তিব্বত

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৫১ সালে শান্তিপূর্ণ মুক্তির পর আজ পর্যন্ত তিব্বতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে তিব্বতী জনগণের জীবনধারার উন্নতি হয়েছে, ইত্যাদি নানা তথ্য তিব্বতের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, সামাজিক জীবন ও শিক্ষা ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান থেকে আপনারা পরিষ্কারভাবে তিব্বতে গত অর্ধ শতাব্দীর কিছুটা বেশি সময়ে যে দ্রুত বিকাশ ও পরিবর্তন হয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

সরকারী আর্থিক আয় ক্ষেত্রঃ ১৯৮৮ সালে তিব্বতের স্থানীয় সরকার প্রথমবারের মতো আয় ক্ষেত্রে তার শূন্য রেকর্ড ভেঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রায় ২০ বছর ধরে স্থায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর ২০০৭ সালে তিব্বত সরকারের আয় ২৩০ কোটি ইউয়ান ছাঁড়িয়ে যায়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রঃ ১৯৫৯ সালে তিব্বতী মানুষের গড়পড়তা আয়ু ৩৬ বছরেরও কম ছিল। বর্তমানে তিব্বতী মানুষের গড় আয়ু ৬৭ বছর হয়েছে। এখন তিব্বতে ১৩০০টি চিকিৎসা সংস্থা আছে এবং ৯১০০ চিকিৎসক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিব্বতের সকল কৃষক ও পশুপালক বিনা খরচে চিকিৎসা ভিত্তিক সহযোগিতামূলক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন।

জনসংখ্যা ও সামাজিক নিশ্চয়তা ক্ষেত্রঃ ১৯৫১ সালের আগের প্রায় ২০০ বছরে তিব্বতের জনসংখ্যা দীর্ঘকাল ধরে প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি ছিল। অধিকাংশ সাধারণ মানুষেরই কোন প্রকার সামাজিক নিশ্চয়তা ছিল না। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭ সালের শেষ দিকে তিব্বতের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজারে। এর মধ্যে তিব্বতী জনসংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। এখন তিব্বতের ৩ লাখ ৩০ হাজার নগরবাসী নানা রকম সামাজিক বীমায় অংশ নিচ্ছেন। কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলের ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি দরিদ্র মানুষ সরকারের সর্বনিম্ন নিশ্চয়তা ভর্তুকি নিয়মিত পাচ্ছেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রঃ পুরোনো তিব্বতে কোন আধুনিক স্কুল ছিল না। উপযুক্ত বয়সের শিশুদের স্কুলে ভর্তির হার ছিল মাত্র ২ শতাংশেরও কম। তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৯৫ শতাংশই ছিলো নিরক্ষর। বর্তমানে তিব্বতের ৭৩টি জেলায় সার্বিকভাবে ছয় বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা জনপ্রিয় হয়েছে। ৯০ শতাংশ অঞ্চলে নয় বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার এখন যথাক্রমে ৪৩ ও ১৭ শতাংশ। তরুণ-তরুণী পর্যায়ে নিরক্ষরতার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশ।

সামাজিক ক্ষেত্রঃ ১৯৫০ সালের আগে তিব্বতের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষেরই নিজেদের কোন বসতবাড়ি ছিল না। তারা যাযাবরের মত বাস করতো। এখন অল্প সংখ্যক চারণভুমি ছাড়া তিব্বতের সকল পরিবারের স্থায়ী বসতবাড়ি হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে শুরু বসতবাড়ি প্রকল্পের কল্যাণে ৫ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও পশুপালক ইতোমধ্যেই নতুন বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেছেন। গত বছর তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের মাথাপিছু গড় আয় ছিল প্রায় ২৮০০ ইউয়ান। আর নগরবাসীদের মাথাপিছু আয় ছিল ১১ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ২০ জন তিব্বতীর নিজের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। সেখানে বেসরকারী গাড়ির সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি। এ সংখ্যা ২০০৫ সালের শেষ দিকের চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ বেশি।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রঃ পুরোনো তিব্বতে কোন আধুনিক শিল্প কারখানা ছিল না এবং কৃষি উন্নয়নের গতিও খুব মন্থর ছিল। ২০০৭ সালে তিব্বতের শিল্প ক্ষেত্রের বর্ধিত-মূল্য প্রায় ২৬০ কোটি ইউয়ানে দাঁড়ায়। এ সংখ্যা ২০০৬ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। তিব্বতে ফসল চাষের এলাকার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর। গত বছর ২০০৭ সালে মোট ৪০ লাখ ২০ হাজার তিব্বত পর্যটক ভ্রমণ করেছে। পর্যটন শিল্পের মোট আয় ৪৮০ কোটি ইউয়ান। এ সংখ্যা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জি.ডি.পির ১৪ শতাংশেরও বেশি।

পরিসংখ্যান ক্ষেত্রঃ পুরোনো তিব্বতে উল্লেখযোগ্য একটিও সড়কপথ ছিল না। গত বছর ২০০৭ সালে সেই তিব্বতের সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কিলোমিটার। ২০০৬ সালের চেয়ে যা প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার বেশি। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণী ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হয়েছে। এতে তিব্বতের রেলপথ না থাকার ইতিহাসের অবসানই শুধু হয় নি, সাধারণ তিব্বতীদের জীবনযাত্রাকেও উন্নতির ধারায় প্রবহমান করেছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষেত্রঃ ১৯৬১ সালে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিব্বতের ইতিহাসে এমন নির্বাচন আগে কখনোই অনুষ্ঠিত হয় নি। মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসরা প্রথমবারের মত গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করছে। ১৯৬৫ সালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর তিব্বতী জনগণ সংবিধান ও আইনের দেয়া নির্বাচনের অধিকার পেয়েছে। তিব্বতী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডাররা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ক্যাডার দলের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৬ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তিব্বতে তিব্বতী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি। এ সংখ্যা গোটা অঞ্চলের মোট ক্যাডার সংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ।

সংস্কৃতি ক্ষেত্রঃ চীন সরকার তিব্বতের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য এ পর্যন্ত ৭০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে। সংস্কারের পর ১৪০০টিরও বেশি ধর্মীয় স্থান খুলে দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে ২২টি প্রাচীন স্থাপত্য সংস্কারের জন্য আরো ৫৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করা হয়েছে। এখন তিব্বতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত কর্মীর সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি হচ্ছে তিব্বতী।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×