somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদিসের নতুন ভার্সন করতে যাচ্ছে তুরষ্ক - কাউন্টার পোস্ট : ২

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা একটা কাউন্টার পোস্ট। মূল পোস্টটি পড়ার আগে এই পোস্টটি পড়ার অনুরোধ করা হলো, Click This Link .

সুশীল সমাজের লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে উনি অল্প পরিসরে এই ব্যাপারটি নিয়ে লেখায়, অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী হতে পারে। তাই আমার এই পোস্ট।

আপনার লেখা পড়ে যা মনে হলো তা হলো, আপনি বলতে চাইছেন, হাদিস নিয়ে এই যে একটা পরিবর্তন আসছে তখন মুসলিমরা তো কথা বলছে না। তা হলে কি তারা এই হাদিসের পরিবর্তনকে মেনে নিচ্ছেন?

আসলে হাদিসের কোন পরিবর্তন কি হচ্ছে? বা হলেও তা কতটা গ্রহনযোগ্য তা নিয়ে কথা বলতে গেলে একটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। প্রথমেই বলছি বলা হয়ে থাকে যে কোরআন সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষন করা হয়েছে। কেন এটা করা হয়? কি এমন পদ্ধতিতে কোরআন সংরক্ষিত হযেছিল?

কোরআন অবতীর্ণের সময় কোরআনের যে অংশই যখন অবতীর্ণ হত, নবীজী (সঃ) ওহী লিপিবদ্ধকারী সাহাবাদের দ্বারা একদিকে যেমন তা লিপিবদ্ধ করিয়ে নিতেন , অন্যদিকে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম সেটা মুখস্থ করে ফেলতেন। নবীজী (সাঃ) এর তিরোধান মুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ কোরআন যেমন অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের মুখস্থ ছিল , তেমনি বেশ কয়েকজন সাহাবাদের (রাঃ) নিকটে লিপিবদ্ধ আকারেও মওজুদ ছিল। কোরআনের কোন অংশ অবতীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাহাবাদের অনেকেই পাতলা উষ্ট্র চর্মে , মসৃন পাথর টুকরায় , বৃক্ষপত্রে কিংবা বাকলে লিখে নিতেন । কাতিবে ওয়াহী হযরত জায়েদ ইবনে সাবেতের একটি বর্ণনা হাদীসের কিতাবে দেখা যায়।তিনি বলেছেন ,

“আমরা রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহে অছাল্লামের কাছে বসে চর্ম টুকরায় কোরআন শরীফ লিখে নিতাম।” (মোসতাদরিক-ইতকান)

বোখারীর যে অংশে ছাহাবাদের মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের একটি বর্ণনার উল্লেখ আছে যাতে তিনি বলেছেন যে, আমি নবী করীমকে (সঃ) এ কথা বলতে শুনেছিঃ “তোমরা কোরআন চার ব্যক্তির কাছ থেকে শিখে নাও। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, সালেম, উবাই-বিন কায়াব ও মায়ায ইবনে যাবাল।”(বুখারী)



এবার হাদিস সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই।

হাদিস কি?

মূলত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাণী ও জীবনাচরণকে হাদীস বলা হয়ে থাকে। হাদীসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ।
মূলত হাদিসের ৩টি দিক আছে। যথাঃ
১.নবীজী যা করেছেন,
২.নবীজী যা বলেছেন,
৩.নবীজী করেননি বা বলেননি আবার অন্যকে করতে দেখে বাধাও দেননি (মৌন সম্মতি)।

কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং হাদিসকে অনেক সময় তার ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। খেয়াল করবেন অনেক সময় ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়, সব সময় না।

হাদিস সংগ্রহ নিয়ে কিন্তু একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যথাঃ

১. সুন্নী দৃষ্টিভঙ্গি
২. শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি
৩. এবাদি দৃষ্টিভঙ্গি
৪. অমুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি



সুন্নী দৃষ্টিভঙ্গিঃ
সুন্নী বিশ্বাস মতে ছয় জন প্রসিদ্ধ হাদিস শাস্ত্র বিশারদ এবং ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রায় সকল হাদীস সংকলন করেন। তাদের সংকলনগুলো গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। এই ছয়টি গ্রন্থকে সিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌ বলা হয় যার অর্থ বিশুদ্ধ ছয়। এই গ্রন্থগুলো হল:


১.সহিহ্‌ বুখারি মুহাম্মদ আল-বুখারি (মৃ. ৮৭০) ৭২৭৫ টি হাদিস
২.সহিহ্‌ মুসলিম মুসলিম ইবনুল হিজাজ (মৃ. ৮৭৫) ৯২০০ টি
৩.সূনান আবু দাঊদ আবু দাঊদ (মৃ. ৮৮৮)
৪.সূনান আত-তিরমিযী আল-তিরমিযী (মৃ. ৮৯২)
৫.সূনান নাসাঈ আল-নাসাঈ (মৃ. ৯১৫)
৬.সূনান ইবন মাযা ইবন মাযা (মৃ. ৮৮৬)



শিয়া দৃষ্টিভঙ্গিঃ
শিয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে ছয়জন প্রসিদ্ধ হাদীস সংগ্রাহককে এতোটা মূল্যায়ন করা হয় না। শিয়া মত অনুসারে পাঁচজন প্রসিদ্ধ হাদিস সংগ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রথম চারজন সবচেয়ে প্রসিদ্ধ:

১.উসুল আল-কাফি
২.আল-ইসতিবাসার
৩.আল-তাহজিব
৪.মান লা ইয়াহ্‌দুরুহু আল-ফাকিহ
৫.নহ্‌য আল-বালাগা



