somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাক এর সমালোচনা- পাতি মধ্যবিত্তের আস্ফালন

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রাকের ঋন গ্রহিতা দরিদ্র রিক্সা চালক আবদুর রশীদ এর হত্যাকান্ড সাম্প্রতিক সময়ের একটি মর্মান্তিক ঘটনা। স্পষ্টতই ব্রাকের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদের এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে দায়ী করা হয়েছে। স্থানীয় সুত্রের খবর অনুযায়ী টাকা আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগের পন্থায় ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় এই দুঃখ জনক মৃত্যু অথবা হত্যা কান্ডটি ঘটেছে। পরবর্তী কালে ব্রাক একটা আপোষ রফার মধ্য দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলতে চাচ্ছে বলে পত্রিকা সুত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে।যে অভিযোগ সত্য বলে মনে করার পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমান ব্রাক কর্মকর্তাদের ভাষ্যেই পাওয়া গেছে।

দরিদ্র রিক্সা চালক আবদুর রশীদ এর এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড নিয়ে সংবেদনশীল ব্লগার গন তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন- ব্রাক কে আসামির কাঠ গড়ায় দাড় করিয়েছেন। অতি উৎসাহী কেউ কেউ ব্রাক এবং তাদের যাবতীয় পন্য কে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন।

যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া মন্তব্য হিসাবে পাওয়া গেছে তার মধ্যে অধিকাংশই ক্ষোভ এবং আবেগে ভরা।পুরা বিষয়টায় কোন ধরনের গোছান ভাবনা চিন্তা আমার নজরে আসেনি- বরং ভাবনা চিন্তার বিপরীতে যে কাজটা করা সবচেয়ে আরামপ্রদ, ব্লগারগন তাই করেছেন। কষে ব্রাককে গালি দিয়েছেন।

এ সমস্ত মৃত্যু-শোক-দুর্ভোগ-যন্ত্রনাকে শহুরে মধ্যবিত্ত সবসময়ই তার দুধভাত আর সুখশয্যা উপভোগে উৎপাত হিসাবে দেখে। ব্রাকের প্রতি গোস্বা হওয়াটা তাই যুক্তিসংগত বৈকি………

যারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাদের কেউ কেউ…… “শ্রেনী শত্রু খতমের জন্য চারু মজুমদারের পথ অনুশরণ করা”…… অথবা “একটা ৭১............! সেই ৭১ হবে জনযুদ্ধের............” ডাক দিয়েছেন।

এর মধ্যে কেউ কেউ “বাংলাদেশের অবহেলিত মানুষরা” যে বিদ্রোহ করে বসে উঁচু দালান কোঠায় যারা থাকেন সে সব অবহেলিত নন এমন মানুষের ঘুমানোতে ব্যঘাত ঘটায়নি সেজন্য কৃতজ্ঞ হয়ে তাদের “আসলেই সত্যিকারের মানুষ.....” বলে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। কি সাংঘাতিক প্রশংসা!!!

আমি এ কদিন প্রতিটা মন্তব্য এবং পোষ্ট মন দিয়ে পড়ছিলাম- বোঝার চেষ্টা করছিলাম ব্রাকের বিরুদ্ধে মোটা দাগের অভি্যোগ গুলা কি নিয়ে। দরিদ্র রিক্সা চালক আবদুর রশীদ এর হত্যাকান্ড কিছুতেই সমর্থন যোগ্য নয় এবং এ হত্যাকান্ডের দায় ব্রাককেই নিতে হবে।কিন্ত এ প্রশ্ন ছাড়া আর কি স্পষ্ট সমালোচনা ব্রাকের প্রতি আছে, এ সকল মন্তব্য পড়ে তার কোন নির্দেশনা পেলাম না।

