somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগামীকালের বকেয়া সংবাদ

১০ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধাক্কাটা কিসের সাথে লাগল বুঝে উঠার আগেই ডান দিকে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি এঙ্গেলে উড়ে গিয়ে পানিতে ঝপাৎ। গল্লুৎ করে এক দলা পানি ঢুকে যাচ্ছিল মুখে। আটকানোর জন্য মুখ ঝামটা দিতেই পানিগুলো পেটে না ঢুকে ঢুকে গেলো তালুতে। হাঁচচু দিয়ে তালু পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি আরো বড়ো একটা চালান সরাসরি ঢুকে গেছে পেটে

একটা ছটফটানি দিয়ে একটু শ্বাস নিতে চাইলাম। বাতাসের বদলা ভেতরে ঢুকে গেলো পনি। মাছেদের মতো একটা কানকো থাকলে এখন খুব কাজে লাগতো। পানি চিবিয়ে অক্সিজেন বের করে ফেলতে পরতাম। কিন্তু চোখ আর কানগুলোকে ভেতর থেকে কেউ যেন ঠেলাঠেলি করছে বাইরের দিকে। বুকের ভেতরে যেন বেলুন ফোলাচ্ছে কেউ

একটা মোচড় দিয়ে দুয়েক হাত উপরে উঠে ধীরে ধীরে নামতে থাকলাম নিচে। বাতাসের মতো পানিরও একটা শিনশিন শব্দ আছে। বাতাসের শব্দ লাগে কানে কিন্তু পানির শব্দ টের পাওয়া যায় দুই কানের মাঝখানে মাথার ভেতরে

পায়েই প্রথম মাটি ঠেকল। কাদা কাদা মাটি। অনেকটা ঢুকে গেলো। তারপর লাগল মাজা। তারপরে মাথার পেছন দিকে নরম কাদার একটা ধাক্কা টের পেলাম। কান পর্যন্ত ঢুকে গেলো ভেতরে। সব শেষে এসে মাটিতে স্পর্শ করল মেরুদণ্ড

পানি এখানে দেয়ালের মতো স্থির। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে খারাপ লাগছে না। অনেকটা দোলনায় পিঠ ঠেকিয়ে পা আর মাথা নিচে ঝুলিয়ে শুয়ে থাকার মতো। পা আর মাথা মাটির অনেক নিচে। কিন্তু পিঠটা আলতো করে লেগে আছে কাদায়

হয়তো কিছুক্ষণ না হয় কয়েকদিন পরে হাতের ঘড়িটা বেশ টাইট হয়ে গেলো। মাজার বেল্টটাও ঠেসে বসল মাংস কামড়ে। পরনের জুতা জিন্স এমনকি ঢোলাঢালা ফতুয়াটাও ছোট হয়ে এলো আমার শরীরের মাপে

একটা ঝাঁকি খেলাম। মাজাটা বেশ উঁচুতে উঠে ঝুলে থাকল। মাথাটাও কাদার ভেতর খেকে কিছুটা উঠে এলো। আরো কিছুক্ষণ কিংবা কিছুদিন...। আরেকটা ধাক্কায় হাঁটু পর্যন্ত শূন্যে উঠে এলো। আরো কিছুক্ষণ পরে পা দুটোও উঠে গিয়ে শুধু মাথার পেছনটাই পড়ে থাকলো কাদায়...

এবার পানির ভেতরে চ্যাং দোলা হয়ে উঠতে থাকলাম আমি। পেট আর বুক উপরে। ঠ্যাং আর মাথা ঝুলে আছে দুই মাথায়। আর সাম্পানের বৈঠার মতো ভাসতে ভাসতে যাচ্ছে দুই হাত

পেটের চামড়ায় রোদ লাগার একটু পরেই কাউয়া কা করে আমার উপর একটা কাক এসে বসে হাউকাউ শুরু করে দিলো। তার ডাক অন্য কাকেরা শোনার আগেই ভুসভুস করে একটা ইঞ্জিন বোট উঠে গেলো আমার উপর। অনেক দূর পর্যন্ত ঠেলে নিতে নিতে আলকাতরা মাখানো পুরো শরীরটা পিছলে পার করে দিলেও ঝামেলা বাঁধালো স্টিলের দাঁড়। ঘ্যাচাং করে এসে পেটের একপাশে লাগল দাঁড়টা। উপর থেকে কেউ দু তিনবার ঝাঁকি মেরে খুলতে চাইল। কিন্তু দাঁড়ের কোনা আমার পেটের ভেতর ঢুকে গিয়ে আটকে আছে চামড়া মাংস প্যান্ট আর বেল্টের সাথে

