somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসবকে উৎসর্গ করা ঈদ

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসবকে উৎসর্গ করা ঈদ

ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাওয়ায় আমার ছোট চাচা আমাকে একটি দামি ঘড়ি উপহার দিয়েছিল।সেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।হয়তো কেউ তা বুঝতে পারেনি।কারন আমার সভাবটাই এরকম।আমার আব্বু আম্মু সহ সব আত্মীয়রা মনে করে আমি আনন্দ কি তা জানি না। ওদের এমনটি মনে হওয়ার পেছনে কারন হল আমি হই হুল্লোড় পছন্দ করি না,কোন আত্মীয়সজনের বাসায় কখনো বেড়াতে যাই না, এমনকি কেউ আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে আমি আমার রুম থেকেই বের হই না। দাদী বলেন আমি নাকি “মেয়েদের” মতই লাজুক। সরাসরি কিছু না বল্লেও আমি তা বিশ্বাস করি না। কারন এক এক জনের আনন্দ প্রকাশের ভাষা এক এক রকম। আবার কিছু কিছু বিষয় আছে সবাই কম বেশি আনন্দ ভাগাভাগি করে। তেমন একটি বিষয় হল রোজার ঈদ। রমজানে যখন সবাই রোজা রাখা নিয়ে ব্যস্ত,তখন দেখতাম আমাদের ছোটদের একটাই চিন্তা কখন ঈদ আসবে,নতুন জামা পরবে,ঈদগাহে যাবে,আর হরেক রকম নাস্তা খাবে। আর বড়দেরও কম মাথাব্যথা তা না। এক কথায় কেউ কারও থেকে কম নয়। পৃথিবীর সব জায়গায় সব মুসলমানের মনের কথা মনে হয় এই একটা বিষয়ে এক। এখন অবশ্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করে,ইফতার পার্টি হয়,অনেক অনেক টাকা খরচ করা হয়। তাছাড়া এখন ছোট বড় সবাই ঈদ সালামি নিয়েও কম ভাবে না। নিঃসন্দেহে প্রত্যেকের জীবনেই ঈদের কোন না কোন সুখকর ঘটনা থাকে। আমারও যে নেই তা না। কিন্তু আমি আজ একটি বিষাদের ঘটনা বলব,তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আবারও সেই ক্লাস ফাইভে ফিরে যাই। আমাদের স্কুল থেকে আমরা দুইজন বৃত্তি লাভ করেছিলাম।আগেই বলা হইছে যে আমি উপহার হিসেবে একটি দামি হাত ঘড়ি পেয়েছিলামন। আমার সেই বৃত্তি পাওয়া বন্ধুটি,তার নাম উৎসব, প্রায়ই বলত গরিবের উপহার নাকি কয়েক বেলা উপবাস থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সে দুঃখ করে বলত “আনন্দ” হচ্ছে তথাকথিত বড় লোকদের জন্যে। কিছু দিন পর ঈদ। সবাই ঈদ উপলক্ষে কিছু না কিছু কেনা কাটা করছে। আমার জন্যেও আমার আব্বু একটি পাঞ্জাবী এনেছে। একদিন উৎসবকে জীজ্ঞেস করলাম,এই ঈদে তোকে কি কিনে দিচ্ছে? ও সেদিন তেমন কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল “আমাদের আবার ঈদ?”উৎসবের সাথে দেখা হয় না কয়েকদিন হল। হয়ত ওর আব্বুর সাথে ঈদের জামা কাপড় কিনতে ব্যস্ত।হয়ত ঘরে বসে বসে ঈদের দিনের পরিকল্পনা করছে,হয়ত নতুন জামা দেখানোর ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না,নুতন জামা ঈদের আগে দেখাই ফেললে যে পুরান হয়ে যাবে?,ইত্যাদি ইত্যাদি।উৎসব আমাদের বন্ধুমহলে সবচেয়ে চতুর ছিল তাই এত ভাবনা আপনা আপনি মনের জানালায় উকিঁ দিচ্ছিলো। অনেক প্রতিক্ষার পর এল সেই খুশির ঈদ। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নুতন জামা গায়ে দিয়ে অস্থির হয়ে বসে আছি কখন আব্বু ফিতরা বিতরণ শেষ করে নামাজের জন্য তৈরী হবেন এই আশায়। প্রতিক্ষার প্রহর নাকি সবসময় দীর্ঘ হয়। খুব কষ্ট হচ্ছিল অপেক্ষা করতে কিন্তু তারপরেও করার কিছুই ছিল না। পরিশেষে আব্বু আমাকে সাথে নিয়ে নামাজে ঈদের নামাজে গেলেন। ওখানে আমার বয়সের আরো অনেক কেই দেখলাম। আমার অনেক বন্ধুর সাথেও দেখা হল। আমি মনে মনে এক জনকে খুজছিলাম। কোথাও তার দেখা নেই। শেষে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম উৎসবকে দেখেছে কি না। সে বলল দেখেনি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরেই আমি আর আমার আরেক বন্ধু উৎসবদের বাড়িতে গেলাম। ওদের বাড়িতে গিয়ে যা দেখলাম তা হয়ত আমার জীবনে আমি কখনই ভুলতে পারব না। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। উৎসবের দাদী অনেকদিন থেকে অসুস্ত,কিন্তু কয়েকদিন খুব বেশি অসুস্ত।যায় যায় অবস্থা। মায়ের ঔষুধের জোগান দিতে গিয়ে উৎসবের বাবা প্রায় নিস্ব। তাই ছেলেকে নুতন জামা কিনে দিতে পারে নি। একারনেই উৎসব ঘরের বাইরে বের হয় নি। ঈদের নামাজেও যায় নি। গ্রামের সব বাড়িতে যখন ঈদের আমেয,উৎসবদের বাড়িতে তখন অসুস্ত মানুষটির জন্যে ঔষুধ কেনার টাকার চিন্তায় সবাই চিন্তিত। সেদিন উৎসবের চেহারায় খুশির কোন রেখাই ছিল না। ওর মলিন মুখ এখনো আমার চোখে জীবন্ত। সেদিন আমি আর কারো বাড়িতে যাই নি। বন্ধুদের সাথেও তেমন একটা কথা বলিনি। আমার আম্মু জিজ্ঞেস করছিল সুস্থ আছি কি না। আর কেউ তেমন কিছহু বলে নি,কারন আমি তো স্বভাবতোই ওরকম.........এখনো ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেলে উৎসবকে দেখি মাঠে কাজ করছে। এখন সে পুরুপুরি মাঠির মানুষ। আমাকে দেখলে স্মৃতি রোমন্তনের চেষ্টা করে। ঈদ আসে ঈদ যায়,উৎসবদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। প্রিয় সুজন,আমরা কি ঈদে আনন্দ করার নামে অপচয় না করে উৎসবদের এতটুকু সাহায্য করতে পারি না? আমাদের সমাজের হাজারো উৎসবদের মুখে কি এতটুকু হাসি ফুটাতে পারি না?



নিবেদক-

কামরুল ইসলাম মিশু কুতুবি
ইংরেজী বিভাগ,৩য় বর্ষ,
আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
চকবাজার,চট্টগ্রাম।
Email : [email protected]
Website : http://www.kutubdia.co.nr
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×