somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের শিক্ষা আর রুচিবোধ

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগিং করি মুলত একটা ভাল সময় কাটানোর জন্যে - বিশেষ করে হাজার হাজার মাইল দুরে বসেও দেশের মানুষের সাথে আন্তরিক সময় কাটানোর সুযোগের জন্যে। ব্লগে আসার পর জামাত - রাজাকার প্রসংগে জড়িয়ে নিজের সময়গুলো ব্যয় করেছি। অবশ্যই আমার আবেগ আর বিশ্বাসের একটা জায়গায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শত্রু জামাত আর রাজাকারদের মানবতার শত্রু মনে করি। তার জন্যে আমার ব্লগিং এ জামাত প্রসংগটা বেশী আসায় আফসোশ নেই।

ব্লগিং করতে করতে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক আক্ষেপও তৈরী হয়েছে - আজ কিছু আক্ষেপের কথাই বলি।

যারা ব্লগিং করে তাদের নুন্যতম শিক্ষা আছে - কমপক্ষে ছলিমুদ্দি বা কলিমুদ্দি না। কিন্তু শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য বোধ হয় এখানে ব্যর্থ। শিক্ষা মানুষকে প্রথমত বিনয়ী করে। বিনয় আসে যখন এখন মানুষ পড়াশুনা করতে করতে জানে তার জ্ঞান কত কম। এই মহাবিশ্বের অপর রহস্যের সামান্যই জানে মানুষ। আর একটা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রী ধারন করার পর সেই বিষয়টা ছাড়া অন্য বিষয়ে তার জ্ঞান কতো কম থাকে। তখন নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবে - জ্ঞানের দৈন্যতাকে মনে করে বিনয়ী হয় - অন্যের কথাগুলো গুরুত্ব সহকারে শুনে - তার কথা থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করে।

কিন্তু কিছু কিছু মানুষের আচরনে মনে এরাই সব জানে - অন্যেরা সবাই মুর্খ। এই ধারনা কিভাবে তাদের মধ্যে আসে জানি না। তবে হতাশ হই যখন দেখি - একজন খুবই সামান্য জেনে অন্যের মতাদর্শকে নিয়ে কুৎসিত বক্তব্য দেয়।

এই বিষয়টা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছি ধর্মের বিষয়ে। বাংলা ব্লগে নাস্তিক বা ধর্ম বিদ্বেষীদের একটাই টার্গেট - ইসলাম ধর্ম। এখানে বলে রাখা জরুরী - দীর্ঘকাল ধরে নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে - সকল নাস্তিকই নাস্তিক না। নাস্তিক মুখোশের আড়ালে অনেক ধর্মবিদ্বেষী আছে। অনেকে নাস্তিকতার আড়ালে ভি্ন্ন ধর্মের উপর এক হাত নেবার মতো কৌশল নিতেও দেখা গেছে। আরো দেখলাম - বাংলাদেশী নাস্তিকদের বিশেষ টার্গেট ইসলাম - খুবই কম পড়াশুনা করে - ক্ষেত্র বিশেষে মখসুদুল মোমেনীন বা বেহেস্তের কুঞ্জি ধরনের বই পত্র পড়ে এরা মালামাল সংগ্রহ করে আর তা নিয়ে বিতর্ক করে। মজার বিষয় হলো এদের কোন স্থায়ী মতাদর্শ নেই - সুতরাং ফ্রী স্পীচের লাইসেন্স নিয়ে নিজেরই গালাগালির স্কুল খুলে বসে। দেখেশুনে মনে হয় - গালিবাজি নাস্তিকতার পূর্ব শর্ত।

এখানে বলে রাখা দরকার - আমার জীবনের একটা লক্ষ্য হলো একজন প্রকৃত নাস্তিক খুঁজে বের করা - যিনি ধর্মের প্রতি কুৎসা ছাড়া তার মতাদর্শটাকে আমাদের সামনে বুঝাতে সক্ষম হবে। যদি কখনও সেই রকমের নাস্তিক খুঁজে পাই - তাহলে হয়তো আমার বিশ্বাসটাও বদলে ফেলতে পারি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাস্তিকরা দাবী করে উনাদের পড়াশুনা অনেক বেশী - অন্যদিকে আস্তিকরা কম জেনে বেশী বিশ্বাস করে। নাস্তিকরাও একধরনের বিশ্বাসী - তা কিন্তু উনারা স্বীকার করে না। সে যাই হোক - এই শিক্ষিত মানুষগুলার রুচি বোধ নিয়ে কিছুটা বিব্রত থাকি। সামান্য মতের মিল না হলেই - আপনাকে যে কোন পশুর সাথে তুলনা করবে -আপনাকে বেক্কেল বা নির্বোধ হিসাবে প্রচার করবে।

