somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেনার বিবি খালিদা- মাদকবিরোধী আগ্রাসন

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্থনৈতিক চক্র বিষয়টাই গোলমেলে, কোথায় এর শেকড় ছড়িয়ে থাকে, কোথায় এটা শেকড় ছড়িয়ে রাখে বুঝা কঠিন, তবে এই চক্রের কোথাও একটা ঝামেলা হলেই অন্যসবগুলো ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়তে থাকে, মানুষের জীবন অর্থনৈতিক চক্রের গ্যাঁড়াকলে বাধা পড়ে থাকে।

খালেদা নামের ১০ বছরের মেয়েটার জীবন অতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হিরোইনের বাজারের সাথে। তবে খালেদাই একমাত্র শিশু নয় যার জীবন বিপন্ন হয়ে যায় অবৈধ ড্রাগের ব্যবসা বিস্তার এবং ড্রাগের বিস্তার বিনাশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে।

পপি গাছ বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চাষাবাদ হয়, হয় সামরিক শাসনে মৃতপ্রায় মায়ানমারে, হয় আফগানিস্তানে, এমন কি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে না হলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পপি চাষ হয়। তবে বিশ্বের পপি চাষে শীর্ষস্থানীয় দেশ আফগানিস্তান। এখানে প্রায় ২ লক্ষ একর জমিতে পপি চাষ হয়। এবং এই এলাকা থেকেই বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশী হিরোইন উৎপাদন ও বন্টন হয়।

বিশ্বের মাদকচক্রের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, উৎপাদক এবং বিপননের অন্যতম কেন্দ্র আফগানিস্তানের পাহাড়ী অঞ্চল। এখানেই খালেদার বাবা পারিবারিক ভাবে পপি চাষ করে। তাদের উপার্জনের একমাত্র উপায় পপি চাষ। একর প্রতি পপি চাষ করে তার বাবা পায় ৮০০ ডলার , অন্য যেকোনো শষ্য উৎপাদন করলে যেখানে বাৎসরিক পাওয়া যায় ২০০ ডলার একর প্রতি সেখানে লাভের অঙ্কে পপি চাষ সবচেয়ে সহজ বিকল্প।

আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী তালেবান শাসকদের উৎখাত করতে , বিশ্বব্যপী সন্ত্রাস নির্মুলের যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে বোমা ফেলায়। সেখানে লাদেন ঘাপটি মেরে আছে, তাকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, বিশ্বের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক মত বদলের লড়াইয়ে কোনোভাবেই যুক্ত নয় খালেদা কিংবা তার পরিবার। তবে বিশ্বব্যাপী এই অস্থিরতার আক্রান্ত হচ্ছে তারাই।

প্রাক্তন শাসক তালেবান গোষ্ঠির অস্ত্রের যোগান আসে পপি এবং মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত মানুষের দেওয়া অর্থে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে জয়ী হতে হলে অবশ্যই আফগানিস্তান থেকে মাদক ব্যবসাকে নির্মূল করতে হবে। তবে মার্কিন সামরিক দপ্তরের হিসাবে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী বস্তুত বিশাল আফগানিস্তানের ৩০ শতাংশ জায়গার কতৃত্বে রয়েছে, বাকি ১০ শতাংশ রয়েছে তালেবান বাহিনীর কব্জায়, কিন্তু অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ এলাকার কতৃত্ব মূলত সেখানের উপজাতীয় নেতাদের হাতে। তারাই মূলত আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রন করে। সেখানে আধুনিক যুদ্ধশিক্ষায় শিক্ষিত যৌথ বাহিনীর কোনো কতৃত্ব নেই, গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষন পাওয়া ইসলামপন্থী তালেবানদের কোনো কতৃত্ব নেই সেখানে, উপজাতীয় নেতারাই সেখানে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাদের আওতাধীন এলাকায় পপি চাষ হচ্ছে। তারা নির্বিবাদে পপি চাষের অনুমতি দিচ্ছে, কাবুল এবং কান্দাহারে খোলা ময়দানে অবৈধ অস্ত্র বিক্রী হচ্ছে। সেটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্র বাজার, মিসাইল থেকে শুরু করে রাইফেল সবই এখানে পাওয়া যায়, এবং সস্তায় পাওয়া যায়।

