somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজেক্ট আরণ্যক

২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার সৌভাগ্য এই যে- অভ্যন্তরীণ পর্যটনের তত্ত্বটা প্রয়োগ করার একটা অভাবনীয় সুযোগ এসে গেল।
নোমানের কথা আগের এক লেখায় বলেছি। ওর বাড়ি টেকনাফের উনচিপ্রাং।
তো কোথায় জায়গাটা?
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে উনচিপ্রাং। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে পড়বে লিঙ্করোড> চেইন্দা> মরিচ্যা> কোটবাজার> উখিয়া> কুতুপালং> বালুখালি> থাইংখালি> পালাংখালি> উলুবনিয়া> হোয়াইখং> উনচিপ্রাং> নয়াপাড়া> খারাংখালী> মৌলভীবাজার> হ্ণীলা> রঙ্গিখালী> লেদা> তারপর টেকনাফ।
হাইওয়ের পাশে একটি গ্রাম উনচিপ্রাং; আর সেই গ্রামের পিছনে রয়েছে একটি ছোট পাহাড়। পাহাড়ের ওপাশে সৈকত। সৈকতের শেষে বিখ্যাত বঙ্গোপসাগর । উনচিপ্রাং গ্রামটির পিছনের পাহাড়ে রয়েছে ঝর্না, রয়েছে বিবিধ জীবজন্তু; রয়েছে বন বিভাগের অফিস। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নোমানের ভালো সম্পর্ক। নোমানরা ওখানকার স্থানীয়। ওর পরিবার বেশ প্রভাবশালী। কাজেই প্রজেক্ট আরণ্যক ও শুরু করতেই পারে। স্থানীয় বখাটেরা বাধ সাধতে আসবে না।
উনচিপ্রাং গ্রামের খুব কাছেই কয়েক ঘর আদিবাসীদের বাস। ওই আদিবাসীদের গ্রামেই নোমানদের কয়েক কাঠা জমি রয়েছে। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে সেখানে কতগুলি কটেজ তোলা যায়। সেই কটেজে থাকবে বেশ ক’টা ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ঘর; ঘর-সংলগ্ন পরিস্কার বাথরুম। বড় একটা প্লাস্টিকের ড্রামে পানি।
ওই উনচিপ্রাং আদিবাসী গ্রামেই শুরু হতে যাচ্ছে প্রজেক্ট আরণ্যক-অভ্যন্তরীণ পর্যটন তত্ত্বের বাস্তবায়ন।
ব্লগার আশাবাদী নিরাপত্তার কথা বারবার বলছেন। বিষয়টি ভাবার মতো নিশ্চয়ই।
একটা কাজ করা যেতে পারে। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে স্থানীয় থানার টেলিফোন নম্বর দেওয়া যেতে পারে। তা হলে থানার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে অতিথিরা ভ্যারিফাই করে নিতে পারবেন । থানা অবশ্যই সাহায্য করবে। কারণ-থানা হচ্ছে সরকার। আগেই বলেছি- অভ্যন্তরীণ পর্যটনের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য সরকারের আয় বাড়ানো। কাজেই, স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
আমি আশাবাদী।
কেননা, এরই মধ্যে প্রজেক্ট আরণ্যকের প্রথম অতিথিকে পেয়ে গেছি।
সৌম্য।
ভ্রমণবিষয়ক সৌম্যর অতুলনীয় ছবিগুলো নিশ্চয়ই দেখেছেন আপনারা। বগা লেকের ছবি দেখে তো আমি রীতিমতো মুগ্ধ।
আশা করছি আগামী বছর সৌম্য উনচিপ্রাং ঘুরে এসে প্রজেক্ট আরণ্যক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বিস্তারিত লিখবে।
উনচিপ্রাং গ্রামের পিছনে রয়েছে পাহাড়। সে পাহাড় থেকে নাকি মাঝেমাঝে হাতি নেমে আসে লোকালয়ে। ভাগ্য ভালো হলে সৌম্যর তোলা সে ছবিও দেখতে পারবেন আপনারা।
অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শুরুর কথাটা আবার স্মরণ করি।
নানা কারণে আমাদের মনে বাস্প জমে। তখন দুচোখ যেদিকে যায় চলে যেতে ইচ্ছে করে। চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। আলাদা থাকার কথা ভাবি। আপনি তখন করবেন কি- উনচিপ্রাং এর আরণ্যক প্রজেক্টে ফোন করবেন। ফোন করে ঘর বুক করবেন।
তারপর অভিমান বশত কাউকে কিছু না বলেই রওনা হবেন।
উনচিপ্রাং বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকবে ২২/২৩ বছরের তরুণ রতন চাকমা।
ওর পরনের সাদা টি র্শাট। বুকে লেখা প্রজেক্ট আরণ্যক। আপনি আশ্বস্ত হবেন। যাক ভুল যায়গায় নামি নি তা হলে।
আপনি রতনের পাশাপাশি হাঁটছেন।
জায়গাটা আদিবাসীদের গ্রাম মনে হল। শেষ বেলার আলোয় বাচ্চারা খেলছে। পাতা পোড়ানোর গন্ধ পেলেন। দূরে একটা পাহাড়ের কালচে নীলাভ শরীর। রতন আপনাকে তখনও বলেনি ওই পাহাড় থেকে মাঝেমাঝে নেমে আসে বুনো হাতির দল।
একটা উঠান। উঠান ঘিরে কতগুলি কটেজ। বাঁশ আর কাঠের তৈরি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভিতরে ঢুকে আপনি মুগ্ধ। ঘরের ভিতরে কাঁচা বাঁশের গন্ধ। বেতের বিছানা। ধবধবে সাদা চাদর। জানালায় নেট লাগানো। জানালার পাশে বেতের চেয়ার।
ঘর-সংলগ্ন বাথরুম। বাথরুমে আনকোরা লাক্স সাবান। বড় একটা প্লাস্টিকের ড্রামে পানি। সব দেখে শুনে সন্তুষ্ট হলেন।
ইউসুফ চা এনে দিল। সঙ্গে বিসকিট। চিনি কম খান। দুধও। ঠিক তেমনি করেছে।
জামাকাপড় বদলেছেন আপনি । ঘরে তখন সন্ধ্যার নিবিড় ছায়া। জানালার বাইরে ঝিঁঝির তীব্র আওয়াজ । একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। বুকে তখনও তীব্র অভিমান। কখন ঘুমিয়ে পড়লেন। মাদলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। কি ব্যাপার? ঘরে আবছা অন্ধকার। বাইরে এলেন। ঘড়ি দেখলেন। ৮ টা বেজে ১০। আজ কত তারিখ? উঠানে জ্যোস্না। উঠানের একপাশে কে একজন ধিতাং ধিতাং বোলে মাদল বাজাচ্ছে। কী মাদক শব্দ! আদিবাসী গ্রামের কেউ? একপাশে কয়েকটি চেয়ার পাতা। আপনি পায়ে পায়ে হেঁটে চেয়ারে বসলেন। তারপর রতন চাকমার মাসি মিতালি চাকমার গান শুনে ততক্ষণে আপনার সব অভিমান ধুয়ে মুছে গেল।
মোবাইল অফ করে রেখেছিলেন।
এখন অন করলেন।
কিছুক্ষণ পরে বললেন, হ্যালো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×