somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভর দুপুরের কাব্য

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগেরটুকু রাত্রি শেষের কাব্য

"মা কি করো?"-রিনরিনে কণ্ঠে বাবুটা জিজ্ঞেস করলো।
"চিঠি লেখি "- জবাব দিলাম।
"কার জন্যে মা? আমার জন্যে?"
এই প্রশ্নে একটু দমে গেলাম, বাবুটা মনে মনে আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে তার জন্যে লিখছি কিনা জানতে। মিথ্যাও বলি কিভাবে? আমার শরীরের একটা অংশ, ও তো সবার আগে জানবে আমি মিথ্যা বলছি। থাক, সত্যি বলে দেই। "না রে মা, তোমার বাবার জন্যে লিখছি, তুমি বড়ো হলে তোমার জন্যেও লিখবো।"
"আমি তো মা প্রতিদিন বড় হচ্ছি, কবে লিখবে?"
"আচ্ছা, ঠিক আছে, আজকেই লেখবো। এখন চুপচাপ ঘুমাও।"
গ্রীষ্মের দুপুরের ভ্যাপসা গরম পড়েছে। লেখার মধ্যিপথে বাধা পড়ায় কি লেখবো তাও ভুলে গিয়েছি। খাতাটা রেখে জানালার ধারে এসে বসলাম। ফোনে মানুষটার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্তু ওর বসটা ফোন করলেই কথা শুনিয়ে দেবে কিছু, বেচারাও বেতাল অবস্থায় পড়ে যাবে। থাক দরকার নেই। বাবুটাকেও ঘুমাতে বলেছি, এখন জাগাই কিভাবে? খুব একা লাগছে...

শহরের এই শেষ মাথাটা একটু নির্জন, গাছের ছায়া আছে, কিছু পাখির ডাক শোনা যায়। ঢাকা শহরে পাখির ডাক বলতে তো কাকের চেঁচামেচি, এখানে কাকের চাইতে অন্য পাখির ডাক বেশি শোনা যায়। আমি এম্নিতে এসব ডাক শুনে বুঝি না, ও মাঝে মাঝে ডাক শুনে বলতে পারে কোকিল নাকি বুলবুলি...গ্রামের ছেলে তো। ছোট্টবেলায় নাকি কোকিল পুষেছেও। একটা কথা বলা কোকিলের খুব শখ আমার, সারাদিন বাসায় একা থাকি, কথা বলার মানুষ পাই না। অফিস থেকে ফিরে ও এতো টায়ারড থাকে...তার ওপর কাল রাতে বেচারার ঘুম হয়নি। দুপুরের ঘুমটা বেচারা এতো পছন্দ করে অথচ বন্ধের দিন বলতে শুধু শুক্রবার...সেদিন পুরোটা দিন ঘুমিয়ে পার করে দিবে। এতো ঘুমপাগল মানুষ খুব কম দেখেছি জীবনে...আমি দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করলে পুরো এলাকাবাসী উঠলেও ও উঠবে কিনা সন্দেহ। দুঃস্বপ্নের ভয়ে এখন দুপুরে ঘুমানো ছেড়ে দিয়েছি, রাতে তাও পাশে কেউ থাকে, ভয় পেলে ভরসা থাকে। আর ওকে জাগানোর অপরাধবোধটাও একটু কাজ করছে...তাই আমিও ঘুমাচ্ছি না। চাকরীটা ছেড়ে দিতে পারলে ভালো হতো-এই কথা অনেকবার বলেছে ও, কিন্তু এই দুর্মূল্যের বাজারে চাকরী দিবে কে আরেকটা? কোনোমতে এইবার যদি বি.এ. পাশটা করতে পারি, একটা ছোট্ট চাকরী জোটানো যাবে, তখন আর এতো টানাটানি থাকবে না।

