আর তো মাত্র কয়েকটা বছর
আমরা কেউ আর গেঁয়ো থাকবো না
ইটপাথরে ভরে যাবে কালোজলা ডোবার বুক
টুনটুনি আর বাবুইগুলো উঠে যাবে কোনো কনক্রিটের কোঠরে
চৌদ্দপুরুষের মাটির ঘর মিশে যাবে মাটিতে
গড়ে উঠবে সুউচ্চ ইমারত
শতবর্ষী বটগাছটির শবদেহ হবে আমাদের সুদৃশ্য ফার্ণিচার
আর তো মাত্র কয়েকটা বছর
কেউ আর কাউকে চাষার বাচ্চা বলবে না
দো-আঁশ মাটির বুকে শুয়ে যাশে শত শত কলকারখানা
কালো ধোঁয়ায় আরো কালো হবে শুভ্র মেঘ
রাসায়নিক বর্জ্যরে ছোঁয়ায় নদীও পালিয়ে যাবে সাগরে
বরশির ছিপ, খেয়াজাল আর ডিঙ্গি নৌকার স্থান হবে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরে
আর তো মাত্র কয়েকটা বছর
বাংলা বলতে চাইবে না কেউ
এখানে-ওখানে গড়ে উঠবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল
রফিক, শফিক, বরকত চলে যাবে জরাগ্রস্ত ইতিহাসের গহীন পাতায়
আর তো বেশিদিন নয়-
ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে ডুবে চোখ লাল করবে না কোনো অবুঝ শিশু
বরষার কাদা-জলে লুটোপুটি খাবে না ওরা
মাটির গন্ধ শুষে নেবে পোড়া ইট
দিগন্তজোড়া পাকা ধানের ক্ষেতে খেলা করবে না উচ্ছ্বল দোয়েল-শালিক
কোথাও দাঁড়িয়ে থাকবে না কাকতাড়ুয়ার ভূত
আর তো মাত্র কয়েকটা বছর
আমরা কেউ আর গেঁয়ো থাকবো না
পাড়ায় পাড়ায় বসে যাবে নাইটক্লাব-ডিস্কো-বার
মসজিদের মিনার ডিঙিয়ে আকাশে উঠে যাবে মোবাইল ফোনের টাওয়ার
কোনো মা আর শহরে পড়তে যাওয়া ছেলের চিঠির প্রতীক্ষা করবে না
কোনো ছেলে আর খেতে চাইবে না ডালের বড়া
ওদের হাতে থাকবে অত্যধুনিক উত্তেজক সামগ্রী
আর তো মাত্র কয়েকটা বছর
আমরা কেউ আর গেঁয়ো থাকবো না
যেদিকেই তাকাবো শহর, শুধুই শহর
কম্পিউটার, ইন্টারনেট আর মুঠোফোনের ছড়াছড়ি হবে পথে-ঘাটে
কিন্তু কেউ কারো খোঁজ নেবো না, কাউকে মনে করে রাত্রী হত্যা করবো না
প্রিয়জনের নির্মম মৃত্যুতে আসবে না চোখে কোনো জলের কণা
আর তো মাত্র কয়েকটা বছর...
মাত্র কয়েকটা বছরের ব্যাপার-স্যাপার
আমরা কেউ আর মানুষ থাকবো না
আমরা কেউই আর মানুষ থাকবো।