somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের পরের দিন

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসার সামনে নতুন এপার্টমেন্ট উঠছে। সারাদিন ধুমধাম ইট ভাঙা ম্যাশিন চলছে। রাস্তা ধুলা, কাদা আর কাঁকরে ভরে থাকে সারাদিন। এর ভেতরেই গভীর রাতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলে, অসহনীয় পরিস্থিতি।

প্রতিদিনই দেখা হয় এদের সাথে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময়েও দেখা হয়। বাসায় ফেরার সময়ও দেখা হয়। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাদের সাথে, বিশেষত পিচ্চির কারণেই, সে যতবার দোকানে যায় ততবারই টাটা বাই বাই আবার দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ করে এবং একই ভাবে বাসা ফেরার সময়ও একই ভাবে বিদায়সম্ভাষণ জানিয়ে যায়।

ঈদ আসছে, ঈদের কেনাকাটা করবার অনীহা থাকলেও কিছু কিছু কেনাকাটা করতেই হয়। তাদের সামনে দিয়ে হাতভর্তি ব্যগ নিয়ে ঘরে ঢুকতেও লজ্জা লাগে। অবশ্য তারা এইসব সামাজিক অনিয়মকে নিয়তি মেনেই জীবন যাপন করে।

ঈদের কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই নির্মানাধীন এপার্টমেন্টের দারোয়ান হঠাৎ করেই সালাম ঠুকে দাঁড়ালো। স্যার ঈদের বকশিশ দিবেন না?

আমি বিব্রত হই, মূলত স্যার সম্বোধনে। এবং পরবর্তী বিষয়টা বকশিশ দেওয়ার পরিমাণ নিয়ে সংশয় থাকবার কারণে। মূলত কত টাকা আদতে বকশিশ হিসেবে প্রাপ্য এটাও আমি জানি না।

তাদের ঈদের কাপড় দিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই, ঈদে তাদের দেওয়ার মতো কি আছে আমার? সামান্য কয়েকটা টাকা দিতে পারি, অপর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সহায়তায় নিজের দীনতাই প্রকাশ পাবে শুধু। পরিমাণ নিয়ে একটা লজ্জা ছিলোই এরপরও কোনো মতে তার হাতে টাকা দিয়েই পালিয়ে আসি লজ্জায়। আসবার সময় মনে হলো এদের ঈদের দিন সামান্য খাওয়ালে খুব একটা খারাপ হতো না।

তবে নিজস্ব ভাবনাটা নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখি। বাসায় বললে এর প্রতিক্রিয়া কি হবে ভেবে পাই না। আমরা ঈদের দিন সদলবলে বাইরে যাই, সম্পূর্ণ আপার্টমেন্টের খাঁচায় বসে থাকে ৩জন মানুষ। ১২ ঘন্টা করে ডিউটিতে থাকা দুই দারোয়ান আর একজন বৃদ্ধ মানুষ। তিনি নিয়মিতই রোজা রেখেছেন, এবং যতদিন দেখেছি তিনি কর্তব্যরত শ্রমিকদের ইসলামী জ্ঞান বিতরণ করছেন।

তাকে কর্মরত শ্রমিকেরা নিজেদের ইসলামের অনুভুতি প্রকাশ এবং কর্তব্যাদি নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছিলো। ঈদের আগের দিনই সব শ্রমিক চলে গেছে। তারা তিন জনই এখন সেখানে থাকে।

তাকে একটা স্যান্ডো গেঞ্জী পড়ে এদিকে ওদিকে ঘুরতে দেখি। হাতে বড় একটা মেহেদীর গোল্লা এঁকেছেন তিনি। সদ্যধোয়া লুঙ্গী এবং গেঞ্জীতে তাকে দেখে আমি বন্ধুদের বাসায় যাই। আড্ডা দেই সাজানো ড্রইংরুমে। একটা ড্রইংরুম সাজাতেই এই ছেলে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা খরচ করেছে। নিজের দারিদ্রের হীনমন্যতায় ভুগে চলে আসি।

গত রাতে যখন ফিরলাম তখনও তাদের সাথে দেখা হলো, অথচ বলতে পারলাম না, আপনারা একদিন আমাদের বাসায় এসে খাবেন। ঈদের আগে আগে সমর্থ মুসলিমদের ফিতরা দেওয়ার প্রথা আছে। মূলত এমনই এক কারণে যেনো সবার উনুনেই ভাতের গন্ধ পাওয়া যায়। সবাই যেনো অন্তত বছরকার এই দিনটাতে ভালোমন্দ কিছু খেতে পারে। কিছু উৎসব তাদের জন্যও থাকুক, ইসলামের এই গোত্রীয় উদযাপনের প্রক্রিয়াটি সামাজিক উৎসবে সবার অংশগ্রহন নিশ্চিত করে।

ঠান্ডা লেগে কাহিল অবস্থা, তার উপরে গতরাতে অনেকক্ষণ জেগে ছিলাম, দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করবার পরে আবারও ঘুমে মাতাল। বাসায় কোনো অতিথি আসছে না টবে ভালোই রান্না হচ্ছে। আমি কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যায়। এমন কি সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হলেও ঘরে অতিথির দেখা নেই।

আম্মাকে বললাম, মা কেউ আসবে না বাসায়?
না।
তাহলে এত রান্না করলা?
ঐ নীচের দারোয়ানরা একদিন খাইতে চাইলো পোলাও। ওদের জন্যই রান্না করলাম। দুপুরে খাইছে ওরা।

আমি নিজস্ব লজ্জা থেকে মুক্তি পেলাম, অন্তত মুখ ফুটে তারা বলেছে বলেই ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও এমনটা হওয়া উচিত ছিলো না। গৃহস্বামী হিসেবে আমাদেরই তাদের বলবার কথা ছিলো। তবে অনুরোধ যে পক্ষ থেকেই আসুক না কেনো আমার গোপন ইচ্ছাটা পুরণ হয়েছে। এটাই বোধ হয় এবারের ঈদের আনন্দ আমাদের জন্য যারা মফস্বলে না গিয়ে ঢাকার অনাত্মীয় পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×