ইবাদি দৃষ্টিভঙ্গিঃ
ইবাদি মত মূলত আরব রাষ্ট্র ওমানে প্রচলিত। এই মতে সূন্নীদের অনুসৃত কিছু হাদিস গ্রহণ করা হয়, আবার অনেকগুলোই গ্রহণ করা হয় না। হাদিস গ্রহণের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব মত রয়েছে। সুন্নীরা বিপুল সংখ্যক হাদিস গ্রহণ করেছে যা ইবাদিরা করেনি। তাদের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং একচেটিয়া হাদিস গ্রন্থ হচ্ছে:

আল-জামি আল-সহিহ্‌ - যার অপর নাম মুসনাদ আল-রাবি ইবন হাবিব। আবু ইয়াকুব ইউসুফ ইবন ইবরাহিম আল-ওয়ারিজলানি এই গ্রন্থ সংকলন করেছেন।



অমুসলিম দৃষ্টিভঙ্গিঃ
ইসলামের প্রায় সকল হাদিস যখন সংকলন শেষ হয় তার পরপরই পাশ্চাত্য জগতের সাথে মুসলিমদের মূল বিরোধ এবং সংযোগ শুরু হয়। একদিকে যেমন ক্রুসেডের মাধ্যমে সম্পর্ক দিনে দিনে বিরুপ আকার ধারণ করছিল অন্যদিকে আবার তেমনই একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করছিল। পাশ্চাত্যে প্রথমে কুরআনের অনুবাদ করা হয়। এর অনেক পরে কিছু চিন্তাবিদ হাদিস এবং ইসলামী আইনশাস্ত্র সহ অন্যান্য বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বর্তমান কালের কয়েকজন বিখ্যাত অমুসলিম হাদিস বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন:

হার্বার্ট বার্গ, The Development of Exegesis in Early Islam (২০০০)
ফ্রেড এম. ডোনার, Narratives of Islamic Origins (১৯৯৮)
উইলফ্রেড মেডিলাং, Succession to Muhammad (১৯৯৭)



আসলে নবীজী (সাঃ) মারা যাওয়ার পরে যখন হাদিস সংকলন শুরু হয় তখন বেশ কিছূ সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে একটি হলো, একই বিষয়ে একাধিক সাহাবীর একাধিক বক্তব্য। এটার কারন হতে পারে তাদের মনে না থাকা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ইচ্ছাপূর্বক ভূল তথ্য প্রদানের মত ঘটনা যে ঘটেনি তাও না। আর এ কারনে লোকমুখে লক্ষাধিক হাদিসের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেলেও সহীহ হাদিস বলা হয় মাত্র ১০,০০০ টি হাদিসকে। তাই বলে বাকি হাদিসগুলোকে বাতিল ও বলা হয়নি। বরং হাদিস নিয়ে হাদিসবিশঅরদেরা সবসময় ই পড়াশুনা করে এসেছেন। কোন হাদিসের দুর্বলদিক বা বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব থাকলে তাকে বাতিলও ঘোষনা করা হয়েছে।


মনে রাখতে হবে যে, হাদিস নিয়ে এই কনফিউশনের কারন নবীজী (সাঃ) এর ওফাতের পর যেহেতু অনেকেই তার বলা কথাকে প্রচার করতে থাকে কিন্তু তার বাস্তব প্রমান সবার কাছে ছিল না। তাই আসলেই নবীজী মৌন সম্মতি দিয়েছিলেন কিনা বা দিলেও ঠিক এভাবেই দিয়েছিলেন কিনা
( যেভাবে বর্ণিত হচ্ছে) তা নিয়ে সৃষ্ঠ কনফিউশন সব সময় দূর করা যায়নি। এটা সম্ভবও না। আর তাই তখন থেকেই হাদিস এর বিশুদ্ধতা নিরুপনের এই প্রথাটা ছিলো। যাতে কোন বর্ণনাকারী হাদিস বর্ণনা দিলে তা যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত করা হতো উক্ত হাদিসের বিশুদ্ধতা।

তাই এভাবে হাদিসকে নিয়ে পড়াশুনাটা নতুন কিছু না। এটা যুগে যুগে অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। আর এটা হওয়ার কারন সেই সহী ১০,০০০ হাদিস এর বাইরেও যে প্রায় লক্ষাধিক হাদিস আছে সেইগুলোর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা। একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে সময় বদলাচ্ছে। আজ হতে ৫০০ বছর আগে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে আজ তার বিস্তৃতি তো ঘটতেই পারে। কিন্তু তার মানে তো এই না যে, কোন সহী হাদিসকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। আসলে নানা দিক থেকে নানা ভাবে সংগৃহিত হওয়া হাদিসসমূহের মধ্যে সহী হাদিসসমূহকে লোকসমুক্ষে প্রকাশের নিমিত্তে যে কোন ধরনের পদক্ষেপ যে কোন সরকার বা ব্যক্তি নিতে পারেন।

তবে একটা কথা। মনে রাখতে হবে এর উদ্দেশ্য হতে হবে কোন হাদিসের সত্যিই কোন দুর্বলতা থেকে থাকলে তা বের করে মানুষকে বিভ্রান্তি হতে দূরে সরিয়ে আল্লাহ এর সন্তুষ্টি অর্জন। মনে রাখতে হবে হাদিস নিয়ে যে কমিটিই গঠন করা হোক না কেন তাকে কাজ করতে হবে কোরআন শরীফে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ এর প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী। অযথা মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি যদি কারো উদ্দেশ্য থাকে তা কোন দেশের সরকার হোক বা কোন ব্যক্তিই হোক, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।


ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ২:৪১
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×