somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোকিয়া ফোন সেট ও ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোকিয়া ফোনসেট নিয়ে নেটে বেশ কিছু আবালীয় পোস্ট ঘোরে । যেকোন কিছু ছাপানো বা ইংরেজিতে লেখা থাকলে সেইটারে “সোর্স” হিসেবে কাউন্ট করে মাতামাতি বাঙালির একটা ঘোরতর বাজে অভ্যাস । এর ওপর যদি সেই লেখা নিজের মতাদর্শের সাথে মেলে তাহলে সেইসব আবর্জনারে ধর্মগ্রন্থের সমপর্যায়ে ফেলতেও বাঙালির জুড়ি নাই । যাইহোক আজকে প্রসঙ্গ সেটা না । আজকে নোকিয়া ফোন নিয়ে কিছু নসিহত করবো । নন-ডিসক্লোজার-এগ্রিমেন্টের জন্য অনেক কিছুই বলতে পারবো না । তবে বহুল প্রচলিত দুটো মিসকনসেপশন এখানে ভাঙার চেষ্টা করবো ।



মিসকনসেপশন ১ : হাঙেরি, ফিনল্যান্ডের সেট সবচেয়ে ভালো । চায়নারটা তার থেকে খারাপ । আর ইন্ডিয়া বা “আজারবাইজানের” সেট সবচেয়ে খারাপ ।





এই কথাটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও এইটা বাংলাদেশ বা গোটা উপমহাদেশে একটা জনপ্রিয় কিন্তু ভুল ধারনা । প্রথমে একটু খেয়াল করে দেখি যেকোন একটা নোকিয়া সেটকে দেখি । দেখবেন যেকোন ইলেকট্রনিক কমিউনেকেশন ডিভাইসের মতো এর দুটো পার্ট । এক. সফটওয়্যার দুই. হার্ডওয়্যার । এখন একটা একটা করে দেখি এগুলোতে দেশ বেসিসে প্রডাকশনে হেরফের হতে পারে কিনা ।

প্রথমত, একটা নির্দিষ্ট ফোনের জন্য নোকিয়া একটাই সফটওয়্যার বানায় । অঞ্চলভিত্তিক কিছু ভ্যারিয়ান্ট আলাদা করে বানানো হয় । যেমন এ্যামেরিকা/ইউরোপের টিমোবাইল, জার্মানির ফোডাফোন (এইটাই সঠিক উচ্চারণ) ।এর বাইরে ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক আলাদা থাকতে পারে । এই সফটওয়্যারের বিভিন্ন ভার্সন আছে । অঞ্চলভেদে সেগুলোর রিলিজ ডেইট ভিন্ন । অর্থাৎ একই সময়ে জার্মানির ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার ভার্সন বাংলাদেশ থেকে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার ভার্সনের সাথে নাও মিলতে পারে ।

এই সফটওয়্যারগুলোর এপিআই (API – Application Programming Interface) দিয়ে ডেভেলপাররা শুধুমাত্র তাদের বানানো এ্যাপ্লিকেশন দিয়ে ফোন মেমরিতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে যেমন ফোনবুকে এন্ট্রি যোগ বা এইধরনের খুব সামান্য পরিবর্তন । এর বাইরে নোকিয়ার সফটওয়্যার/অপারেটিঙ সিস্টেম ক্লোজড করে রাখা । এই সফটওয়্যারের কোন সিগনিফিক্যান্ট পরিবর্তন আপনি করতে পারবেন না । অতএব, কেউ নকল বা নিম্মমানের সফটওয়্যার আপনার ফোনে ভরে দেবে এটা খুব কষ্ট কল্পনা । সুতরাং আপনি ধরে নিতে পারেন নোকিয়ার সফটওয়্যার বিশ্বব্যাপি একই ।

