somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমুসলিমদের প্রতিঃ মুসলমানদের ভয় পাবার কিছু নেই

২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপস্থিত ব্লগারদের কাছে অনুরোধ করছি সম্পূর্ণ পোস্টটা পড়তে। শুরুর দিকে একরকম মনে হলেও পোস্টের উদ্দেশ্য শিরোনামের মতই। তাই অনুগ্রহ করে পোস্টটা পড়ুন ও আপনার মন্তব্য লিখুন।

আপডেটঃ বিধর্মী শব্দ বিলুপ্ত।


ইন্ট্রো
গত বেশ কয়েকদিন ধরে কলকাতার একটি মেয়ের সাথে বেশ ভাবে আছি B-)। কলকাতায় ফোন করলে পিক আওয়ারে কলরেট হচ্ছে ১৮ টাকা/মিনিট আর অফপিকে ১৫ টাকা/মিনিট। তাই ফোন চ্যাট সম্ভব হয় না। ইয়াহুতেই কাজ সারতে হয়। বাসায় পিসি নেই যার কারণে ভয়েস চ্যাটও করা সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে চার পাঁচদিন পরপর রাতের দিকে ইয়াহুতে মেয়েটাকে পাওয়া যায়।
তো আমার সাথে ওর সম্পর্ক বন্ধুর মত। অনেক ফ্রি এবং ফ্রেন্ডলি একটা মেয়ে ও। সব বিষয়ে সহজেই কথাবার্তা বলা যায় ওর সাথে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েদের মত অত সন্দেহপ্রবণ নয়। যাই হোক, মেয়েটা মুসলমান নয়; হিন্দু। তবে ধর্মের বিভেদ ভুলে আমরা একে অপরকে খুব ভাল বন্ধু হিসেবেই নিয়ে নিয়েছিলাম।

ঘটনা
একদিন [চ্যাটবক্সে] ও বললো, একটা কথা বলি কিছু মনে করবে না তো?
আমি বললাম, বলো।
তখন ও বললো, আমার না মুসলমানদেরকে খুব ভয় লাগে। মুসলমানরা প্রচন্ড রাগী। রেগে গেলে ওরা মানুষ খুন করতে পারে।
কথাটা শুনে আমার মধ্যে একটা শিহরণ খেলে গেল। একজন মুসলমান হিসেবে আমার দায়িত্ব একজন অমুসলিমকে ইসলামের দিকে আহবান করা। সেটা নাহয় পারলামই না। কিন্তু একজন অমুসলিমের মন থেকে ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণা দূর করাটা তো আমার অনিবার্য কর্তব্য। সেই তাগিদ থেকেই বললাম, তোমার কেন এমন মনে হয়? ইসলাম তো এমন শিক্ষা দেয় না।
ও বলল, আমাদের এখানে আমি অনেক ঘটনা দেখেছি। হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীরা এতটা রুড নয়। এইতো সেদিনের ঘটনা, একটা মুসলমান কি নিয়ে যেন ঝগড়া করে আরেকটা হিন্দুকে মেরেই ফেললো।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর বললাম, তোমার ধারণা ভুল। কিছু মুসলমান থাকতে পারে যারা এমনটা করে, কিন্তু তাই বলে তুমি সমগ্র মুসলিম জাতিকে এক চোখে দেখতে পারো না। তুমি হয়তো ইসলাম সম্বন্ধে ততটা জানোনা, জানার কথাও না। তাই বলে তুমি হয়তো তোমার আশেপাশের মুসলমানদের দেখে ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা নিতে চাইছ, তাই না?

ও স্বীকার করল।

তোমার ভুলটা এখানেই। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে 'কিছু সংখ্যক' "নামধারী" মুসলমান পুরো ইসলাম ধর্মকে মিথ্যা পরিচয় দিতে এইসব কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এদের দেখে সচেতন বুদ্ধিমান মানুষের উচিৎ হবে না যে ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করা। আমি তোমাকে বলি শোন। হিটলারের নাম তো শুনেছো নাকি?

ও বললো হ্যাঁ, শুনেছি। তখন আমি বললাম, হিটলার কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন? ও বললো ও নাকি জানেনা। [ঐ মুহুর্তে আমারও মনে ছিল না হিটলার কোন ধর্ম অনুসরণ করতেন] বললামঃ ধরো হিটলার খ্রিষ্টান ছিলেন। হিটলার যে হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে সেটা তো জানো?