আমার যদি বোঝার ভুল না হয়ে থাকে তবে কিছু বিষয় পরিস্কার করে নেওয়া ভাল—

• আমার ব্লগের বন্ধুরা নিশ্চয় কোন বৈপ্লবিক অর্থনীতির ব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্ন দেখছেন না বা তাতে সামিল হওয়ার উদ্দ্যোগ নিচ্ছেন না- সেটা আমরা যতক্ষন না করছি, আমাদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে আমরা বাজার অর্থনীতির মধ্যে বসবাস করছি। এর যা কিছু লক্ষন এবং চিহ্ন তার সবটুকুই এখানে উপস্থিত থাকবে- কিছু যায় আসে না এটা দেখে আমাদের কি প্রতিক্রিয়া হলো বা না হলো।
• ব্রাকের প্রতি সমালোচনা কি তার মাইক্রো ক্রেডিট কর্মসুচি নিয়ে? যদি তাই হয় তবে আমাদের আলোচনাটা সেখানে আমরা কেন্দ্রীভুত করতে পারি। ব্রাক তার ঋন আদায়ের জন্য কি কি পন্থা নিতে পারে- এক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে অতি অবশ্যই পরিস্কার গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন- এ ধরনের কোন গাইড লাইন কি আদৌ আছে? ঘরের টিন খুলে নিয়ে নিয়ে আসার কাহিনী আমরা প্রায়ই শুনি- এটার বৈধতা কি ভাবে যাচাই করা যায়?
• মাইক্রোক্রেডিটের আওতাধীন ঋন গ্রহনকারীরা প্রায়শই ঋন পরিশোধে অসমর্থ হয়- এখন এই ঋন কি ব্রাক মাফ করে দেবে বলে আমরা আশা করছি? ঋন আদায়ে নমনীয় হবে? হলে কতটা?
• ব্রাকের পন্যের (এখানে আড়ং ফ্যাশন আউটলেট এর নাম এসেছে) সমালোচনা হিসাবে এসেছে তাদের পন্যের দাম বেশী…… ইত্যাদি ইত্যাদি- এখন মার্কস এন্ড স্পেন্সার যে শার্ট বিক্রি করে- তার চেয়ে অনেক কম দামে শার্ট পাওয়া সত্ত্বেও-- মানুষ যুগ যুগ ধরে বেশি দামেরটাই কিনে আসছে। কারন ব্রান্ড মানে আস্থা, ব্রান্ড মানে কমিটমেন্ট, এর অর্থ কাপড়ের কালার, কোয়ালিটি, বোতাম ছিড়ে যাবে কিনা এগুলো নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না। এভাবেই নির্দিষ্ট মান, সেবা, বাড়তি উপযোগিতা বজায় রেখেই তিলে তিলে একটা ব্রান্ড গড়ে ওঠে। এর জন্য বাড়তি মুল্য তো দিতেই হবে।
• ব্রাকের পন্য বর্জন আমরা কতটুকু সমর্থন যোগ্য মনে করি- যখন এটা একটা শিল্প হিসাবে গড়ে উঠছে- হাজার হাজার লোকের জীবিকা যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে? আমরা কি বাংলাদেশীয় ব্রান্ডিং এর গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো?
• ব্রাকের যে সমস্ত অপব্যবহার- অব্যবস্থা এবং অবিচার এসবই বাংলাদেশের অবিকশিত অর্থব্যাবস্থা- দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে উদ্ভুত- এ পরিস্থিতিতে ব্রাক না হয়ে অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান একই কাণ্ড ঘটাত। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ব্রাক বলেই এ ঘটনা ঘটেছে এটা অতি সরলীকরন একটা ধারনা, ব্রাককে নিন্দার পাশাপাশি এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমাদের চিন্তা করা উচিত।

গত কয়েকদিন এই ব্লগ গুলো নিয়মিত পড়ার পর আমি বুঝতে চেয়েছি, এই জরুরী প্রশ্নগুলো নিয়ে আমরা ভেবেছি কিনা।কোন দিক নির্দেশনা খুজেছি কিনা। যদি না ভেবে থাকি তবে এ ধরনের পোষ্ট গুলো মুখরোচক বুলি হিসাবেই থেকে যাবে। পাতি মধ্যবিত্তের আস্ফালন দিয়ে আমরা খুব বেশীদুর যেতে পারবো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
১৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×