একটা ঘটনা বলি - একজন উইকিপিডিয়া রিসার্চ করে জানালেন আরব বিশ্বে ছাগলের জন্ম হয়েছে - আর সকল একেশ্বরবাদীতার জন্মও আরবে। শুনে অন্য অনেকে বাহাবা বাহাবা করতে লাগলেন। আমি উইকিপিডিয়াতে খুঁজে পেলাম - বাংলাদেশের ছাগল উন্নয়নের জন্যে আনবিক শক্তি কমিশন একটা গবেষনা করছে - লিখলাম - বাংলাদেশে হয়তো আনবিক ছাগল তৈরী হচ্ছে। ভদ্রলোক বেশ রাগ করে আমাকে আরো পড়াশুনা করতে জ্ঞান দিলেন। কি মজার কথা উনিও উইকি থেকে তথ্য নিলেন আর আমিও উইকি থেকে তথ্য নিলাম - কিন্তু আমাকে নাকি আরো পড়তে হবে। এই হলো আমাদের জ্ঞানের নমুনা।

যা বলছিলাম - বাংলা ব্লগের কয়েকটা সাইটে যাই। একটা দরজা জানালা বন্ধ করে ব্লগিং করে। সেখানে তেমন স্বস্তি পাইনা বলে তেমনটা যাওয়া হয় না। সেখানেও ধর্ম একটা হট টপিক - নাস্তিকরা সেখানেও ধর্ম নিয়ে তামাশা করে - জ্ঞানী প্রবন্ধ লিখেন - আর অন্যরা বাহাবা দেয়। আরেকটা ব্লগে নো মডারেশন নীতির সুবাদে নাস্তিক নামধারীদের হম্বিতম্বিতে কান ঝালাপালা। কেউ ধর্মের কথা বলা মাত্রই নাস্তিকগন এসে যথারীতি তাকে ছাগল সম্প্রদায়ভুক্ত করে ফেলেন। হুমকী ধামকী দিয়ে ধর্মের বিষয়ে কথা বলাকে থামিয়ে দিলেও - নাস্তিকগন নিয়মিত ধর্মের উপর বিষোদ্গারপূর্ন লেখা কপি/পেস্ট করেন - বিপক্ষে কথা বললে হৈ চৈ করে তাকে হেনস্তা করা একটা নিয়মতিম রুটি। এই ব্লগেও দেখা যায় ধর্ম বিষয়টা বেশ ষ্পর্শ কাতর - কেউ বিপক্ষে কিছু লেখা মাত্রই তাকে ব্যান করা আর লেখা সরানো হয়। এই তিনটির কোনটিই মুলত বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের পথে সহায়ক নয়।

পরষ্পরের কথা শুনা - যুক্তি সহকারে বিতর্ক করা আর তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনাই মানুষের জ্ঞান বাড়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শিক্ষিত মানুষদের রুচি আর বিনয়ের অভাব আমাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।

আশা করছি আমরা পরষ্পরের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা করার মতো বিনয়ী হবার মতো মানসিকতার চর্চা করবো। যত দুর্বলই হোক - একজনের বিশ্বাসের কথাগুলো শুনবো। একজন যদি তার বিশ্বাস নিয়ে সুখী হয় আর অন্যের সমস্যা না করে - তাহলে উপযাজক হয়ে তাকে জ্ঞানী বানানোর হাস্যকর চেষ্টা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবো।

একটা মুক্তদেশে বসবাস করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে - তাতে নিশ্চিত করে বলতে পারি - পরষ্পরের বিশ্বাসের প্রতি সহনশীলতা ছাড়া একটা সভ্য সমাজ তৈরী সম্ভব নয়। কানাডার মতো দেশে এক পাশে মসজিদ তৈরী হয় - এরা গির্জা খালি জায়গা ব্যবহার করে তাদের নির্মান সামগ্রী রাখতে - অন্যদিকে প্রতিটা ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্ম পালন নিশ্চিত করে সরকার - একটা আদর্শ ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ হিসাবে কানাডা অনুকরনীয় হতে পারে। অন্যের বিশ্বাসের উপর নিজের বিশ্বাসকে জয়ী দেখার মানসিকতাই সমাজে বিভেদের জন্ম দেয়।

ধর্ম বিহীন সমাজ প্রতিষ্টার চিন্তায় যারা মশগুল তাদের অনুরোধ করবো সোভিয়েত ইউনিয়ন আর চীনের দিকে তাকাতে। ৭০ বছর বন্ধ রাখা চার্চগুলো আবার সচল হয়েছে। সুতরাং ধর্মকে বিসর্জন দেবার জন্যে জানবাজি রেখে গালাগালি করে শুধু পরিবেশই নষ্ট হয় - পরষ্পরের প্রতি বিভেদই বাড়ে - কোন ভাবেই সমাজের কোন কাজে আসে না।

আসুন আমরা বিনয়ী হবার চেষ্টা করি আর আমাদের আলোচনায় রুচিবোধের পরিচয় দেই।
৫২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×