অস্ত্র ব্যবসার অর্থ, পপি চাষলব্ধ অর্থ খালেদার জীবন চাকাকে নিয়ন্ত্রন করে, তার ভবিষ্যত ভাবনাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে। দেনার দায়ে খালেদাকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে তার চেয়ে ৪০ বছরের বড় এক ব্যক্তিকে বিয়ে করতে হয়।

খালেদার বাবা ২০০০ ডলার ধার করেছিল এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আবাদ শেষ হলে তাকে ২৪ কেজি অপিয়াম দেবে। একই সময়ে পপি চাষ এবং মাদক ব্যবসা নির্মূল করতে চাওয়া যৌথ বাহিনীর সেনারা খালেদার বাবার পপি ক্ষেত জ্বালিয়ে দিলো। প্রতিশ্রুত অপিয়াম সরবরাহ করতে না পারায় বিকল্প হিসেবে খালেদাকে পণ হিসেবে দিতে হলো সেই মাদক ব্যবসায়ীকে।

এমন ঘটনা আফগানিস্তানে এখন মোটেও বিরল নয়, বরং নিয়মিতই দেনার দায়ে কন্যাকে পরপুরুষকে গছিয়ে দেওয়ার অপমান সহ্য করতে হয় পশতুন পুরুষদের। পশতুন পরিবার কনে পন গ্রহন করে, কিন্তু সেই কন্যাকে যখন দেনার দায়ে সমর্পন করতে হয় সেটা পশতুন পৌরুষের হন্তারক।

বিশ্বের অব্যাহত মাদকবিরোধী অভিযান, যৌথবাহিনীর জয়ী হওবার বাসনা এবং আফগানিস্তানে নিয়মিত চলতে থাকে মাদকের চাষাবাদ নতুন ধরণের একটা মনস্তাত্বিক এবং সামাজিক সংকট তৈরি করে আফগানিস্তানে।

মাদকবিরোধী অভিযান এবং অব্যহত দারিদ্র থেকে মুক্তি এবং একটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের লোভে যখন ২ মাস বয়সের শিশু কন্যাকে জিম্মি করে ধার করছে পপি চাষী তখন বিষয়টার মর্মান্তিকতা উপলব্ধি করা যায়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা অবর্ণনীয়, যখন পিতা তার কন্যাদের সাম্ভাব্য ঋণ এবং ঋণমুক্তির সনদ হিসেবে দেখতে থাকেন, যখন পিতৃতান্ত্রিক একটা সমাজ কাঠামোতে মেয়েদের জিম্মি করে ঋণের আদান প্রদান শুরু হয় তখন সেখানে প্রতিটা মেয়ে শিশু জন্ম নেয় ঋণপত্রের খোলা দলিল হিসেবে।

অসংখ্য শিশুই বাবাদের ঋণের চাপে সেবাদাসীতে পরিণত হচ্ছে। আধুনিক দাসপ্রথার বিলোপ ঘটবে না আফগানিস্তানে যেখানে মূলত ইসলামী জীবনযাপনের প্রথা প্রচলিত, সেখানে সুদ বিনিময় নিষিদ্ধ, সুদখোর সামাজিক ভাবে নিগৃহীত হয় তাই দেনার শর্তে থাকে প্রতিশ্রুত অপিয়াম সরবরাহের নিশ্চয়তা কিংবা আপন সন্তানকে বন্দক দেওয়ার দায়বদ্ধতা।

সেখানে সদ্য কিশোরী হ্য়ে উঠা কিংবা এখন শৈশবে আচ্ছন্ন অসংখ্য মেয়ে শিশুই পিতার ঋণের বোঝা লাঘব করতে অন্য কোথাও দেনার বিবি হয়ে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×