somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুল বাস্তবায়ন (তিন) আপডেটেড

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুল বাস্তবায়নে ক্ষণিকের জন্য থমকে যেতে হলো। ১৪/১০/২০০৮ তারিখ স্কুলের চারিদিকে বেড়া দেওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ করেই জানতে পারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাকি স্থাপনাটির নির্মান কাজ আর এগুতে নিষেধ করেছেন। স্লুইস গেটের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত আনসার কমান্ডার মোবাইলে স্কুলের সদস্য মাহবুব আজাদ সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা মজু চৌধুরী হাট চলে যাই আনসার কমান্ডারের খোঁজে। কমান্ডারের দেখা না পেলেও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসের ঠিকানা নিয়ে আবার লক্ষ্মীপুর শহরের দিকে রওনা হই।

মাহবুব সাহেবের পেছনে বসে মোটরসাইকেলে করে ছুটি লক্ষ্মীপুরস্থ দালাল বাজার-এ পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে। অনুমতি নিয়ে আমরা দু'জনে প্রবেশ করি। প্রকৌশলী সাহেব একজন নিপাট ভদ্রলোক। স্মিত হেসে আমাদের স্বাগত জানান। একটু সময় চেয়ে নিয়ে অফিস সহকারীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ওয়ার্ক সেরে নিয়ে আমাদের দিকে মনোযোগ দেন। আমরা আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য খুলে বলি।

মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন যে স্থানটিতে অবস্থিত- তা দুইটি স্লুইস গেটের ঠিক মধ্যিখান দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বাঁধের উপর। এই বাঁধটুকুই মাঝিদের কাছে একটুকরো স্থল। কিন্তু হলে কি হবে- এ স্থানটুকুর উপর মাঝিদের কোন দখলীস্বত্ব নেই। স্লুইস গেটের নিরাপত্তার জন্য এখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ। এই স্থানটুকু সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিগণিত। তাই ১২ জন আনসার পালাক্রমে এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত।

চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দক্ষিণ বঙ্গে প্রবেশ করার এ ফেরি ঘাট স্থানটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটি দিন দিন অবৈধ দখলদারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এ অভিযোগ স্বয়ং নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ ইকবাল হোসেন এর। আমাদেরকে তিনি সরকারি বিধিনিষেধের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অনুমতি না দিলেও আপাতত স্থানান্তর সাপেক্ষে তা চলতে পারে বলে মন্তব্য করলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ইচ্ছে করলে পাউবো'র নিজস্ব জায়গা থেকে স্কুলের জন্য জমি দিতে পারে। আমাদের স্কুল সংক্রান্ত বিষয়াদি খুঁটিনাটি জেনে তিনি সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিলেন। এমনকি স্থানীয় মেম্বারের সাথে আলোচনা করে স্কুলের জন্য জায়গা নির্বাচনের জন্যও আমাদের পরামর্শ দিলেন। স্কুলটি এরকম হবে যাতে খেলার মাঠের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। আরে! এ যে দেখি মেঘ না চাইতেই জল। কোথায় ভেবেছিলাম আমাদের উদ্যোগ বুঝি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে বসেছে! আর এখন দেখছি খেলার মাঠ সহ একটি পরিপূর্ণ স্কুল স্থাপনার স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে।

আজ আর একটু উদ্যোগী হই। মাঝি পরিবারের দক্ষিণ পাশে বোল্ডার দ্বারা বেষ্টিত যে বাঁধটি মেঘনার বুকে অনেকদূর গিয়ে মিশেছে সেই বাঁধের দুপাশে আরেকটি বড় জনপদ। স্থানীয়দের মতে প্রায় ১৪০/১৫০টি পরিবারের বাস। এদেরও পেশা একই। মাছ ধরা। নৌকায় বসবাসরত মাঝিদের সাথে এদের পার্থক্য হচ্ছে এরা ডাঙ্গায় বাস করে। এই জনপদে মাত্র তিনমাস আগে এসেছেন এমন পরিবার আছে ৪টি। ভোলার নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে জীবন তরী ভাসিয়ে মজু চৌধুরী হাটের পাশে মেঘনার তীরে বাসা বেঁধেছেন।