ট্রলারটা আস্তে আস্তে থেমে গেলো। কেউ একজন বাঁশ নামিয়ে কিছুক্ষণ খোঁচাখুঁচি করে ছাড়াতে না পেরে নেমে এসে পা দিয়ে দিলো নিচের দিকে এক ধাক্কা। আমি দাঁড় থেকে খুলে বেশ নিচে নেমে গিয়ে আবার ভেসে উঠতে লাগলাম উপরে...

ততক্ষণে ভটভটি আবার চলতে শুরু করেছে। ওর পানির টানে আমিও কিছু দূর এগোলাম। এর মধ্যেই ঝুপুত করে কাকটা এসে বসল। সঙ্গে আরো একটা। খপাৎ করে নাভির কাছে দাঁড়ে কাটা জায়গায় একটা কামড় বসিয়ে দিলো

আমিও ভাসছি। কাক দুটোও ভাসছে। হঠাৎ দুইটাই দিলো উড়াল। কয়েক সেকেন্ডের মধে খচাৎ করে পাঁজরে লগির একটা ধাক্কা খেলাম। হাতা নৌকায় যেতে যেতে মাঝি খোঁচা মেরে দেখে নিলো গরু নাকি মানুষ

ধাক্কায় ঢুকে গিয়েছিলাম পানিঘাসের ভেতরে। কাক দুটো বসছে কি বসেনি। নৌকাটা আবার ফিরে এলো। পানি থেকে দুই তিন ইঞ্চি নিচে ডোবা জিন্সের বাম পকেটে লগির মাথা দিয়ে একটা গুঁতা মারল লোকটা। এরপরে নৌকার ভেতর থেকে একটা মাথা বাঁকা দাও নিয়ে এসে দাওয়ের মুখটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে টান দিলো। একহাতে ফতুয়া মুঠো করে ধরে একটা আঙুল ঢোকানোর চেষ্টা করল পকেটের ভেতর। না পেরে দাওয়ের মাথা ঢুকিয়ে ঘষে ঘষে পকেটের এক পাশ কেটে মোবাইলটা নৌকায় রেখে জিন্সের ডান পকেট কেটে দেখে পানিভেজা বিড়ির প্যাকেট...

একটা ভটভটির আওয়াজ শুনে লোকটা নৌকা ঘুরিয়ে আমার উপর তুলে দিয়ে আস্তে আস্তে চালাতে লাগল। ভটভটি চলে যেতেই আবার বের করে দাওয়ের কোঁকড়া মাথা দিয়ে টেনে আমার বাম হাত পানির উপরে তুলে দেখল কিছু আছে কি না। কিছু নেই। ডান হাত থেকে দাও দিয়ে বেল্ট কেটে ঘড়িটা তুলে নিলো নৌকায়। এবার আমাকে উপুড় করে সরাসরি দাওয়ের মাথা ঢুকিয়ে দিলো ফুলে থাকা পেছনের ডান পকেটে। মানিব্যাগটা বের করে টিপে দেখল বাম পকেটে কিছু নেই...

মানিব্যাগ খুলে টাকাগুলো গলুইয়ে রেখে কাগজপত্র ছুঁড়ে ফেলতে লাগল পানিতে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডটা ফেলতে গিয়েও ফেলল না। আমার ফতুয়ার বুকে গুঁজে দিয়ে এক ধাক্কায় আবার পানিঘাসের ভেতরে ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো লগি ঠেলে...

উপরে কাউকাউ কাক। নিচে বিরিবিরি মাছ। যেতে আসতে দুয়েকটা লগির খোঁচা। দুয়েকবার ভটভটির তলায় ঢুকে পড়া আর ন্যাশনাল আইডি বুকে নিয়ে শুরু হলো আমার ভেসে চলা হাওরের পানি থেকে পানির ভেতর...
২০০৮.০৯.০৬ শনিবার
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×