এখন আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে । নোকিয়ার হার্ডওয়্যারটাকে আপনি সাপ্লায়ারের বেসিসে দু’টো ভাগে ভাগ করতে পারবেন । এক. ব্যাটারি দুই. মূল ফোন । ব্যাটারি সম্পর্কে বলা যায় আগে নোকিয়া একটা জাপানিজ কোম্পানি (মাতসুহিতা, এরা প্যানাসনিক, ন্যাশনাল টিভি, মিউজিক সিস্টেম বানায় । অর্থাৎ খুবই ভালো মানের সাপ্লায়ার ।) আর একটা চায়নিজ কোম্পানি থেকে ব্যাটারি নিতো । বাংলাদেশের কনভেনশনাল উইযডম আপনাকে বলবে জাপানিজ মাতসুহিতার ব্যাটারিই ভালো । তথ্য পুরোটাই ভুল । সাম্প্রতিক ইতিহাসে চায়নিজ ব্যাটারির পার্ফমেন্সই ভালো । জাপানিদের সাপ্লাই দেয়া ব্যাটারির একটা বিশাল অংশ ফেরত নিয়ে নোকিয়াকে রিপ্লেস করে দিতে হয়েছে । এরপর থেকে তারা মাৎসুহিতার কাছ থেকে ব্যাটারি নেয় না । এবং নোকিয়ার ব্যাটারি এই মুহুর্তে চায়নিজ সোর্স থেকেই আসে । সুতরাং আজারবাইজান, পোল্যান্ড ব্যাটারি বদলে কম দামি ব্যাটারি ভরে দিচ্ছে এই ধারনা থেকে আপনি সহজেই মুক্ত হতে পারেন ।



দ্বিতীয়ত, মূল ফোন । মূল ফোনের দুইটা অংশ । একটা হলো বডি আরেকটা মূল সার্কিট বোর্ড । আমাদের বেশিরভাগেরই মূল চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই ঐ মূল সার্কিট বোর্ডের দিকেই যাবে । এখন হয়তো কেউ ভাবতে পারে যে হয়তো ধোলাইখালের “এঞ্জিনিয়ার”রা কোন পার্টস বদলে নকল পার্টস ভরে দিচ্ছে ! তারা কি কি পার্টস বদল করতে পারে ? এ তালিকায় আসে স্কৃন, আরম (ARM) প্রসেসর, ডাব্লিউ ল্যান (wlan) চিপ, জিপিএস চিপ, সাউন্ড প্রসেসর ইত্যাদি । কিন্তু আমরা একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবো যে এগুলো বদলে অন্য কমদামি চিপ দেয়া আসলে সম্ভব না । কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমের মতোই ফোনের অপারেটিঙ সিস্টেমের মধ্যে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ড্রাইভার থাকে । এই হার্ডওয়্যার ড্রাইভার না থাকলে ঐ অপারেটিং সিস্টেম সেই হার্ডওয়্যার নিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না । নোকিয়া অপারেটিং সিস্টেমে চিপ বদলে নতুন কমদামি চিপ বসিয়ে সেটা চালানোর সুযোগ নেই । কারন নোকিয়া অন্য হার্ডওয়্যার ড্রাইভার ইনস্টল করার কোন অপশন খোলা রাখে না । অতএব পার্টস বদলে আজারবাইজানের ফ্যাক্টরি বেশ দু’পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে এই ধারনা ভুল । পুরো পৃথিবীতেই একটি নির্দিষ্ট মডেলের ফোনের হার্ডওয়্যার তাহলে দেখা যাচ্ছে একই রকমের ।





মিসকনসেপশন ২: ব্যাটারি চার্জ শেষ হলে তবেই আবার চার্জ দেয়া উচিত ।

(ব্যাটারি সংক্রান্ত এই অংশটা যেকোন লিথিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)



এটা সত্য ছিলো যখন আদিযুগে মানুষ মোবাইল ফোনে নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করতো । কিন্তু এখন সব ফোনেই লিথিয়াম আয়ন/লিথিয়াম পলিমার আয়ন ব্যাটারি থাকে । এতে এই থিওরী অচল । বর্তমানে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার সম্পর্কে কিছু টিপস দেই -