ও বললো, হ্যাঁ বইয়ে পড়েছি।
আমি বললাম, গুড। তো হিটলার যে এতবড় অপরাধ করলো, এজন্য কি তুমি খ্রিষ্টান ধর্মকে দায়ী করবে?

ও তখন বোধহয় একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো। বলল, না, ওর অপরাধের জন্য খ্রিষ্টান ধর্মকে দায়ী করা ভুল হবে।

তখন আমি বললাম, আচ্ছা তুমি বলতো, হিটলারের মত না হোক, অকারণে মানুষ হত্যা, বোমাবাজি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ইত্যাদি করার মত প্রচুর সংখ্যক টেররিস্ট হিন্দু ধর্মে আছে কি না?
ও বললো, অবশ্যই আছে।
আমি বললাম, তাহলে আমি যদি ওদের চালচলন-আচার-ব্যবহার ইত্যাদি দেখে হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে ধারণা নিতে চেষ্টা করি, তাহলে তুমি কি আমাকে সম্মতি দিবে? বা ওদের কার্যক্রমের সাথে বেদ বা উপনিশাদের কি কোন মিল আছে?

ও বললো, না। ওরা নামে হিন্দু, কার্যক্রমে ওদের মধ্যে হিন্দুইজমের কিছুই পাওয়া যাবে না।

আমি বললাম, এতক্ষণে মূল পয়েন্টে এসেছো। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই এমনটা আছে। কিছু সংখ্যক মানুষ, যারা মূলত ধর্মবহির্ভূত কিন্তু ধর্মের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের কুকর্মের দ্বারা। ওরা আসলে কোন ধর্মেরই অনুসারী নয়। আমি তোমাকে বলব, তুমি যদি ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চাও, তাহলে মুসলমানদের দিকে লক্ষ্য না করে সোজা কুরআন ও হাদিসের বাণী পড়। কারণ সেখানেই পাওয়া যাবে প্রকৃত ইসলাম। একইভাবে তুমি যদি খ্রিষ্টান বা হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে জানতে চাও, তোমার উচিৎ হবে কোন খ্রিষ্টান বা হিন্দুর দিকে লক্ষ্য না করে সোজা যার যার ধর্মের ধর্মগ্রন্থের দিকে নজর দেয়া। কেননা, ধর্মের মূলমন্ত্রটাই যে সেখানে।

ও তখন ব্যাপারটা বুঝল। শুধু বুঝলো না বরং ভালভাবেই বুঝলো। তখন বলল, তুমি একেবারে ঠিক কথাটা বলেছো। আমার ভুল ধারণা ছিল আসলে সেটা।
জিজ্ঞেস করলাম, এখন তোমার ভুল ধারণা ভেঙ্গেছে? নাকি আরো লেকচার লাগবে :) ?
ও হাসলো (ইমোটিকন দিল আরকি)। বলল, বুঝতে পেরেছি। আসলে বোমাবাজরা বা সন্ত্রাসীরা কোন ধর্মের অনুসারীই নয়। তোমার এই কোট টা অসাধারণ হয়েছে।

আমি বললামঃ :D


মূল আলোচনা
যারা ইসলামিক টেলিভিশন কিংবা পিস টিভি নিয়মিত দেখেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন যে বক্তৃতাগুলো মূলত ডক্টর জাকির নায়েকের দেয়া। অন্যের বক্তব্য নিজে দিয়ে দেয়া হয়তো একরকম অপরাধ। কিন্তু এর দ্বারা যদি অন্ততপক্ষে একজন অমুসলিমেরও ভুল ভাঙ্গে, তাহলে এই অপরাধ ক্ষমার যোগ্য হয়ে যাওয়া কথা।

আপনাদের সবার কাছে প্রশ্ন, আল্লাহ কি আমাদের শুধু নামাজ পড়ে রোজা রেখে হালাল খেয়ে বাঁচতে বলেছেন? অমুসলিমদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া, ইসলাম সম্বন্ধে মানুষের ভূল ধারণা ভাঙ্গাবার দায়িত্ব কি আমাদের উপর বর্তায় না? আমরা তার কতটুকু পালন করি?


আনরেজিস্টার্ড পাঠকরা মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১১ রাত ১০:০০
২৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×