somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বগত আলাপ ০২: আফগান কবির 'ভয়েস' নাকি আমার!

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কিছুদিন ধরে মন মেজাজ ভালো নেই। মন ভালো না থাকা আমার পুরনো অসুখ (তবে, সেটা আজকের পোষ্টের বিষয়বস্তু না)। আমি ইদানীং বাসায় তেমন একটা ফোন করিনা। মিথ্যা বলতে ভালো লাগেনা। মা কেমন আছি জিগেস করলে বলতে পারিনা আমি ভালো নেই কিংবা আমার মন খারাপ। মাকে এসব বললে মা উপোস থাকা শুরু করবে। তারচে আমি উপোস থাকি সেই ভালো। মা ভালো থাকুক। তারপরও যে মা বুঝতে পারেনা তা কিন্তু নয়। মা ঠিকই বুঝে ফেলে। তবে, ছেলের মুখে 'ভালো নেই' শুনলে মা অনেক কষ্ট পাবে। তাই মিথ্যা বলাই আপাতদৃষ্টিতে ভালো। কারণ সহস্র মাইল দুর থেকে ছেলের মুখে 'ভালো নেই' শুনতে পৃথিবীর কোন মায়ের ভালো লাগার কথা নয়।
আমার একমাত্র পিচ্চি বোনটা ও বুঝে ফেলে কখন তার ভাইয়ের মন খারাপ। মাঝে মাঝে এই একটা ব্যাপারে অবাক না হয়ে পারিনা। এটা বুঝতে পারার ক্ষমতা কি বিধাতা শুধুমাত্র নারীদেরই দিয়েছেন? আমার ভাইদের কাছে কখনো শুনিনি 'ভাইয়া তোমার মন খারাপ কেন?' অথচ সবার ছোট আমার বোন সে আমাকে বলে 'ভাইয়া তুমি মন খারাপ করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে'।

আমি খুব চাপা স্বভাবের। কোন বন্ধুকে মন খারাপ করতে দেখলে নিজে তাদের বলি আমার সাথে শেয়ার করতে, কিন্তু নিজের মন খারাপের কথা শেয়ার করতে পারিনা। খুব বেশি অসহায় না হলে কাউকে বলিনা। নিজের মতো করে রুমে চুপ মেরে বসে থাকি। নওরিনকে মাঝে মাঝে ফোন করে এসব অবেলার স্বগত আলাপ করতাম। সে চুপচাপ শুনতো। তার সাথেও ইদানীং তেমন একটা কথা বলিনা। ভালো লাগেনা। ইদানীং কোন কিছুতেই ভালো লাগে না। নিজের মতো করে থাকতে ইচ্ছে করে।

আজকে যেটা নিয়ে লিখতে বসেছি সেটাই এতক্ষণ লেখা হলো না। এখানে আন্ডারগ্রাউন্ড এর ট্রেনে কবিতা পড়ার সুযোগ থাকে।'পোয়েমস অন আন্ডারগ্রাউন্ড' । সেটা কেমন বলি।
ট্রেনে বিজ্ঞপন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। হিসেব করে দেখলাম জীবনের একটা অংশ এই ট্রেনেই কাটিয়ে দিলাম। আমাকে প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস কিংবা কাজের কারণে বাইরে যেতে হয়। সে হিসেবে দিনে দু'ঘন্টা করে যদি সপ্তাহে পাঁচ দিনও ধরি তাহলে বছরে চারশো আশি ঘন্টা আমার ট্রাভেল করা হয়। মানে বছরের বিশটা দিন এই ট্রেনেই কাটিয়ে দিই। সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে অন্তত একবার হলেও সবার চোখে পড়বে। ট্রেনে বিজ্ঞাপনের বাইরেও অনেক কিছু চোখে পড়ে। 'পোয়েমস অন দি আন্ডারগ্রাউন্ড' পোষ্টারটা দেখলে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। ১৯৮৬ সাল থেকেই এখানে ট্রেনে কবিতা দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আমেরিকান কবি 'জুডিথ' ই নাকি সর্বপ্রথম এ ধরণের ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা করেছিলেন। বলাবাহুল্য এটা শুধুমাত্র লন্ডনে সীমাবদ্ধ নয় (নিউ ইয়র্ক, সিডনি, এথেন্স, মস্কো, বার্সিলোনা সহ বিশ্বের আরো অনেক দেশে প্রচলিত)। এমনিতে আমি তেমন ইংরেজী কবিতা পড়িনা। খুব কমন কিছু কবিদের কবিতা পড়া হয়েছে। 'পোয়েমস অন দি আন্ডারগ্রাউন্ড' এর কল্যাণে অনেক অপরিচিত কবিদের কবিতা পড়া হয়েছে। যাইহোক, সেদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একটা কবিতা চোখে পড়ে।
My Voice:
I come from a distant land
with a foreign knapsack on my back
with a silenced song on my lips.
As I travelled down the river of my life
I saw my voice swallowed by a whale and
my very life lived in my voice........
by Partaw Naderi(translated by sarah maguire and yama yari)

আমি পড়ে প্রথমে কিছুটা অবাক হই। পরে আরো কয়েকবার পড়লাম। আশ্চর্য! এটা যেন আমাকে নিয়েই লেখা হয়েছে। কবির নামটা দেখে চিনতে পারলাম না। তারপর কি মনে করে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তাড়াতাড়ি করে নোটস এ টুকে রাখলাম। বাসায় এসে গুগলে এই কবিতাটি সার্চ দিলাম। 'পার্থ নাদেরী' নামের এক আফগান কবি এ কবিতা লিখেছেন। একজন আফগানি কবি যেন আমার নিজের কথাগুলো লিখে গেলেন। ১৯৫২ সালের লেখা একটা পুরাতন কবিতা কিভাবে যেন আমার খুব প্রিয় কবিতা হয়ে গেলো। এটা বারবার পড়ছি। এই কবির সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমি এতো ব্যস্ততার মাঝেও দমিয়ে রাখতে পারিনি। গুগলে সার্চ দিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে কবি ও তার কবিতার পেছনের ইতিহাস পড়লাম। জানতে পারি তিনি কাবুলের কারাগার এ ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিলেন। পরে পাঁচ বছরের মতো নির্বাসনেও ছিলেন। তখনকার লেখা কবিতাগুলো একেকটি যেন তার জীবনের একেকটা ছবি। 'দি মিরর' কবিতাটিও তেমন একটি।

The Mirror
I have spent a lifetime in the mirrors of exile
busy absorbing my reflection
Listen —
I come from the unending conflicts of wisdom
I have grasped the meaning of nothingnes.
Kabul
1989


এটা নিয়ে বিস্তারিত লেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পড়ালেখার চাপে সময় করতে পারছিনা। কেউ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন।
নাদেরীর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এখানে ঘুরে আসুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৭:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×