কিন্তু আমার সেই মজার সময়গুলো ফিকে হয়ে গেল - এক শুক্রবার সকালে উনার বাসায় গিয়ে শুনলাম উনি ঢাকা মেডিকেলের ক্যান্সার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন গতরাতে। সেখানে গিয়ে শুনি উনার ব্রেস্ট ক্যান্সার - সর্বশষ পর্যায়ে। উনি ঘুমের ঔষধের প্রভাবে ঘুমিয়ে। ডাক্তাদের সাথে দুলাভাই কথা বলছেন। ডাক্তারদের ভাষ্য হলো - উনার অপারেশন করে ব্রেস্ট রিমুভ করলে একটা সুযোগ আছে - সেইটা খুবই কঠিন সম্ভাবনা। উনার শরীরের যে অবস্থা তাতে উনাকে হয়তো অপারেশন টেবিলেই হারাতে হতে পারে।
আপার কষ্টের কথা বিবেচনা করে দুলাভাই রাজী হরেন। আমার কাজ হলো রক্ত যোগাড় করা। রক্ত দিতে রাজী হলো বন্ধুরা। ঠিক হলো রাতে অপারেশন হবে। দুপুরের দিকে আপা জেগে উঠলে উনার বিছানায় বসে কথা বলার চেষ্টা করলাম। জানতে চাইলাম কেন উনি এই বিষয়ে আগে আমাকে বলেননি। জবাবে উনি মৃদু হেসে বললেন -ভাইরে, এই বিষয়টা লজ্জার। সবাইকে বলা যায় না।
পরে জানলাম - উনি দুলাভাইকেও উনার কষ্টের কথা বলেননি - এমনকি ডাক্তারের কাছে বলেননি - পাছে ডাক্তার দেখতে চায়। শুধু ব্যথার ওষুধ খেয়ে কষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
রাতের জেগে থাকতে হবে ভেবে হলে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম - এমন সময় ভাগ্নে এসে ডেকে উঠিয়ে বললো - মামা, মা নেই।
রাতের মধ্যেই লাশ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো - উনাকে দাফন করা হলো - শেষ বিদায় জানালাম আমার একজন মমতাময়ী বোনকে।
শুধু মাত্র লজ্জা নামক একটা সামাজিক বাঁধাকে অতিক্রম করে অপারগ আপা আমাদের কোন সুযোগ না দিয়েই কষ্টগুলো নিজের মধ্যে নিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
(২)
আজ সামহোয়ার ইনের স্টিকি পোস্টটা দেখে আমার স্নেহময়ী আপার কথা খুব বেশী মন পড়ছে। ভাবছি শুধু যদি উনি লজ্জাকে অতিক্রম করে অসুখের কথা যদি আলোচনা করতেন - তবে হয়তো আপা আজও বেঁচে থাকতেন - হয়তো আমি দেশে গেলে আপার কাছে বসে দুস্টুমী করে কিছু একটা বলে কানমলা খেতাম।
কানাডার পরিসংখ্যানটা দেখেই বেশী মন খারাপ হচ্ছে। এরা দেখাচ্ছে যদি এই সমস্যাটার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে তবে সারভাইভাল রেইট ৯০-৯৫%।
এই জন্যে সবচেয়ে বেশী দরকার সচেতনতা - আর সামহোয়ারের মতো একটা ব্লগ সাইট যে এই বিষয়ে এগিয়ে এসেছে - তার জন্যে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। লজ্জার মতো অর্থহীন সামাজিক দেওয়াল ভাংগাটাও জরুরী - আর সামহোয়ারের স্টিকি পোস্টটা সেই কাজই করছে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার জন্যে সামহোয়ারের কর্তৃপক্ষকে জানাই অভিনন্দন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১১:১১