কি সব দিন ছিল...প্রেমের শুরুর দিকে মামার ভয়ে বেচারা আমার দিকে ঠিক মতো চোখ তুলে তাকাতেও পারতো না...আমিও সুযোগ ছাড়তাম না। প্রতিবার বেচারাকে ভড়কে দিতাম। একবার এমন হয়েছিল, রাতে বেলা কারেন্ট নেই...ভাঙ্গা চাঁদের আধো আধো আলোয় সবকিছু অন্যরকম। আমি আর পিচ্চি ভাই-বোনগুলো হাওয়া খেতে বাড়ির উঠোনে এসে হাঁটছি। আমার সাথে দেখা হওয়ার ভয়ে মনে হয় ও বাড়ি থেকে বেরই হয়নি। আমি ঠোঁট গোল করে পিচ্চিগুলোকে শিস বাজানো শেখাচ্ছি। এমন সময় ওর মামা হোন্ডা নিয়ে বাসায় ফিরলো, আমি পেয়ারা গাছগুলোর আড়ালে চলে গেলাম। গেট খুলে দিতে বাড়ি থেকে বের হলো ও। এমন সময় আমি আবার শিস দিতে লাগলাম। আমার শিস শুনে ওর মামা হেড়ে গলায় ধমকে উঠলো,"কে শিস বাজায় রে?" বেচারা মনে করলো মামা ওকেই সন্দেহ করছে, ভয়ে ভয়ে বললো,"আমি না।" মামার সাথে সাথে প্রশ্ন,"আমিনা কে?" আমরা তো ততক্ষনে হেসে গড়াগড়ি। ও বেচারা কিছু না বলে চুপচাপ গেট খুলে দিলো। কাব্যময় প্রেমপত্রগুলো যে তরুণ-মনের আবেগে লিখে ভীষণ সাহস করে ও আমার হাতে তুলে দিতো, সে-ই যে মামার সামনে এতো গো-বেচারা দেখে ভীষণ মজা লাগতো।


অনেকদিন পর মফস্বলের সেই ছোট্ট বাড়িটার কথা মনে পড়লো...শৈশব-কৈশোর আর দুষ্ট তারুণ্যের এক ঝাঁপি স্মৃতি যেন ভেসে আসতে লাগলো। সেই যে ঘর ছেড়ে বের হলাম দুজন...আর ফেরা হলো না। হয়তো অন্যরকম একটা জীবন হতো যদি সেই বিকালে বের না হতাম দুজন...ও হয়তো আরো অনেক পড়া-লেখা করতে পারতো...তাহলে হয়তো এরকম কেরানীর চাকরী করা লাগতো না। আমিও হয়তো এভাবে বাবা-মা থেকে দূরে সরে যেতাম না...আমার বাবুটা হয়তো মফস্বলের সেই ছোট্ট বাড়িটার উঠোনে ছুটে বেড়াতো...ঠিক যেভাবে আমি ছুটেছিলাম, আর মরা গাছের শিকড়ে উলটে পড়ে পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে কেঁদেছিলাম...মা চাচীরা সবাই পাগল হয়ে গিয়েছিল ঘরের সবচাইতে আদরের মেয়েটার কান্না থামাতে।
আজ আমি কতোই না কাঁদি...দুঃস্বপ্নে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠি...আমার পৃথিবীর আলো না দেখেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটার জন্যে কাঁদি...কেউ ছুটে এসে আর কান্না থামায় না...এই যে এখন একা বসে আমি আমার শরীরের ভিতরের শরীরটার সাথে কথা বলছি, স্মৃতিকাতরতায় কাঁদছি...এখনো পাশে কেউ নেই। মমতার বাঁধনগুলো যে আমিই ছিঁড়ে এসেছি।...

বিকেলের তেছড়া রোদটা যখন ভেজা চোখে এসে পড়লো...তখনই মনে হলো, ভর দুপুরের কাব্যগুলো কতোই না কাঁদাতে পারে..


{ডেইলি সোপ লেখা শুরু কইরাই দিলাম;)}
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×