somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমসাময়িক স্বাস্থ্য কথাঃ ভেজালের সাতকাহন

২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এই গরীব দেশে আমদানী হয় না এমন কোন জিনিষ নেই বললেই চলে। আমদানী নীতিতে আমরা বড় বেশী উদার। দেশীয় কোনকিছু উৎপাদন কিংবা শিল্প বিকাশে আমাদের সদাই অনীহা। কারণ আমদানীতে ‘টু-পাইস’ কামানো অতি সহজ । তাইতো শত সহস্র যুক্তি আমদানীর পক্ষে যেমনঃ উৎপাদনে খরচ বেশী, উৎপাদিত পণ্য নিম্নমানের, কাঁচামাল, দক্ষ জনশক্তি তথা কলকারখানার অভাব ইত্যাদি। আর এ সব যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোভী অসৎ চক্র নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ বিষমেশানো শিশু খাদ্য তথা অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী আমদানী করছে অবাধে।

চারিদিকে জালের মত ছড়ানো ছিটানো মৃত্যু ফাঁদ। নতুন নতুন পন্থা সংযোজিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিকারের চেষ্টা নেই। আর থাকলেও তা যৎসামান্য। আম-কলাতে ‘কার্বাইড’ বা ‘এ্যাসিটিলিন’, আপেল-আঙ্গুর তথা ফলে কিংবা মাছ-মাংস ও দুধে ‘ফরমালিন’ হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে জনসম্মুখে। দেশীয় খাদ্যের এ ভেজাল পুরানো ব্যাপার হলেও আমদানীকৃত পণ্য যথা- শিশু খাদ্য, গুড়ো দুধ, ক্যাডবেরী-ক্যান্ডিতে ‘মেলামাইন’ নতুন খবর। 'মরার উপর খাড়ার ঘা’-র মত।

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে। দেশে আমদানীকৃত আটটি ব্রান্ডের শিশু খাদ্য দুগ্ধে বড় রকমের ভেজাল পাওয়া গেছে। ঐ আট ব্রান্ডের দুই একটা কোম্পানীর তরফ থেকে তাদের দুধে মেলামাইন নেই এবং নিরাপদ বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওযা হচ্ছে। কোথায় যাবো আমরা? আর এসবই করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু কিভাবে তা করা হচ্ছে? মজার ব্যাপার হলো দুধের গুনগতমান দেখার সময় তার অনন্য উপাদান প্রোটিন কতটুকু আছে তা জানতে নাইট্রোজেন এর পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় নাইট্রোজেন বেশি আছে, তবে ধরে নেওয়া হয় এই দুধ প্রোটিনসমৃদ্ধ। আর মেলামাইনের মধ্যে যেহেতু বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন আছে, সে কারণে দুধে পানি দিয়ে তাতে মেলামাইনের গুড়া মিশিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ আপাতদৃষ্টিতে ঠিক রাখা হতো। যা প্রাথমিক ও সহজ পরীক্ষাগুলোতে ধরা পড়ে না। এতে করে দুধের দাম কমিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছিল এসব চীনা ব্র্যান্ডের। দাম কম, বিক্রি বেশি তাই মুনাফা বেশি! বিষয়টি আগে বহু দেশেরই নজর এড়িয়ে গেছে কেননা খাবারে কেউ মেলামাইন মেশাতে পারে এ ধারনাটাই অনেকের মধ্যে ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যেসব দুধ কোম্পানির সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক নেই তাদের দুধেও মেলামাইন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কারণ অসৎ ব্যবসায়ীরা চীনের মেলামাইনযুক্ত দুধ অন্য দেশের সিলমার্কা প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করেছে।

মেলামাইন হলো নাইট্রোজেন এ পরিপূর্ন একটি রাসায়নিক যৌগ যা সাধারনত প্লাষ্টিক, এডহেসিভ, হোয়াইট বোর্ড, লেমিনেট এবং আমাদের থালা বাসন তৈরীতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মানব দেহে মেলামাইন প্রবেশের পর কখনো শোষিত হয় না। মেলামাইন এবং আরো একটি যৌগ মিলে এক ধরনের পাথর তৈরি করে এবং তা কিডনি নামক ছাঁকনিতে আটকে যায় ও প্রসাবের সাথে সহজে বের হয় না। একসময় পাথর জমতে জমতে কিডনি বিকল হয়ে যায়।

মজাদার চটপটি খাবেন ? আপনার অজান্তে বিক্রেতা মেশাচ্ছেন তেঁতুল টকের বদলে Citric Acid এবং Acetic Acid. যারা বেশি টক পছন্দ করেন, তাদেরকে উনি আরেকটু বেশী বেশী অপরফ দিয়ে দিবেন, কোন চিন্তা নাই। খাদ্যের স্বাদ, বর্ণ ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিবিধ রাসায়নিক পদার্থ সংযোজন করা হয়। তাছাড়া খাদ্যে বিভিন্ন্ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আমাদের লিভার, কিডনী এবং স্নায়ুমণ্ডলীর যথেষ্ট ক্ষতি করতে সক্ষম। অনেক রাসায়নিক পদার্থ মাংস এবং অস্থিতে জমে দেহে ক্যান্সারের মতো রোগেরও সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এসব ফুড এডিটিভের ব্যবহার সুনিয়ন্ত্রিত ও নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে এসবের ব্যবহার অনিয়ন্ত্রিত। এজন্যে দেশে Blood Pressure, Diabetes, Heart Attack, Kidney Disorder, Stroke ইত্যাদি-র মত ভয়াবহ রয়্যাল রোগ বেড়ে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবারে সতর্কতার পাশাপাশি টাটকা এবং বিশুদ্ধ খাবারের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

বিশ্বের উন্নত তথা উন্নয়নশীল সবদেশেই খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন জেল-জরিমানা সহ মৃত্যুদন্ড। আর আমাদের দেশে শাস্তির মাত্রাটা ভেজালে উৎসাহিত করার মত। কয়েক মাসের জেল বা জরিমানা গুটি কয়েক টাকা মাত্র। আমরা আর কতকাল অপেক্ষা করব এই খুনী ভেজালকারীদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×