আমরা মোটরসাইকেলে করে অন্ধকারের মধ্যে কাঁচা রাস্তা ছাড়িয়ে নদীর তীর ধরে সোজা পশ্চিমে এগুতে থাকি। সন্ধ্যার অন্ধকার আরও গভীর হয়েছে। প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটির দুই পাশে নানান জাতের গাছের সমাহার। এক একটি বাড়িকে গাছ-গাছালি, লতা-পাতা এমনভাবে বেষ্টন করে আছে যে সন্ধ্যার এই অন্ধকারটুকুই আমাদের কাছে গভীর রাত্রি বলে মনে হচ্ছে। ফেরার পথে সামনে একটি ঘর পড়ে। ঘরের মালিকের সাথে কথা হয়। ভোলার নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে আজ তিন মাস হলো এখানে উঠেছেন। নাম মনছুর মহাজন। পূর্বে দখল করা একজনের কাছ থেকে দুই হাজার ছয়শত টাকায় কিনে নিয়েছেন জায়গাটুকু। আসলে এই পরিবারটি প্রতারণার শিকার হয়েছে। এমনিতেই অবৈধ দখল করে রাখা তার উপর আবার এই নিঃস্ব লোকদের কাছে তা বিক্রি। অমানবিকও বটে।

এই জনপদে খোঁজ নিয়ে জানা গেল প্রতি ঘরে গড়ে ৩ জন করে শিশু থাকলে প্রায় ৪৫০ জন শিশু। এদের মধ্যে বড়জোর ৩ জন মাদ্রাসা এবং ৫ জন প্রাথমিক স্কুলে যায়। এ স্থানের প্রায় এক দেড় কিলোমিটারের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু জীবনের নানান অধিকার থেকে বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী স্কুলে বাচ্চাদের পাঠাতে উৎসাহী না। কেউ কেউ স্কুলে যেতে চাইলেও তাদেরকে ভদ্র সমাজের স্কুলে নেওয়া হয় না। তাছাড়া মাছ ধরার কাজে নৌকা বেয়ে মেঘনার বুকে যাওয়া শিখতে পারাটাই অভিভাবকদের কাছে মূখ্য। তবে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর আগ্রহ সবার মধ্যেই দেখা গেল। শিশুদের খুব কাছে এরকম একটি স্কুল হলে সবাই তাদের সন্তানদের পাঠাবে।

মেঘনা পাড়ের এই শিশু এবং মাঝি পরিবারের ঐ শিশুদের নিয়ে এখানে প্রায় পাঁচ/ছয়শ'র মতো শিশু। বাংলাদেশের এমন অনেক স্থান আছে যেখানে অপ্রয়োজনে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে, শিক্ষার্থী তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ-পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী জোগাড় করতে গলদঘর্ম হতে হয়। বিনা পয়সায় পড়ার প্রলোভন দেখিয়ে নানান সুবিধা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। আর এখানে রেডিমেড কয়েকশত শিশু কিশোর। ওদের জন্য কি আমরা সবাই মিলে একটু একটু করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি না!

আমরা মজু চৌধুরী হাটের কমিশনার আলমগীর এর সাথে কথা বলি। কমিশনার সাহেব আমাদের আশ্বাস দেন স্কুলটিকে সার্বিক সহায়তা করবেন। আমরা আশা করি কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি স্কুলটিকে ব্যবহার করবেন না।

আপডেট
আমরা চারিদিক থেকে এরকম সহায়তায় আরও উদ্দীপ্ত হচ্ছি। স্কুল ঘরের চারিপাশে কাল থেকে বেড়া লাগানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে। কাল স্কুলের এই চালার নিচে মাদুর বিছিয়ে শিশুদের সাথে শিক্ষকের পরিচয় ঘটবে। মজু চৌধুরী হাটের স্থানীয় খাতুনে জান্নাত সুমী 'মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন' এর শিক্ষিকা। সে বিকাল তিনটার দিকে মাঝিপাড়ায় গিয়ে তার ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে যাবে। আমাকে আবার ভোরে কর্মস্থলে ছুটতে হবে। বিদ্যানিকেতনটি ছেড়ে অনেক দূর। তাই শিশুদের সাথে মিশে যাওয়ার মুহূর্তটির সাথে আমি থাকতে পারবো না। কিন্তু আমার মন মিশে থাকবে মেঘনা পাড়ের এই জায়গাটিতে-যেখান থেকে শিশুদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হয়েছে...

আসুন না সবাই মিলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশীদার হই। আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলটিকে শুরু করতে এই মুহূর্তে আরও কিছু অর্থের প্রয়োজন। শ্লেট, ব্ল্যাক বোর্ড, স্কুল ড্রেস, ঘন্টা, জাতীয় পতাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই অর্থ ব্যয়িত হবে।

অর্থ পাঠানোর ঠিকানা
মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন
চলতি হিসাব নং ০০১-৭২৩২
সোনালী ব্যাংক, সদর, লক্ষ্মীপুর।

দৃষ্টি আকর্ষণ @ কাঙ্গাল মুরশিদ। ঈদের আগে পাঠানো আপনার ১ হাজার টাকা এখনও স্কুলের নামে জমা হয়নি। বিষয়টা যদি একটু মনিটরিং করতেন...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×