১. প্রতিদিন বাসায় ফিরে ব্যাটারির চার্জের অবস্থা যাই থাকুক চার্জ দিয়ে নেবেন । পুরোটা না দিতে পারলেও ক্ষতি নেই । তবে চার্জারে ফোন কানেক্ট করে রাতে ঘুমাবেন না । এটা বিপদজনক । কেন বিপদজনক একটু পরে বলছি ।

২. এই ব্যাটারির সেল্ফ লাইফ নেই । অর্থাৎ, এটার ক্ষমতা আপনি না ব্যবহার করলেও দিন দিন কমতে থাকবে । মনে করুন আপনি ২০০০ সালে বের হওয়া একটা ফোন ২০০৯তে এসে কিনেছেন । এই ফোনের সাথে যে ব্যাটারি পাবেন সেই ব্যাটারি থেকে যেই সার্ভিস পাবেন সেটা যারা ২০০০ সালে যারা ঐ ফোনটি কিনে ব্যবহার করেছেন তাদের থেকে অবশ্যই কম পাবেন । এইসব ক্ষেত্রে আমরা “বুঝেনইতো … এখন সব জিনিস চায়না ইন্ডিয়া বানাচ্ছে … জিনিসপত্রের কোয়ালিটি একদম যাচ্ছে তাই হয়ে গেছে … ” টাইপের একটা সিদ্ধান্তে এসে পড়ি । বুঝতেই পারছেন ওটা আসলে সঠিক চিন্তা নয় ।



৩. কখনোই ব্যাটারির চার্জ পুরোটা শেষ করবেন না । ইমার্জেন্সি ভিন্ন ইস্যু । তবে সাধারণ ক্ষেত্রে ফোন চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হতে দেবেন না । তার আগেই ফোন অফ করে রাখবেন । এটা করলে ব্যাটারি ডিপ ডিসচার্জ লেভেলে চলে যেতে পারে । এই লেভেলে চলে গেলে পুরোটা চার্জ করতে ফোন অনেকক্ষন চার্জে রাখতে হয় । নাহলে দেখবেন খুব অল্প সময়ে ব্যাটারি ডিসচার্জ হচ্ছে । এবং অনেক সময় অনেকক্ষন চার্জ দিয়েও মাঝে মাঝে ব্যাটারিকে আগের অবস্থায় আনা সম্ভব হয় না । মনে করে দেখুন আপনার আশে পাশেই অনেকে বা আপনি নিজেই এই হঠাৎ করে চার্জ শেষ হওয়াটাইপ সমস্যায় পড়েছেন । এটার কারন এই ডিপ ডিসচার্জ লেভেল ।



৪. কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি খুব গরম হয় । আপনার ব্যাটারি এরকম অস্বাভাবিক গরম হতে থাকলে সেটা ফেলে নতুন ব্যাটারি কিনুন । এর কারন হলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উচ্চ তাপে বিস্ফোরিত হয় । এই বিস্ফোরণের মারাত্মক আহত হয়েছে এরকম ঘটনা আছে । সাধারণত ফোনের ব্যাটারি পুরো চার্জ হলে সেটাতে আর পাওয়ার সাপ্লাই হয় না । এটা এক ধরনের সুইচের মাধ্যমে করা হয় । ব্যাটারি গরম হতে থাকলে এই সুইচ কাজ না করতেও পারে । অতএব ব্যাটারি চার্জে রেখে ঘুমাতে যাবেন না ।



৫. অজায়গা-কুজায়গা থেকে ধুন পুন চার্জার কিনে সেটাতে চার্জ দিতে যাবেন না ।



৬. এক্সট্রা ব্যাটারি থাকলে সেটা মোটামুঠি আধাআধি চার্জ করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন ।

এ পর্যন্ত এটুকুই । পরে মনে পড়লে আরেকটা পোস্ট দেয়া যাবে ।

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×